রিশাদের ৬ উইকেটে আত্মবিশ্বাসী জয়

জসিম উদ্দিন রানা
Printed Edition

ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই বাংলাদেশের সময়টা ভালো যাচ্ছে না। ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি খারাপ। সর্বশেষ ১২ ম্যাচের ১১টিতে হার। হারতে হয়েছে সর্বশেষ চারটি সিরিজে। আফগানিস্তানের কাছে বাজেভাবে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার লজ্জামোচন আর বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার জন্য র‌্যাংকিংয়ে উন্নতি- এই দুই উদ্দেশ্য মাথায় নিয়ে উইন্ডিজদের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। মাস ছয়েক আগেই আইসিসি ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ে ছয় থেকে ক্রমান্বয়ে দশে নেমে গেছে মিরাজের দল। র‌্যাঙ্কিংয়ে একধাপ এগোতে হলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩-০ তে হারাতে হবে।

মিরপুরের ঘনকালো উইকেটে ভুগতে হবে ব্যাটারদের, সেটা জানাই ছিল। তবে যতটা ভোগার কথা তার থেকে একটু বেশিই ভুগল বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো পুঁজি পেল না স্বাগতিকরা। টস হেরে আগে ব্যাট করে ৪৯.৪ ওভারে ২০৭ রান করেছে বাংলাদেশ। ভক্তরা এবং বোদ্ধারা ভেবেই নিয়েছিল আরো একটি হারের মুখে টাইগাররা। কিন্তু সব জল্পনা-কল্পনা-হতাশার অবসান ঘটিয়ে রিশাদ ৯ ওভারে ৩৫ রান খরচায় ছয় উইকেট নিয়ে ধস নামান ক্যারিবীয় শিবিরে। ৩৯ ওভারে তারা গুটিয়ে যায় ১৩৩ রানে। আর ৭৪ রানে আত্মবিশ^াসী জয় পায় বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের শুরুটাই ভালো হয়নি। স্বাগতিকদের হয়ে ইনিংস শুরু করতে নেমে হতাশ করেন সাইফ হাসান ও সৌম্য সরকার। দলীয় ৮ রানেই দু’জন বিদায় নেন। সাইফ ৩ ও সৌম্য করেন ৪ রান। নাজমুল হোসেন শান্ত, হৃদয়, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনরা ক্রিজে টিকে গেলেও বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলতে ব্যর্থ হন। তাই ২০০ রানের সামান্য বেশি করেই থেমেছে বাংলাদেশের ইনিংস।

হৃদয়ের অবদান সর্বোচ্চ ৫১ রান। ৯০ বল খেলেন এই ব্যাটার। তার এই ইনিংসটাই যেন স্বাগতিকদের ব্যাটিংয়ের প্রতিচ্ছবি। মিডলঅর্ডারের ব্যর্থতা থেকে বের হয়ে আসতে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনকে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে দলে ডাকেন নির্বাচকরা। সিরিজের প্রথম ম্যাচেই অভিষেক হয় এই উইকেটরক্ষক ব্যাটারের।

অভিষেকে সতীর্থদের চেয়ে আলাদা কিছু করতে পারেননি অঙ্কন। রস্টন চেজের শিকার হওয়ার আগে ৭৬ বলে এনে দেন ৪৬ রান। উইকেটের বিবেচনায় অঙ্কনের এই ইনিংসটাকে খারাপ বলার সুযোগ নেই। আফগানিস্তান সিরিজে ব্যাট হাতে চরম বাজে সময় পার করেছেন শান্ত। এরপরও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে টিকে যান। এদিন ৬৩ বলে ৩২ রান করেন সাবেক অধিনায়ক। তৃতীয় উইকেটে হৃদয়কে সাথে নিয়ে ৭১ রানের জুটি গড়েন শান্ত।

২৭ বলে ১৭ রান করেন মিরাজ। ব্যাট হাতে ব্যতিক্রম ছিলেন কেবল রিশাদ হোসেন। জেডন সিলসের ইয়র্কারে বোল্ড হওয়ার আগে ১৩ বলে ২ ছয় ও ১ চারে ২৬ রান করেন তিনি। রিশাদ ছোট ঝড়ো ইনিংস খেলতে না পারলে দুইশ’র নিচেই থেমে থাকতে হতো বাংলাদেশকে। তানভীরের অপরাজিত ৯ রানও কম নয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে বল হাতে ৩ উইকেট নেন সিলস। বাকিদের কিপ্টে বোলিংয়ের দিনে ৭ ওভারে ৪৮ রান দেন এই পেসার। সমান দু’টি করে উইকেট নেন গ্রিভস ও চেজ।

৩০০ বলের ইনিংসে বাংলাদেশ ২৯৮ বল খেলতে পেরেছে। বাংলাদেশ ১৮৩টি ডট বল খেলেছে। রান করেছে মাত্র ১১৫ বল থেকে। এর মধ্যে বাউন্ডারি এসেছে ১৬টি। ছক্কা তিনটি এসেছে শেষ দিকে লোয়ারের ব্যাটার রিশাদ হোসেন ও তানভীরের ব্যাট থেকে। বাংলাদেশ ইনিংসের ৬১.৪১ শতাংশ ডট বল খেলেছে।

২০৮ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। বেন্ডন কিং ও অ্যালিক আথানাজে মিলে জুটিতে তুলেছিলেন ৫১ রান। সেটিও ভালো রান রেটেই। এই জুটি ভাঙেন রিশাদ। এর পর কিয়েসি কার্টিকে নিয়ে দলকে আরো কিছুক্ষণ টানেন কিং। নিজের পর পর দুই বলে প্রথম কার্টি ও পরে ৪৪ রান করা কিংকে ফেরান রিশাদ। ওই থেকে ম্যাচে ফেরা থশুরু বাংলাদেশের। উইন্ডিজের তখন ৮২ রান। এর পর শেরফান রাদারফোর্ড ও রোস্টন চেজকে ফিরিয়ে রিশাদ তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম ফাইফার। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের আগের ১১ ম্যাচে রিশাদ হোসেনের সব মিলিয়ে উইকেট ছিল ১০। জেডেন সিলসকে (৩) ফিরিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস গুঁড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি নিজের ষষ্ঠ শিকার করেন এই লেগ স্পিনার। ৩৯তম ওভারের শেষ বলটি গুগলি করেন রিশাদ। বুঝতেই পারেননি সিলস। বল তার ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে যায় স্লিপে। সেখানে বল মুঠোয় জমাতে ভুল করেননি অধিনায়ক মিরাজ। সাথে সাথে ৭৪ রানের জয়ের উল্লাসে মাতে বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে এই প্রথম ৬ উইকেট নিতে পারলেন বাংলাদেশের কোনো স্পিনার। এই সংস্করণে আগের সেরা ছিল তাইজুল ইসলামের। ২০২২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই ২৮ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন বাঁহাতি স্পিনার।

এ ছাড়া মোস্তাফিজ দু’টি, তানভীর ও মিরাজ একটি করে উইকেট নেন। ক্যারিবীয়দের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৪ রান করেন ব্রান্ডন কিং।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

বাংলাদেশ : ৪৯.৪ ওভারে ২০৭ (সাইফ ৩, সৌম্য ৪, শান্ত ৩২, হৃদয় ৫১, মাহিদুল ৪৬, মিরাজ ১৭, সোহান ৯, রিশাদ ২৬, তানভির ৯*, তাসকিন ০, মোস্তাফিজ ১; সিলস ৩/৪৮, শেফার্ড ১/৩১, পিয়ের ১/২৯, চেইস ২/৩০, গ্রেভস ২/৩২)।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ৩৯ ওভারে ১৩৩ (কিং ৪৪, আথানেজ ২৭, কার্টি ৯, হোপ ১৫, রাদারফোর্ড ০, চেইস ৬, মোটি ৩, গ্রেভস ১২, শেফার্ড ১, পিয়ের ৭, সিলস ৩*; তানভির ১/৪৬, মোস্তাফিজ ২/১৬, মিরাজ ১/১৬, রিশাদ ৬/৩৫)।

ফল : বাংলাদেশ ৭৪ রানে জয়ী।

ম্যাচ সেরা : রিশাদ হোসেন।