বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্যানুযায়ী গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হয়েছে পাঁচ হাজার ৩৮০ জনের। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলছে, প্রাণহানির সংখ্যা সাত হাজার ২৯৪ জন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যানুযায়ী দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা আট হাজার ৫৪৩ জন। একটি দেশের সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য তিনটি প্রতিষ্ঠান তিন রকম দিচ্ছেন। সঠিক তথ্য না থাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ, কারণ বা ক্ষতিগ্রস্তের পূর্ণবাসনের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে সড়ক দুর্ঘটনার সমন্বিত ডাটাবেজ তৈরিতে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেসরকারিভাবে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি সড়ক দুর্ঘটনার বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে এবং বিভিন্ন সময়ে তা প্রকাশ করে। তবে যে সব দুর্ঘটনার ফলে থানায় মামলা কিংবা জিডি হয়, এর বাইরে কোনো তথ্য বিআরটিএর কাছে থাকে না। ২০২৩ সালের শুরু থেকে সড়ক দুর্ঘটনার বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে তা প্রকাশ করা শুরু করেছে বিআরটিএ।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের দেয়া তথ্যমতে, ২০২৪ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ছয় হাজার ৯২৭টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন সাত হাজার ২৯৪ জন এবং আহত ১২ হাজার ১৯ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৮৯৩ জন ও শিশু ১১৫২ জন। একইসময়ে দুই হাজার ৭৬১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন দুই হাজার ৬০৯ জন। ১১৮টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১৫২ জন নিহত, ১৬১ জন আহত এবং ৩৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ৩৪৭টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ৩২৪ জন নিহত এবং ২৭৭ জন আহত হয়েছেন।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যে দেখা যায়, গত বছর ছয় হাজার ৩৫৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় আট হাজার ৫৪৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১২ হাজার ৬০৮ জন। রেলপথেও ৪৯৭টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ৫১২ জন নিহত এবং ৩১৫ জন আহত হয়েছেন। নৌপথে ১১৮টি দুর্ঘটনায় ১৮২ জন নিহত, ২৬৭ জন আহত এবং ১৫৫ জন নিখোঁজ হয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌপথে মোট ছয় হাজার ৯৭৪টি দুর্ঘটনায় ৯ হাজার ২৩৭ জন নিহত এবং ১৩ হাজার ১৯০ জন আহত হয়েছেন।
অন্য দিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত দুর্ঘটনা প্রতিবেদনের তথ্যমতে, সড়ক দুর্ঘটনায় ২০২৪ সালে দেশে প্রাণহানি হয়েছে পাঁচ হাজার ৩৮০ জনের।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি মহাসচিব মো: মোজাম্মেল হক বলেন, আমরা সেকেন্ডারি সোর্স থেকে সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন তৈরি করি। গণমাধ্যমগুলোতে সব সড়ক দুর্ঘটনার রিপোর্ট প্রকাশ হয় না। এ জন্য আমাদের রিপোর্টকে প্রতীকী বলা যেতে পারে। প্রাইমারি সোর্স থেকে আমাদের তথ্য সংগ্রহ করার সক্ষমতা নেই। এটি সরকার খুব সহজে করতে পারে। কিন্তু সরকার চায় না সড়কে যে ব্যাপকভাবে দুর্ঘটনা ঘটে তা প্রকাশিত হোক। এ জন্য তারা এ-সংক্রান্ত রিপোর্ট তৈরি করতে অনীহা প্রকাশ করে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য সংগ্রহ সরকারের করা দরকার। দুর্ঘটনার প্রতিরোধমূলক কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া দরকার, তথ্য না থাকলে তা জানা সম্ভব নয়। কিন্তু সরকার সেটি করছে না। আমরা চেয়েছিলাম বিআরটিএ, পুলিশ ও বেসরকারি যেসব সংগঠন রয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন তৈরি করে সমন্বিত একটি ইউনিক ডাটা ব্যাংক তৈরি করতে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ জিয়াউল হক নয়া দিগন্তকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য সংগ্রহ ও দুর্ঘটনারোধে করণীয় নির্ধারণে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে দুর্ঘটনা শনাক্ত এবং দুর্ঘটনার কারণ বিশ্লেষণ করা সম্ভব হবে। এর ফলে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দুর্ঘটনার বিষয়ে প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিতে পারবে সরকার।



