এক লাখ শিক্ষকের শূন্য পদে ৪১ হাজার প্রার্থীকে সুপারিশ

শাহেদ মতিউর রহমান
Printed Edition
  • শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীদের অনাগ্রহ
  • সঙ্কট কাটছে না বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে

শিক্ষকতা পেশায় আসছেন না মেধাবীরা। এমনকি কম মেধার কেউও এখন আর এই পেশার প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন না। ফলে বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানেও শিক্ষকদের সঙ্কট কাটছে না। দেশের বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল-কলেজ ও মাদরাসায় এক লাখের বেশি শূন্য পদের বিপরীতে গতকাল মঙ্গলবার অর্ধেকের কম; মাত্র ৪১ হাজার প্রার্থীকে চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে। সূত্র মতে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার উপস্থিতিতে গতকাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশ পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগে ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তির সুপারিশের ফল প্রকাশ করা হয়। পুলিশ ভেরিফিকেশন চলমান অবস্থায় অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে তাদের। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীর অনুকূলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়োগপত্র দেবে। সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীদের নিয়োগপত্র প্রাপ্তির ৭ কার্যদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে হবে। গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরারের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) চেয়ারম্যান মো: আমিনুল ইসলাম এ ফল তুলে দেন।

এনটিআরসিএ সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানরা তাদের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে টেলিটকের লিংকে প্রবেশ করে প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশপত্র ডাউনলোড করতে পারবেন। এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে প্রেরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এবারের ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় মোট ১৮ লাখ ৬৫ হাজার ৭১৯ জন প্রার্থী আবেদন করেছিলেন, তাদের মধ্যে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ১৩ লাখ ৪০ হাজার ৮৩৩ জন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৯৮১ জন। লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৬৮০ জন, তাদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৮৩ হাজার ৮৬৫ জন। মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ৮১ হাজার ২০৯ জন এবং উত্তীর্ণ হয়েছেন ৬০ হাজার ৬৩৪ জন।

শিক্ষা উপদেষ্টা সিআর আবরার জানিয়েছেন, ষষ্ঠ নিয়োগ সুপারিশ কার্যক্রমের আওতায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ১ লাখ ৮২২টি শূন্য পদের চাহিদার বিপরীতে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে প্রায় ৪১ হাজার প্রভাষক/শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ই-রেজিস্ট্রেশন থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক চাহিদা প্রদান এবং নির্ধারিত যোগ্যতা অনুসারে নিয়োগ সুপারিশ এই সমগ্র প্রক্রিয়াটি অধিক স্বচ্ছতা এবং আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পন্ন করা হয়েছে।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি দেখভাল করে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মাধ্যমিক (হাইস্কুল) পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান এবং গণিত বিষয়ে মেধাবী শিক্ষক পাওয়া যায় না। একই সাথে শরীর চর্চা শিক্ষক এবং মাদরাসার জন্য মৌলভী ও কারি পদের জন্যই যোগ্য মেধাবী প্রার্থী পাওয়া যায় না। সম্প্রতি শূন্য পদে নতুন করে যোগ হয়েছে মাধ্যমিকের চারু-কারু পদের শিক্ষক সঙ্কট। শুধু এই চারু-কারু পদেই ১৩ হাজার পদ শূন্য হয়েছে। অথচ যোগ্য ও মেধাবী প্রার্থীরা এই পদে আসছেন না।

এনটিআরসিএর তথ্য-উপাত্ত বলছে শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীরা না আসলেও কম মেধাবী কিংবা দুর্বল প্রার্থীরা অন্য পেশায় প্রবেশের সুযোগ না পেয়ে তারা কিন্তু ঠিকই শিক্ষকতার এ পেশায় আসতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা তদবির করছেন। বিগত দিনে এনটিআরসিএর প্রিলিমিলারি এবং লিখিত পরীক্ষায় যে ফলাফল তাতে দেখা গেছে পরীক্ষায় পাসের জন্য ন্যূনতম ৪০ নম্বরও অনেক প্রার্থী অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। পরবর্তীতে ভাইভা ও অন্যান্য পরীক্ষায়ও বাদ পড়ে যায় প্রার্থীদের বড় একটি অংশ। এতে প্রতিযোগিতার শেষ পর্যন্ত টিকে থাকা প্রার্থীদের সংখ্যা অনেক কম হয়। ফলে বাধ্য হয়ে কম মেধাবীদেরই নিয়োগ দিতে বাধ্য হতে হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আজাদ খান নয়া দিগন্তকে বলেন, শিক্ষকদের বেতন কাঠামোই মেধাবীদের এই পেশার দিকে আকৃষ্ট করছে না। একই সাথে সম্মানের দিক দিয়েও আগের মতো শিক্ষকদের সেই মর্যাদা সমুন্নত রাখা সম্ভব হচ্ছে না। একই সাথে বর্তমান এই বিশ্বায়নের যুগে পেশার বৈচিত্র্য বা প্রতিযোগিতাও মেধাবীদের ভিন্ন ভিন্ন পেশা বেছে নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। তবে একথা ঠিক যে, মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করতে না পারলে ভবিষ্যতে আমাদের জন্য ভালো কোনো ফল বয়ে আনবে না। এজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এখনি নেয়া জরুরি বলে আমি মনে করি।

প্রকাশিত ষষ্ঠ নিয়োগ সুপারিশ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, দেশের স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, কারিগরি ও ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোট এক লাখ ৮২২টি এমপিওভুক্ত শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। এর মধ্যে স্কুল ও কলেজে ৪৬ হাজার ২১১টি, মাদরাসায় ৫৩ হাজার ৫০১টি এবং কারিগরি ও ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানে এক হাজার ১১০টি পদ রয়েছে।

সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীর করণীয়

সুপারিশকৃত প্রার্থীকে নিয়োগপত্র দেয়ার আগে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানপ্রধানরা পদের প্রযোজ্যতা অনুসারে প্রার্থীর কাম্য শিক্ষাগত যোগ্যতার সব সনদ এবং এনটিআরসিএ কর্তৃক ইস্যু করা সুপারিশপত্র সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত তিনজন শিক্ষকের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির মাধ্যমে যাচাই করতে হবে। প্রার্থী যোগদানের নির্ধারিত তারিখের পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে প্রতিষ্ঠানপ্রধানরা তাদের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে টেলিটকের যঃঃঢ়://হমর.ঃবষবঃধষশ.পড়স.নফ লিংকে প্রবেশ করে ঔড়রহরহম ঝঃধঃঁং অপশনে ণবং ক্লিক করবেন। প্রার্থী যোগদান না করলে ঔড়রহরহম ঝঃধঃঁং-এ ঘড় ক্লিক করে জবধংড়হ-এর ঘরে যোগদান না করার সম্ভাব্য কারণ উল্লেখ করবেন।