এস আলমের ২৪ কোম্পানির শেয়ার ও সাইপ্রাসের বাড়ি জব্দ

আদালত প্রতিবেদক
Printed Edition
এস আলম টাওয়ার
এস আলম টাওয়ার |সংগৃহীত

মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান চলমান থাকায় এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের বিদেশে থাকা কোটি কোটি টাকার সম্পদের ওপর আদালত অবরোধ ও জব্দের আদেশ দিয়েছেন।

গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের উপপরিচালক তাহসিন মুনাবিল হকের করা পৃথক তিন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ দেন।

আদেশ অনুযায়ী, সাইফুল আলমের নামে সাইপ্রাসে অবস্থিত দুই তলা বিশিষ্ট একটি বাড়ি জব্দ করা হয়েছে। একইসাথে ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জে তার এবং তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনের নামে থাকা ১৮টি এবং যুক্তরাজ্যের ছয়টি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপের কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে: হ্যাজেল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড (মূল্য ৩.৫ লাখ ডলার), পিকক প্রোপার্টি হোল্ডিং, এডায়ার, ক্যানালি লজিস্টিক, গোল্ডেন ট্রায়াল, হ্যামিল্টন, হ্যানিয়েল, লিনেয়ার, লু সু, ম্যারিকো, পিটসডেল, কিং সু, স্প্রিং ফিল্ড, ট্রিবোলি ট্রেডিং, ওয়েবপেক ও জেনিতা ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড।

এ ছাড়া যুক্তরাজ্যে জার্সি ট্রাস্ট কোম্পানির অধীনে গঠিত ছয়টি ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠান ম্যাপল (মূল্য ২১ কোটি ডলার), ক্যাপরি, স্যারি, শ্যান্টন, ম্যারিনা ও মিশন ট্রাস্ট সাইফুল আলম ও তার স্ত্রীর মালিকানাধীন বলে দুদক জানায়।

এর আগে ১৭ জুন আদালত তাদের নামে থাকা ২০০.২৬ একর জমি (দলিল মূল্য : ১৮০ কোটি ৬১ লাখ টাকা), ২৭ এপ্রিল চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ৫৬৩.৫৭ একর জমি (মূল্য : ১,০০১ কোটি টাকা) এবং একাধিক সময়ে প্রায় শতাধিক বিঘা জমি ও ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ দেয়। এইসব ব্যাংক হিসাব ও শেয়ারে হাজার হাজার কোটি টাকা রয়েছে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি এবং ১২ ফেব্রুয়ারি দেয়া আদেশে শেয়ারের মোট মূল্য প্রায় ৫ হাজার ১০৯ কোটি টাকা উল্লেখ করা হয়। এর পাশাপাশি ১৬ জানুয়ারি দেয়া আদেশে ৩,৫৬৩ কোটি টাকার আরো শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর এস আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনসহ পরিবারের ১২ সদস্যের বিদেশগমনেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন আদালত।

এস আলমকে ভুয়া ঋণ : ইসলামী ব্যাংকের ১০ কর্মকর্তার দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

আদালত প্রতিবেদক জানান, এস আলম গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ঋণ প্রদান করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন থাকায়, ইসলামী ব্যাংকের ১০ কর্মকর্তার দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।

দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে গতকাল ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো: জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জনসংযোগ বিভাগের সহকারী পরিচালক তাহসিন মুনাবীল হক এ তথ্য জানান।

নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা হলেন- সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা, কর্মকর্তা মিফতাহ উদ্দিন, মোহাম্মদ ইহসানুল ইসলাম, মোহাম্মদ সিরাজুল কবির, মুহাম্মদ কায়সার আলী, তাহের আহমেদ চৌধুরী, মোহাম্মদ মোস্তাক আহমেদ, হোসেন মোহাম্মদ ফয়সাল, আহমেদ জুবায়েরুল হক ও এস এম তানভির হাসান।

আবেদনে বলা হয়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য টিম গঠন করা হয়েছে।

অভিযোগ অনুসন্ধানকালে জানা যায় যে, এস আলমের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ঋণ প্রদানে সহায়তা করা ইসলামী ব্যাংকের অভিযুক্ত কর্মকর্তারা দেশত্যাগ করার চেষ্টা করছেন। তারা বিদেশে চলে গেলে অনুসন্ধান কাজ ব্যাহত হতে পারে। এজন্য অনুসন্ধান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেয়া একান্ত আবশ্যক।