ছাত্র সংসদ নির্বাচন

৩ যুগ পর রাকসু নির্বাচন আজ

নির্বাচনে নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্তত দুই হাজার সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। ভোটগ্রহণ শেষে রাকসু কোষাধ্যক্ষ কার্যালয়ে ভোট গণনা এবং কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হবে। প্রসঙ্গত সর্বশেষ ১৯৮৯ সালে রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

Printed Edition

রাজশাহী ব্যুরো ও রাবি প্রতিনিধি

বহুল প্রতীক্ষিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন আজ। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে। এবার ৯টি ভবনের ১৭টি কেন্দ্রের ৯৯০ বুথে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোটগ্রহণের জন্য এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। এর আগে মঙ্গলবার রাত ১২টায় শেষ হয়েছে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা। নির্বাচনে নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্তত দুই হাজার সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। ভোটগ্রহণ শেষে রাকসু কোষাধ্যক্ষ কার্যালয়ে ভোট গণনা এবং কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হবে। প্রসঙ্গত সর্বশেষ ১৯৮৯ সালে রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মমতাজউদ্দিন একাডেমিক ভবন, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ কলাভবন, সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন সিরাজী ভবন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবন, জাবির ইবনে হাইয়ান একাডেমিক ভবন, জামাল নজরুল ইসলাম একাডেমিক ভবন, সত্যেন্দ্রনাথ বসু একাডেমিক ভবন, জগদীশচন্দ্র একাডেমিক ভবনে দু’টি করে কেন্দ্রে এবং জুবেরী ভবনের একটি কেন্দ্রসহ মোট ১৭টি কেন্দ্রে ৯৯০টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে।

কোন ভবনে কোন হলের ভোট গ্রহণ : বিশ্ববিদ্যালয়ের মমতাজউদ্দিন একাডেমিক ভবনে সমাজকর্ম বিভাগের ১৫৬ নম্বর কক্ষে ভোট দেবেন মন্নুজান হলের ভোটাররা, সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী একাডেমিক ভবনে ভোট দেবেন দু’টি হলের ভোটাররা। এদের মধ্যে ভবনের উত্তর গেট দিয়ে প্রবেশ করে ১২৮ নম্বর কক্ষে জুলাই-৩৬ হল এবং দক্ষিণ-পূর্ব গেট ব্যবহার করে ১২২ নম্বর কক্ষে ভোট দেবেন বেগম রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীরা।

রবীন্দ্র ভবনে ভোট দেবেন তিনটি হলের ভোটাররা। পূর্ব-মধ্য গেট দিয়ে প্রবেশ করে ১৪৬ নম্বর কক্ষে তাপসী রাবেয়া হল, পূর্ব-দক্ষিণ ফটক দিয়ে প্রবেশ করে ১১৯ নম্বর কক্ষে বেগম খালেদা জিয়া হল এবং দক্ষিণ পশ্চিম ফটক ব্যবহার করে ১২৩ নম্বর কক্ষে রহমতুন্নেসা হলের শিক্ষার্থীরা ভোট দেবেন।

এদিকে জাবির ইবনে হাইয়ান বিজ্ঞান ভবনে ভোট দেবেন দু’টি হলের ভোটাররা। ১৩৩ নম্বর কক্ষে শহীদ হবিবুর রহমান হল এবং ১০১ নম্বর কক্ষে শহীদ শামসুজ্জোহা হল। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ কলা ভবনে বাংলা বিভাগের ১৫০ নম্বর গ্যালারি কক্ষে শহীদ জিয়াউর রহমান হলের শিক্ষার্থীরা।

জামাল নজরুল ইসলাম বিজ্ঞান ভবনের সিএসএলের ১২৫ নম্বর কক্ষে বিজয়-২৪ হল এবং দক্ষিণ-পশ্চিম ফটক ব্যবহার করে ১১৬ নম্বর কক্ষে নবাব আব্দুল লতিফ হলের শিক্ষার্থীরা ভোট দেবেন।

সত্যেন্দ্রনাথ বসু একাডেমিক ভবনের ১৩৩ নম্বর কক্ষে শেরেবাংলা ফজলুল হক হল এবং ২০৮ নম্বর কক্ষে মতিহার হল, জগদীশ চন্দ্র একাডেমিক ভবনের টিচার্স লাউঞ্জে মাদার বখশ হল এবং ১০৫ নম্বর কক্ষে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ভোটাররা ভোট দেবেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনের পূর্ব হল রুমে সৈয়দ আমীর আলী হল এবং পশ্চিম হল রুমে শাহ মখদুম হলের ভোটগ্রহণ চলবে।

তিন স্তরের নজরদারিতে থাকবে ভোটার : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ, হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি ঠেকাতে ভোটারদের তিন স্তরের নজরদারিতে রাখা হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, ‘প্রথমে ভোটার যে শিক্ষার্থী আইডি কার্ড নিয়ে আসবে, সেটার সত্যতা যাচাই করা হবে। পরে ভোটারদের একটা ইউনিক ভোটার আইডি ও ছবিযুক্ত ভোটার আইডি আছে, সেটা যাচাই করা হবে। ছবির সাথে ভোটারের মিল করে পরিচয় নিশ্চিত করার পরও সন্দেহ হলে কার্ডে যে গোপনীয় কিউআর কোড আছে, সেটার সাহায্য নেয়া হবে।’

নির্বাচনের ব্যালট পেপার প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘ভোটার সংখ্যার বাইরে অতিরিক্ত একটা ব্যালট পেপারও ছাপানোর সুযোগ নাই। ২৮ হাজার ৯০১ জন ভোটারের জন্য ২৮ হাজার ৯০১টি ব্যালট পেপারই ছাপানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন প্রশ্ন যেখান থেকে তৈরি হয়, সেখান থেকেই ব্যালট পেপার তৈরি করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আটটি ধাপ পেরিয়ে ব্যালট পেপারগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম জানান, ভোটগ্রহণের দায়িত্বে মোট ২১২ জন শিক্ষক থাকবেন। এর মধ্যে ১৭ জন প্রিসাইডিং অফিসার, অবশিষ্ট শিক্ষকরা সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে ভোট পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন। এ ছাড়া ৯১ জন কর্মকর্তা পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

নিরাপত্তা বিষয়ে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দুই হাজার পুলিশ সদস্য, ছয় প্লাটুন বিজিবি ও ১২ প্লাটুন রথ্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। ভোট গ্রহণের প্রতিটি কেন্দ্র সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় থাকবে এবং স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহার করা হবে।

জানা গেছে, এবার রাকসুতে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির সমর্থিতসহ মোট ১১টি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনে ২৩টি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৪৭ জন প্রার্থী। এর মধ্যে ভিপি পদে ১৮, জিএস পদে ১৩ এবং এজিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৬ জন। এ ছাড়া বাকি ২০টি পদে ২০০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের পাঁচটি পদে ৫৮ জন প্রার্থী এবং হল সংসদ নির্বাচনের ১৫টি পদের বিপরীতে ১৭টি হলে মোট ৫৯৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

রাকসু ও সিনেট নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ২৮ হাজার ৯০১ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১১ হাজার ৩০৫ এবং পুরুষ ভোটার ১৭ হাজার ৫৯৬ জন।

নির্বাচন শেষে সর্বোচ্চ ১৭ ঘণ্টার মধ্যে ফলাফল ঘোষণা করা হবে।

শীর্ষ ৩ পদের প্রার্থীরা কে কোন কেন্দ্রে ভোট দেবেন : এ নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রধান প্যানেলগুলোর ভিপি, জিএস ও এজিএস প্রার্থীরা নিজ নিজ হলে বা নির্ধারিত কেন্দ্রে ভোট দেবেন।

ছাত্রশিবির সমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ ভোট দেবেন সৈয়দ আমীর আলী হল কেন্দ্রে (জুবেরি ভবনের পূর্ব হল রুম)। জিএস প্রার্থী ফজলে রাব্বি মো: ফাহিম রেজা ভোট দেবেন জিয়াউর রহমান হল কেন্দ্রে (শহীদুল্লাহ ভবনের ১৫০ নম্বর গ্যালারি) এবং এজিএস প্রার্থী এস এম সালমান সাব্বির ভোট দেবেন শেরেবাংলা হল কেন্দ্রে (প্রথম বিজ্ঞান ভবনের ১২৯ নম্বর গ্যালারি)।

ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্মের ভিপি প্রার্থী শেখ নুর উদ্দিন আবীর ভোট দেবেন সোহরাওয়ার্দী হল কেন্দ্রে (তৃতীয় বিজ্ঞান ভবনের দক্ষিণ-পশ্চিম পার্শ্ব)। জিএস প্রার্থী নাফিউল ইসলাম জীবন ভোট দেবেন হবিবুর রহমান হল কেন্দ্রে (দ্বিতীয় বিজ্ঞান ভবনের ১৩৩ নম্বর কক্ষ) এবং এজিএস প্রার্থী জাহিন বিশ্বাস এষা ভোট দেবেন রহমতুন্নেসা হল কেন্দ্রে (রবীন্দ্র ভবনের দক্ষিণ-পশ্চিম পার্শ্বের ১২৩ নম্বর কক্ষ)।

আচরণবিধি ভঙ্গ করলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার : রাকসু নির্বাচনে কেউ আচরণবিধি ভঙ্গ করলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হবে অথবা রাষ্ট্রীয়/ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে বলে সতর্ক করেছে নির্বাচন কমিশন।