- - জরিমানা বাড়িয়ে ১০ লাখ থেকে ৫০ লাখ হচ্ছে
- - ট্রাস্টি বোর্ড গঠনে আসছে নতুন বিধান
দীর্ঘ ১৫ বছর পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নতুন আইনে কঠোর নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনার চিন্তা করা হচ্ছে নিয়ম না মানা প্রতিষ্ঠানগুলোকে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত একটি সংশোধনীর খসড়া প্রস্তাবও প্রস্তুত করা হয়েছে। নতুন বিধানে জরিমানার পরিমাণ ১০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ লাখ টাকার করার শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের গঠন প্রক্রিয়াতে আনা হচ্ছে নতুন বিধান।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে সম্প্রতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে তদারক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এরই অংশ হিসেবে ইউজিসি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০২৫ এর খসড়া সংশোধনী প্রস্তাব তৈরি করেছে। ওই প্রস্তাব অনুযায়ী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আইন লঙ্ঘন করলে বা সরকারের নির্দেশ অমান্য করলে ইউজিসি তাদের সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত আর্থিক জরিমানা করতে পারবে। তবে কারাদণ্ডের বিধান তিন বছর কমিয়ে অনূর্ধ্ব দুই বছর করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সূত্র মতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে জরিমানার পরিমাণ পাঁচগুণ বাড়ানো হচ্ছে। বিদ্যমান আইনে যেখানে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে, নতুন আইনে সেটি বাড়িয়ে ৫০ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ইউজিসি সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন জানান, সংশোধিত আইনের খসড়াটি দ্রুত সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এরপর মন্ত্রণালয় তা কার্যকরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। অবশ্য সংশোধিত খসড়া আইনে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে সনদ জালিয়াতির ঘটনা ঘটলে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষাকার্যক্রম ন্যূনতম দুই বছরের জন্য বন্ধ রাখার বিধান রাখা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে এ বিষয়ে কোনো বিধান যুক্ত ছিল না। নতুন প্রস্তাবিত আইনে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা বা সনদ বাতিল হলে পূর্বের শিক্ষার্থীদের সনদপত্র ও মার্কশিট/ট্রান্সক্রিপ্ট আচার্য কর্তৃক মনোনীত ব্যক্তির স্বাক্ষর করার বিধান রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের একাডেমিক নথিপত্রের বৈধতা নিশ্চিত করার জন্য এই বিধান যুক্ত করা হয়েছে। আগের আইনে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বিধান ছিল না।
সার্টিফিকেট দিতে পারবেন না ভারপ্রাপ্ত ভিসিরা : সূত্র আরো জানায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভারপ্রাপ্ত ভিসিরা স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর পাস শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট দিতে পারবেন না। তবে ভিসি না থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগকৃত প্রোভিসি অথবা রেজিস্ট্রার সনদ দিতে পারবেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ এ ভিসি না থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের সনদ প্রদানে কোনো নিয়ম ছিল না। সংশোধিত নতুন বিধিতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সংশোধিত আইনের খসড়ায় আচার্য কর্তৃক নিযুক্ত ভিসি কর্তৃক সনদপত্র স্বাক্ষরিত হওয়ার বিধান নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এ ছাড়া মার্কশিট, ট্রান্সক্রিপ্টে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কর্তৃক স্বাক্ষরিত হওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। মূল একাডেমিক নথিতে স্বাক্ষরকারীর নাম নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ এ সিন্ডিকেটের ক্ষমতা ও দায়িত্বের মধ্যে সনদপত্র ও সনদপত্রের নিরাপত্তা প্রতীকের তদারক ও হেফাজতের কথা বলা ছিল। কিন্তু মূূল সনদপত্রে কে স্বাক্ষর করবেন তা এই ধারায় সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ ছিল না।
ট্রাস্টি বোর্ডগঠনেও আসছে নতুন বিধান : বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ট্রাস্টি বোর্ডগঠনে নিয়ন্ত্রণ আনতে নতুন বিধান যুক্ত করা হচ্ছে। সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডে একই পরিবারের পাঁচজনের বেশি সদস্য থাকতে পারবেন না। খসড়া আইনে আরো বলা হয়েছে, প্রতিটি ট্রাস্টি বোর্ডে সদস্যসংখ্যা অনধিক ১৫ জন ও অন্যূন ৯ জন হতে হবে। বোর্ডগঠনে বৈচিত্র্য, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতেই এ বিধান যুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সূত্র জানায়, গত ২৩ অক্টোবর কমিশনের ৫৭তম সভায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০২৫ (সংশোধিত)-এর খসড়াটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভায় ট্রাস্টি বোর্ডে পারিবারিক প্রভাব সীমিত করার পাশাপাশি নেতৃত্বের ভারসাম্য আনার প্রস্তাব দেয়া হয়। এ ছাড়া খসড়ায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, পরিচালনা ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আরো নানা পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভিসি, প্রোভিসি ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগে ইউজিসির নেতৃত্বে সার্চ কমিটি গঠন, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য কমপক্ষে পাঁচ একর জমি থাকা এবং টিউশন ফি নির্ধারণে ইউজিসির অনুমোদন নেয়ার বাধ্যবাধকতা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন খসড়ার লক্ষ্য, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসন ও আর্থিক ব্যবস্থায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। একই পরিবারের অতিরিক্ত সদস্য থাকলে স্বার্থের সঙ্ঘাত তৈরি হয় তা রোধেই এই বিধান করা হচ্ছে। বর্তমানে দেশে অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ১১৬টি, যার মধ্যে ১০৫টিতে পাঠদান চলছে। শিক্ষার্থী সংখ্যা তিন লাখ ৫৮ হাজারের বেশি। ইউজিসি আশা করছে, সংশোধিত আইন কার্যকর হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনিক কাঠামো আরো শক্তিশালী হবে এবং একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণের সংস্কৃতি কমবে।



