দেশে ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ছে বিকৃত রুচির যৌনচার সমকামিতা। দেশী-বিদেশী কয়েকটি চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে শহর এমনকি গ্রামাঞ্চলের তরুণ যুবকদের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছে এর বীজ। বাদ যাচ্ছেন না বৃদ্ধরাও। যৌন চাহিদার লোভনীয় অফার, বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক ভিডিও পাঠিয়ে অস্থির করে তোলা হচ্ছে তরুণদের। এরপর সুপরিকল্পিতভাবে জড়িয়ে ফেলা হচ্ছে সমকামিতায়।
এ দিকে প্রথম দিকে কোনো কিছু না বুঝেই সেই ফাঁদে পা দিচ্ছে তরুণ-যুবকরা। এক সময় চাইলেও আর সহজে বেরিয়ে আসতে পারছে না ভয়াবহ এই অন্ধকার জগৎ থেকে। সম্প্রতি শুধু ঢাকা শহরেই বিভিন্ন অ্যাপসে এমন ৫০০ শতাধিক গ্রুপের তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত তথ্যের বাইরেও অসংখ্য অ্যাপস রয়েছে যার তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।
সমকামিতার কারণে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে মরণব্যাধি এইডস। সম্প্রতি সীমান্তবর্তী যশোর জেলায় নতুন করে ৩৭ জন এইচআইভি আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ২৫ জনই শিক্ষার্থী, বয়স ১৭ থেকে ২৩ বছরের মধ্যে। বলা হচ্ছে আক্রান্তদের বেশির ভাগই সমকামী। স্বাস্থ্য বিভাগের এই পরিসংখ্যান গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বেশি। যা রীতিমতো উদ্বেবেগের বিষয় বলে উল্লেখ করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সম্প্রতি পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, প্রতিটি গ্রুপে ১০০ থেকে দেড় হাজার করে সদস্য আছে। এসব গ্রপের মধ্যে রয়েছে মিরপুর লাভলী বয়েজ, স্কুল গ্যাং, ফ্রেন্ড আড্ডা, ঢাকা গে জোন, এফএনডি নিডেড এন ঢাকা, ইসিবি মাটিকাটা ক্যান্টনমেন্ট, ভাসানটেক মিরপুর ১৪ থেকে ১০ গে গ্রুপ। রয়েছে ঢাকা বটমস, বিএল, বাংলাদেশ গে গ্রুপ, গল্প কথা, বাংলাদেশ গে গ্রুপ-২. ঢাকা গে কমিউনিটি, লালবাগের ছেলে, ম্যাওম্যাও, গাজীপুরের মাওনা সমকামী গ্রুপ, এলজিবিটি ইনচ ইন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ হিজরা গ্রুপ, উত্তরা গেসহ ইত্যাদি নামে অসংখ্য গ্রুপ। এই গ্রুপে তারা নিজেদের চাহিদার কথা জানান দিয়ে থাকে। যে বা যারা ওই চাহিদার সাথে যুক্ত হতে ইচ্ছুক তিনি বা তারা গ্রুপে সাড়া দিয়ে থাকে। যেমন এলজিবিটি ইনচ ইন বাংলাদেশে নামক গ্রুপে একজন লিখেছেন, ‘কালকে প্লেসসহ কেউ ফ্রি আছে? সেখানে একজন উত্তর দিচ্ছে ‘ আমি টপ, তখন প্রথমজন লিখছেন লোকেশন? দ্বিতীয়জনের উত্তর ছিল বুসন্ধরা...।
এমন কয়েকটি গ্রুপের সাথে যুক্ত কয়েক ব্যক্তি এসব তথ্য ও প্রমাণ দিয়ে জানিয়েছেন, সমকামিতার গ্রুপগুলো খুব সতর্কতার সাথে যাচাই-বাছাই করে সদস্য সংগ্রহ করে থাকে। এসব সদস্যকে প্রথম দিকে লোভনীয় যৌন অফার দেয়া হয়। এরপর ধীরে ধীরে সমকামিতার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে খুব সহজেই এসব গ্রুপে গিয়ে একজন আরেকজনের সাথে পরিচয় হয়ে দ্রুতই বিকৃত যৌন চাহিদা মেটাতে শুরু করে।
বলা হয়েছে দেশে চার ক্যাটাগোরির সমকামী রয়েছে। টপ, বটম, ভার্সেটাইল ও বাইসেক্সুয়াল। টপ হলো ওই ছেলে যে স্বামী অথবা বয়ফ্রেন্ড হিসেবে কাজ করবে। বটম স্ত্রী অথবা গার্লফ্রেন্ড হিসেবে কাজ করে। আর ভার্সেটাইল হলো ওই ছেলে যে সেক্স করে না শুধু বন্ধুত্ব রোমাঞ্চ করে থাকে। বাইসেক্সুয়াল হলো সে যে মেয়েদের সাথেও সেক্স করে আবার ছেলেদের সাথেও সেক্স করে থাকে। বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে সমকামিতা রকেটের গতিতে বেড়েছে। বিশেষ করে সোস্যাল মিডিয়া প্রচলিত হওয়ার আগে এত সমকামী ছিল না, সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সমকামীরা অবাধে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে ফেসবুক, টুইটার বর্তমানে, হোয়াটসঅ্যাপ, এগুলোর মাধ্যমে সমকামীরা একে-অপরের বন্ধু হয়ে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
সূত্র বলছে, দেশের কম বয়সী ছেলেরা সমকামী দেশী-বিদেশী চক্রের পরিকল্পনা না বুঝেই তাদের ফাঁদে পা দিচ্ছে। তাই সমকামীদের কার্যক্রম অবাধে এদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে যেসব ছেলে পরিবারের সাথে থাকে না। লেখাপড়া বা চাকরির জন্য একাকী বাসা নিয়ে শহরে থাকে। অথবা পরিবারের সাথে বাসাতেই থাকে কিন্তু বাবা-মা চাকরির জন্য সারাদিন বাইরে থাকেন। এই টাইপের ছেলেরাই সমকামীতে বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে। আর কিছু ধনাঢ্য ব্যক্তি যাদের টাকা অনেক, যেমন টিকটকার, ব্লগার অথবা অনান্য চাকরিজীবী, এদের বউ-সন্তান আছে কিন্তু কম বয়সের ছেলেদের সাথে সেক্স করতে পছন্দ করে। ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপে সমকামীদের বিরাট বিচরণ রয়েছে। যেসব ছেলে লেখাপড়া বা চাকরির জন্য একা ব্যাচেলর বাসা, মেস অথবা ফ্যামিলি বাসায় থাকে তারা চাইলেই কোনো মেয়েকে বাসায় নিতে পারবে না। কিন্তু একজন ছেলে বন্ধুকে সহজেই বাসায় নেয়া যায়। এতে কেউ কোনো কিছু বলবে না। কারণ ছেলে বন্ধু তো বাসায় আসতেই পারে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে এই সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছে তারা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, আচারণ এবং অধিকার দুই জিনিস। কিছু এনজিও এলজিবিটকে রাইটস বা অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তারা খুব পরিকল্পিতভাবে পলিসি গুছিয়ে সামনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। তাদের পলিসি বাস্তবায়িত হলে সমকামিতা অধিকারে পরিণত হবে আর তখন সরকারিভাবে এর পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে।