দূষণে নাজুক হয়ে আসছে মানুষের জীবন

আবুল কালাম
Printed Edition

জলবায়ু পরিবর্তন ও দূষণে নাজুক হয়ে আসছে ঢাকাসহ বিভিন্ন নগরীর মানুষের স্বাভাবিক জীবন। পরিবেশের ভারসাম্যহীনতায় মাটি, বায়ু, পানি ও শব্দ দূষণ মানুষের জীবনকে কঠিনভাবে চেপে ধরছে। এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ২৫ বছরে দেশে দূষণের মাত্রা ৬৬ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। বায়ু পানি ও মাটি দূষণে হৃদরোগ, ক্যান্সারের মতো বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। শব্দ দূষণে শ্রবণশক্তি হ্রাস, মানসিক চাপ এবং হৃদরোগের ঝুঁকি, উদ্বেগ এবং হতাশা বাড়ছে।

হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউটের মতে, বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে বছরে এক লাখের বেশি মানুষ মারা যায়। এর মধ্যে শুধু ঢাকাতেই প্রাণ হারায় ১০ হাজার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যৌথ গবেষণায় বলা হয়েছে, বিশ্বের বায়ুদূষণ কবলিত শীর্ষ শহরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে ঢাকা। ফলে স্বাস্থ্যগত মারাত্মক হুমকিতে পড়া স্বাভাবিক জনজীবন জলবায়ু পরিবর্তন ও দূষণে সীমিত হয়ে আসছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের এক গবেষণায় বিশ্বের অনেক শহরের তুলনায় ঢাকার ঘরের বায়ুমান অনেক বেশি উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

অপর দিকে ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএইচও) মতে, বায়ুদূষণের কারণে প্রধানত স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ থেকে মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পায়। দূষণের প্রভাবে অধূমপায়ীরাও নিয়মিত ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। নারী ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাসিন্দাদের মধ্যে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যাচ্ছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৯৯৮ সাল থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ২৫ বছরে দেশে দূষণের মাত্রা ৬৬ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে।

দূষণের ভয়াবহতা তুলে ধরে গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, ‘এক দিকে যেমন বিশ্বজুড়ে ধূমপানের প্রবণতা কমছে, অপর দিকে যারা কখনো ধূমপান করেননি, তাদের মধ্যে ক্যানসারের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। বিশ্বজুড়ে ক্যানসারসংক্রান্ত মৃত্যুর শীর্ষ কারণের পাঁচ নম্বরে আছে অধূমপায়ীদের ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়া, যার মধ্যে নারী ও এশীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি’।

এ বিষয়ে পরিবেশ বিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুর রব নয়া দিগন্তকে বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে সর্বাধিক ভুক্তভোগীদের অন্যতম বাংলাদেশ। অপরিকল্পিত নগরায়নে সবুজে ঘেরা শহর এখন অনেকটা বিবর্ণ। সবুজায়নের পরিবর্তে নগরীর বুক চিড়ে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় দালানকোঠা। ইতোমধ্যে নির্ধারিত প্রয়োজনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সবুজায়ন ধ্বংস হয়েছে। বছরে বছরে আশঙ্কাজনকভাবে কমছে ফাঁকা জায়গা। উত্তাপ সহনীয়তা অতিক্রম করে তীব্র তাপপ্রবাহের ঝুঁকিতে পড়েছে ৯০ শতাংশ এলাকা। গাছপালা উজাড়ে অনেকটা মৃত্যুপুরীতে পরিণত হচ্ছে দুই কোটির অধিক মানুষের এই নগরী।

অন্য দিকে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব জানান, কয়েক বছর ধরে গ্রামের চেয়ে ঢাকা শহরে সাড়ে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করছে। অনুভব কিন্তু তারচেয়েও বেশি। পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে গরম অনুভূত হয় বেশি।

তিনি বলেন, গত ২৮ বছরে রাজধানী ঢাকার সবুজ এলাকা কমে মাত্র ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। জলাভূমি নেমে এসেছে মাত্র ২ দশমিক ৯ শতাংশে। আর গত দুই দশকে বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত ধূসর এলাকা ও কংক্রিট, যা নগর এলাকায় তাপমাত্রা মারাত্মক হারে বাড়িয়ে দিচ্ছে।