প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য ঢাকায় হচ্ছে আশার আলো স্কুল

৩০ শতাংশ শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে শিক্ষার সুবিধা

হামিদ সরকার
Printed Edition

দেশে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা ও সেবার সুযোগের অভাব এখনো প্রকট। সরকারি হিসাব মতে, দেশে বর্তমানে পাঁচ লাখ ৪৪ হাজার ৮৩৩ জন প্রতিবন্ধী শিশু রয়েছে। এই শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার ঢাকায় আশার আলো নামে একটি বিশেষ স্কুল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নেয়া এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে সমাজকল্যাণ অধিদফতর ও বাংলাদেশ নৌবাহিনী। ৪৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ের এই স্কুলটি খিলক্ষেতে স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। থাকছে ৩০ শতাংশ শিক্ষাথীর বিনামূল্যে শিক্ষার সুবিধা। সহসা অনুমোদন পেলে আগামী ২০২৭ সালের জুনে সমাপ্ত হতে পারে বলে প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পণা গ্রহন করেছে। প্রতিবন্ধী সুরক্ষা আইন ২০১৩ জাতিসঙ্ঘের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সনদ অনুসারে প্রণীত হয়েছে। আন্তর্জাতিক ও জাতীয় দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকার প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য বিশেষ শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কিত কিছু প্রকল্প এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করলেও এর সংখ্যা এবং পরিধি বিবেচনায় দেশে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা ও সেবার সুযোগের অভাব এখনো প্রকট। সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনী সমাজসেবামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অটিজম এবং বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের চাহিদা পূরণে আশার আলো স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে।

মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ঢাকায় একটি আধুনিক প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। যেখানে নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার এবং নন-এনডিডি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ শিক্ষা ও থেরাপিউটিক সেবা প্রদান করা হবে। নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার (এনডিডি) ও নন-এনডিডি ৩০০ জন প্রতিবন্ধী শিশুর জন্য (৩০ শতাংশ ছাত্রছাত্রীর বিনামূল্যে শিক্ষাসুবিধাসহ) অত্যাধুনিক সুবিধা সংবলিত স্কুলটি ছয়তলা ভিতে আপাতত চারতলা পর্যন্ত করা হবে। এটি আধুনিক সুযোগ সুবিধা (ফিজিওথেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি, সাইকোথেরাপি, হাইড্রোথেরাপি, অভিভাবক কাউন্সেলিং, সেন্সরি পার্ক, খেলাধুলার মাঠ ইত্যাদি) সংবলিত একটি মডেল প্রতিবন্ধীদের সেবা প্রতিষ্ঠান হবে। পাঁচজন পরিত্যক্ত অনাথ প্রতিবন্ধী শিশুর পরিপূর্ণ লালন-পালনের জন্য আবাসন সুবিধা থাকবে।

এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম বেশি প্রতিবন্ধিতা হার সম্পন্ন দেশ। বাংলাদেশে এক কোটি ১৪ লাখ প্রতিবন্ধী লোক রয়েছে বলে অনুমান করা হয় যা মোট জনসংখ্যার ৬.৯৪ শতাংশ। ন্যাশনাল সার্ভে অন পারসন উইথ ডিজেবিলিটিজ (এনএসপিডি) ২০২১ অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যার ২.৮০ শতাংশ মানুষ প্রতিবন্ধী।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করা জাতীয় ফোরামগুলোর অনুমোদনকৃত সংজ্ঞা অনুযায়ী ‘প্রতিবন্ধী হতে পারে জন্মের সময় কিংবা জীবনের যেকোনো সময়’। সমাজসেবা অধিদফতর শনাক্তকরণ জরিপ-২০১৩ এর মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের পূর্ণাঙ্গ জরিপ সম্পন্ন করা হয়েছে, যা বিশ্বের গুটি কয়েক দেশে সম্পন্ন হয়েছে। ২০ জুন, ২০২৩ পর্যন্ত বাংলাদেশে ৩০ লাখ ৩৪ হাজার ৫৩৯ জন প্রতিবন্ধী শনাক্ত হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রতিবন্ধীদের মধ্যে যারা শিশু তাদের অবস্থা আরো ঝুঁকিপূর্ণ। দেশে বর্তমানে পাঁচ লাখ ৪৪ হাজার ৮৩৩ জন প্রতিবন্ধী শিশু রয়েছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩ ও শিশু আইন-২০১৩ অনুযায়ী প্রত্যেকটি প্রতিবন্ধী শিশুই ঝুঁকিপূর্ণ শিশু। এ শিশুদের ঝুঁকির মাত্রা কমাতে প্রয়োজন উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদান। বিশেষ শিশুদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষা সুবিধা চালু এবং টেকসই ও সমন্বিত উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য প্রতিবন্ধীদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রত্যাশী সংস্থা ‘আশার আলো ঢাকা প্রতিবন্ধী স্কুল স্থাপনের উদ্যোগ হাতে নিয়েছে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সমাজের মূল স্রোতধারা থেকে পিছিয়ে পড়া বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের মূলধারায় একীভূত করতে বাংলাদেশ নৌবাহিনী এর পৃষ্ঠপোষকতায় ২০০৩ সালে ‘বিশেষ শিক্ষার অধিকার’ এ মূলমন্ত্র নিয়ে চট্টগ্রামে ‘আশার আলো’ স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বিশেষ শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদানে এ প্রতিষ্ঠান সর্বস্তরে সুনাম অর্জন করে। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে খুলনার খালিশপুরে ‘আশার আলো’ স্কুলের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস ‘আশার আলো’ খুলনা শাখা প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠান দু’টিতে প্রায় ৪০০ জন বিশেষ শিশু শিক্ষা, সেবা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা শহরের ক্রমবর্ধমান প্রতিবন্ধী শিশুদের বিশেষ শিক্ষা ও সেবার সুযোগ সৃষ্টিতে অবদান রাখার লক্ষ্যে জোয়ারসাহারা, খিলক্ষেত এলাকায় আশার আলোর তৃতীয় ক্যাম্পাস ‘আশার আলো ঢাকা’ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।