মালয়েশিয়া সফরের দ্বিতীয় দিনে গতকাল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সে দেশের প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সাথে পুত্রজায়ার পার্দানা পুত্রা ভবনে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন। প্রথমে দুই নেতা একান্তে বৈঠক করেন। এ সময় উভয়ে দুই দেশের সম্পর্ক আরো গভীর এবং কৌশলগত ভবিষ্যৎমুখী অংশীদারিত্বে রূপান্তরের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। এর আগে সীমিত সংখ্যক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে তারা বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জনশক্তি ও জ্বালানি সহযোগিতা, নীল অর্থনীতি, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়সহ বিস্তৃত পরিসরের দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠকে আলোচনা করেন। এ দিন বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা বাড়াতে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং তিনটি নোট বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
প্রতিনিধি পর্যায়ের আলোচনার শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের মধ্যে ইতিহাস, ধর্ম ও সাংস্কৃতিক সহানুভূতির ভিত্তিতে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। মানবসম্পদ, বাণিজ্য ও জনগণের পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া বাংলাদেশের অনন্য অংশীদার।’
প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম অধ্যাপক ইউনূসকে ‘মালয়েশিয়ার বন্ধু’ হিসেবে বর্ণনা এবং গত এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য তার প্রশংসা করেন। তিনি বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং প্রবাসী শ্রমিকদের কল্যাণ, শিক্ষা এবং রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
একান্ত বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস প্রটোকল জটিলতার আওতায় আটকে পড়া ৮ হাজার বাংলাদেশী শ্রমিককে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের সুযোগ প্রদান এবং মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা চালুর জন্য মালয়েশিয়াকে ধন্যবাদ জানান। এর ফলে শ্রমিকরা জরুরি প্রয়োজনে দেশে ফিরে গিয়েও চাকরি হারানোর ঝুঁকি এড়াতে পারবেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
দুই পক্ষই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন, যাতে খরচ কমে এবং শ্রমিকদের কল্যাণ সুরক্ষিত হয়। আলোচনায় আইন, বিচার ও প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা আসিফ নজরুল মালয়েশিয়াকে সরকার-টু-সরকার কাঠামোর মাধ্যমে আরো বেশিসংখ্যক দক্ষ বাংলাদেশী পেশাজীবী, যেমন চিকিৎসক ও প্রকৌশলী নিয়োগের আহ্বান জানান। তিনি উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বোয়েসেল বর্তমানে মালয়েশিয়ার কোম্পানিগুলোর জন্য শ্রমিক নিয়োগ পরিচালনার সক্ষমতা অর্জন করেছে। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশী নিরাপত্তারক্ষী ও সেবাকর্মীদের জন্য সুযোগ দেয়া এবং মালয়েশিয়ায় অনিয়মিত বা অনিবন্ধিত বাংলাদেশী শ্রমিকদের নিয়মিতকরণের পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
মালয়েশিয়ার কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেন, বাংলাদেশী শ্রমিকরা এখন মালয়েশিয়ার শ্রমিকদের সমান সামাজিক সুরক্ষা সুবিধা পাবেন এবং বাংলা ভাষায় অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন।
বাংলাদেশ হাজারো শিক্ষার্থীর জন্য ‘গ্র্যাজুয়েট পাস’ ভিসা চালুর অনুরোধ জানায়, যারা বর্তমানে মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশী শিক্ষার্থী মালয়েশিয়ায় অধ্যয়নরত। উভয় নেতা বাংলাদেশকে আসিয়ানের সাথে সম্পৃক্ততা গভীর করার আকাক্সক্ষা নিয়ে আলোচনা করেন, যার মধ্যে রয়েছে সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার মর্যাদা পাওয়ার প্রচেষ্টা। এ বিষয়ে ড. ইউনূস আসিয়ানের চেয়ার হিসেবে মালয়েশিয়ার সমর্থন কামনা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস মালয়েশিয়াকে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে সেপ্টেম্বর মাসে নিউইয়র্কে জাতিসঙ্ঘের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক রোহিঙ্গা সম্মেলনে অংশ নেয়ার আমন্ত্রণ জানান। তিনি রোহিঙ্গা জনগণের প্রতি মালয়েশিয়ার একের পর এক সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান।
অর্থনৈতিক বিষয়ে, দুই পক্ষ বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনাকে ত্বরান্বিত করা, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের মাধ্যমে বিনিয়োগ সহযোগিতা জোরদার করা এবং মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ যৌথ ব্যবসা পরিষদ সক্রিয় করার বিষয়ে একমত হন। দুই বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ঘাটতির কথা উল্লেখ করে ঢাকা বাংলাদেশের ওষুধ, ব্যাটারি, জুতা, সিরামিক ও পাটজাত পণ্যের জন্য মালয়েশিয়ার বাজারে আরো প্রবেশাধিকার চেয়েছে।
বাংলাদেশ নীল অর্থনীতি ও হালাল শিল্প উন্নয়নে মালয়েশিয়ার সহায়তা কামনা করে, যার মধ্যে ঢাকার বাইরে একটি হালাল অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়া আঞ্চলিক বিস্তৃত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বে (আরসিইপি) যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করে। দুই দেশই তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ ও জ্বালানি সহযোগিতার নতুন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরকে স্বাগত জানায় এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি অংশীদারিত্ব অন্বেষণে সম্মত হয়। তারা প্রতিরক্ষা, সংস্কৃতি ও পর্যটন ক্ষেত্রেও সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখার প্রশংসা করেন এবং প্রখ্যাত এশীয় সাহিত্যিক ও চিন্তাবিদদের নিয়ে একটি সাংস্কৃতিক সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তাব দেন।
উভয় নেতা প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, এলএনজি সরবরাহ ও জ্বালানি সহযোগিতা, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ও মালয়েশিয়ার ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (আইএসআইএস) মধ্যে সহযোগিতা, বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ও মালয়েশিয়ান ইনস্টিটিউট অব মাইক্রোইলেকট্রনিক সিস্টেমসের (এমআইএমওএস) মধ্যে সহযোগিতা এবং এফবিসিসিআই (এফবিসিসিআই) ও এনসিসিআইএমের (এনসিসিআইএম) মধ্যে সহযোগিতা সম্পর্কিত একাধিক সমঝোতা স্মারক বিনিময় প্রত্যক্ষ করেন। তারা কূটনৈতিক প্রশিক্ষণ, হালাল শিল্পখাত এবং উচ্চশিক্ষা সহযোগিতা সম্পর্কিত নোটও বিনিময় করেন।
বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে ৫টি সমঝোতা স্মারক, তিনটি নোট বিনিময় স্বাক্ষর : প্রথম নোট বিনিময়টি উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য স্বাক্ষরিত হয়। মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাতো সেরি উতামা হাজি মোহাম্মদ বিন হাজি হাসান এবং বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ নজরুল নিজ নিজ দেশের পক্ষে নোট বিনিময়ে স্বাক্ষর করেন।
দ্বিতীয় নোট বিনিময়টি কূটনৈতিক প্রশিক্ষণ বিষয়ে সহযোগিতার জন্য স্বাক্ষরিত হয়। এতে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাতো সেরি উতামা হাজি মোহাম্মদ বিন হাজি হাসান এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো: তৌহিদ হোসেন স্বাক্ষর করেন।
তৃতীয় নোট বিনিময়টি হালাল ইকোসিস্টেমে সহযোগিতা বিষয়ে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দফতরের উপমন্ত্রী সিনেটর ড. জুলকিফলি বিন হাসান এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এতে স্বাক্ষর করেন।
প্রথম এমওইউটি হয় প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বিষয়ে। মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী দাতো সেরি মোহাম্মদ খালিদ বিন নরদিন এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো: তৌহিদ হোসেন এতে স্বাক্ষর করেন।
দ্বিতীয় এমওইউটি হলো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ, এলএনজি অবকাঠামো, পেট্রোলিয়াম পণ্য ও সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো ক্ষেত্রে সহযোগিতা বিষয়ে। মালয়েশিয়ার ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রী দাতুক সেরি আমির হামজাহ বিন আজিজান এবং বাংলাদেশের জ্বালানি উপদেষ্টা এম ফওজুল কবীর খান এতে স্বাক্ষর করেন।
তৃতীয় এমওইউটি মালয়েশিয়ার ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের মধ্যে সহযোগিতা বিষয়ে। আইএসআইএস মালয়েশিয়ার চেয়ারম্যান দাতুক প্রফেসর ড. মোহদ ফয়জ আবদুল্লাহ এবং মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো: শামীম আহসান এতে স্বাক্ষর করেন।
চতুর্থ এমওইউটি মালয়েশিয়ার মাইমস সার্ভিসেস এসডিএন বিএইচডি (এমএসএসবি) এবং বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিএমসিসিআই) মধ্যে সহযোগিতা বিষয়ে। এমএসএসবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ ফওজি ইয়াহায়া এবং বিএমসিসিআইয়ের শাব্বির আহমেদ খান এতে স্বাক্ষর করেন।
পঞ্চম এমওইউটি মালয়েশিয়ার ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এনসিসিআইএম) এবং বাংলাদেশের এফবিসিসিআইয়ের মধ্যে স্বাক্ষর হয়। এনসিসিআইএমের সভাপতি দাতো সেরি এন গোবালাকৃষ্ণান এবং এফবিসিসিআই-এর প্রশাসক মো: হাফিজুর রহমান এতে স্বাক্ষর করেন।
মালয়েশিয়ায় আরো বাংলাদেশীর কাজ করার সুযোগ পাবেন : আশা প্রধান উপদেষ্টার
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে আরো বেশি সংখ্যক বাংলাদেশী কাজ করার সুযোগ পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল কুয়ালালামপুরের পুত্রজায়ায় সে দেশের প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সাথে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক এবং দুই দেশের মধ্যে ৫টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং তিনটি সহযোগিতামূলক নোট বিনিময় স্বাক্ষরের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আশা প্রকাশ করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশী কর্মী মালয়েশিয়ায় কাজ করছে। তারা উপার্জিত অর্থ দেশে পাঠান, যা তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবনযাপন, সন্তানের লেখাপড়া এবং ভালো শিক্ষা গ্রহণে সহায়তা করছে। আমরা আশা করি বাংলাদেশের জন্য এই দরজা খোলা থাকবে এবং আমাদের দেশের আরো অধিকসংখ্যক তরুণ-তরুণী এখানে কাজ করার সুযোগ পাবেন।
বাংলাদেশের কর্মীদের মালয়েশিয়ায় কাজ করার সুযোগ দেয়ায় দেশটির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, মালয়েশিয়ার জনগণ তাদের সাথে পরিবারের একজন সদস্য এবং বন্ধুর মতো আচরণ করে। এতে তারা খুব খুশি। তারা অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি এখান থেকে অনেক কিছু শেখে, যা দেশে ফিরে যাওয়ার পর নিজের ব্যবসা দাঁড় করাতে সহায়ক হয়।
মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমরা বাংলাদেশকে একটা উৎপাদনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আপনারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুন এবং প্রযুক্তি নিয়ে আসুন। আমাদের মানবসম্পদকে কাজে লাগিয়ে আপনারা পণ্য উৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানি করতে পারেন।
গত বছরের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গত বছর ছাত্রজনতা রাস্তায় নেমেছিল। আন্দোলনের মুখে স্বৈরশাসক বিদায় নিয়েছে। এরপর নতুন সরকারের দায়িত্ব নিয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশে স্থিতিশীলতা ফেরাতে আমরা সহযোগিতা খুঁজছিলাম, আর তখন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বন্ধুর মতো আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি আমাদের শক্তি জুগিয়েছিলেন।
বাংলাদেশে সঠিক পথ নিশ্চিত করতে দৃঢ়সঙ্কল্পের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমরা দেশে শৃঙ্খলা ফেরাতে পেরেছি। অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করেছি। ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে আবারো কার্যকর করা গেছে। যে কারণে এক বছরের মাথায় এসে আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে পারছি।
প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসন এবং আসিয়ানের সদস্যপদ প্রাপ্তির জন্য মালয়েশিয়ার জোরালো সমর্থন চান। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথাও জানান তিনি।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মালয়েশিয়া উদ্বিগ্ন : আনোয়ার ইব্রাহিম
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেছেন, বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশের ওপর যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে তা নিয়ে মালয়েশিয়া উদ্বিগ্ন। গতকাল বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে পুত্রাজায়ায় এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, মিয়ানমারে শান্তি প্রতিষ্ঠা অবশ্যই একটা বড় বিষয়। কিন্তু দুর্ভোগে থাকা শরণার্থী ও ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য জরুরি মানবিক সহায়তাও প্রয়োজন। তিনি নিউ ইয়র্ক, কলকাতা ও মালয়েশিয়ায় বহুপক্ষীয় ফোরামে উদ্যোগ নেয়ায় বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের প্রশংসা করেন।
আনোয়ার ইব্রাহিম জানান, মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডের সাথে একটি দল গঠন করে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মিয়ানমার সফর করবেন। এর উদ্দেশ্য হলো, সেখানে শান্তি নিশ্চিত করা এবং জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর যে নৃশংসতা চলছে, তার একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করা। মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক নিয়ে তিনি বলেন, মালয়েশিয়া বাংলাদেশকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে দেখে। বাংলাদেশের কর্মীরা এখানে একসাথে কাজ করে মালয়েশিয়ার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। এ কারণেই মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং মানবসম্পদ মন্ত্রী বাংলাদেশী কর্মীদের জন্য মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা সুবিধা চালু করতে সম্মত হয়েছেন, যাতে বাংলাদেশের কর্মীরা তাদের পরিবারের সাথে দেখা করতে পারে এবং কর্মস্থলে নিরাপদ বোধ করে।
তিনি আরো বলেন, আপনারা কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন এবং সেগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে, বিশেষ করে আটকা পড়া কর্মীদের সহায়তার জন্য। আমরা পেট্রোনাসের সাথে জ্বালানি খাতে এবং আজিয়াটার সাথে টেলিযোগাযোগ খাতে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি। পাশাপাশি এখন আমরা এই সহযোগিতাকে হালাল, এসটিইএম (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত), গবেষণা এবং সেমিকন্ডাক্টর খাতে জোরদার করতে চাই।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসকে মালয়েশিয়ার একজন মহান বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, বাংলাদেশের এই ক্রান্তিলগ্নে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অধ্যাপক ইউনূস অসাধারণ অগ্রগতি এনেছেন। এখন তিনি মালয়েশিয়ার সাথে বিনিয়োগ, বাণিজ্য, সংস্কৃতি ও শিক্ষাক্ষেত্রে সম্পর্ক আরো উন্নয়নে কাজ করছেন। তিনি আরো বলেন, ‘অধ্যাপক ইউনুসকে এই দেশের (মালয়েশিয়া) মানুষ চিনে তার অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য, যা দরিদ্র ও অসহায়দের জন্য সুযোগ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এর মধ্যে রয়েছে মাইক্রোক্রেডিট এবং কেদাহর আলবুখারি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার ব্যবস্থা সৃষ্টি করা।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, তারা সম্ভবত প্রথম সরকারি প্রতিনিধিদল হিসেবে ঢাকায় এসেছিলেন বন্ধুত্বের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি দেখাতে। তারা চান, একটি বিশাল সম্ভাবনাময় ও মালয়েশিয়ার মহান বন্ধু দেশ হিসেবে বাংলাদেশ তার জনগণের জন্য শান্তি প্রতিষ্ঠা করে উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিশ্চিত করুক।
অধ্যাপক ইউনূসের সম্মানে মধ্যাহ্নভোজ : প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল কুয়ালালামপুরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইবরাহিমের বাসভবনে মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নেন। প্রধান উপদেষ্টার সম্মানে এই মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করা হয়। মালয়েশিয়ার মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দ এবং প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীরা এতে যোগ দেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস এবং প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় একটি বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। এর আগে অধ্যাপক ইউনূস প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পৌঁছালে স্কুলের শিক্ষার্থীরা তাকে অভিবাদন জানান। এর আগে সকাল ৯টায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস কুয়ালালামপুরের পুত্রাজায়ায় প্রধানমন্ত্রীর অফিসে পৌঁছালে আনোয়ার ইব্রাহিম তাকে লাল গালিচা অভ্যর্থনা জানান। সেখানে অধ্যাপক ইউনূসকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। গার্ড অব অনার প্রদান শেষে আনোয়ার ইব্রাহিম তার মন্ত্রিসভার সদস্যদেরকে মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। পরে ড. ইউনূস প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হন।
প্রধান উপদেষ্টা তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে সোমবার সন্ধ্যায় মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে পৌঁছান।
মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান : মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশকে ব্যবসাবান্ধব করতে নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অতীতে বাংলাদেশে ব্যবসা আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী এগোয়নি। তবে নতুন বাংলাদেশে অনেক কিছুই নতুনভাবে গড়ে উঠছে, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ব্যবসার সম্ভাবনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সম্ভাব্য সব উপায়ে ব্যবসাবান্ধব হতে চেষ্টা করছে। আমি পরিবর্তিত বাংলাদেশে অসীম সম্ভাবনা খুঁজে পেয়েছি। অধ্যাপক ইউনূস গতকাল কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সুযোগ নিয়ে আয়োজিত এক ব্যবসায়িক ফোরামে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে রয়েছে তরুণ ও সৃষ্টিশীল জনগোষ্ঠী। তিনি বিনিয়োগকারীদের বিশ্বজুড়ে বসবাসরত তরুণ বাংলাদেশী প্রবাসীদের সম্ভাবনা কাজে লাগানোর আহ্বান জানান। বিদেশে থাকা তরুণ বাংলাদেশীদের প্রসঙ্গ টেনে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তাদের মধ্যে সবসময় বাংলাদেশের জন্য কিছু করার তীব্র আকাক্সক্ষা রয়েছে।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন অনুষ্ঠানের শুরুতে দেয়া বক্তব্যে বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা এবং শুল্ক ও অশুল্ক বাধা অপসারণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন।
সেলুলার অপারেটর রবির প্রধান শেয়ারহোল্ডার, আজিয়াটা গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিবেক সুদও বক্তব্য দেন। এতে তিনি বাংলাদেশে আজিয়াটার ২৮ বছরে ব্যবসা সম্প্রসারণ, অংশীদারিত্ব ও যৌথ সাফল্যের কথা তুলে ধরেন।
এ সময় পেট্রোলিয়াম ন্যাশনাল বারহাদের (পেট্রোনাস) প্রেসিডেন্ট ও গ্রুপ সিইও তেংকু মুহাম্মদ তৌফিক, সার্বভৌম সম্পদ তহবিল খাজানাহ ন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল ফেইসাল ওয়ান জাহির, পাম অয়েল কোম্পানি সাইম ডার্বি প্লান্টেশনস, কুয়ালালামপুর কেপং বেরহাদ (কেএলকে), আইওআই করপোরেশন এবং ফেলদা গ্লোবাল ভেঞ্চারসের (এফজেভি) শীর্ষ কর্মকর্তা, প্রোটন হোল্ডিংস বেরহাদের (প্রোটন) চেয়ারম্যান সৈয়দ ফয়সাল আলবার এবং গ্লোভ প্রস্তুতকারক টপ গ্লাভ করপোরেশনের নির্বাহী চেয়ারম্যান লিম উই চাই প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন ।
ব্যবসায়িক এই সমাবেশের আগে মঙ্গলবার পুত্রাজায়ায় মালয়েশিয়ার ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি -এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
আজিয়াটাকে বাংলাদেশে ৫জি সেবা সম্প্রসারণের আহ্বান : প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল মালয়েশিয়ার শীর্ষ টেলিকম প্রতিষ্ঠান আজিয়াটাকে বাংলাদেশে ৫জি সেবা চালু এবং দেশের ডেটা সেন্টারে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। কুয়ালালামপুরে প্রধান উপদেষ্টা আজিয়াটা প্রতিনিধিদলের সাথে বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির জন্য উচ্চগতির ইন্টারনেট অপরিহার্য এবং বৈশ্বিক কোম্পানিগুলোকে ডিজিটাল অর্থনীতিতে অংশগ্রহণের জন্য বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হবে। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার শীর্ষ টেলিযোগাযোগ অপারেটরদের জন্য আরও ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে লাইসেন্সিং ব্যবস্থাগুলোকে সহজতর করছে।
সেলুলার অপারেটর রবির প্যারেন্ট কোম্পানি আজিয়াটা বারহাদ গ্রুপের সিইও বিবেক সুদ জানান, কোম্পানিটি বাংলাদেশে ৫জি ট্রায়াল সম্পন্ন করেছে। তবে পূর্ণাঙ্গ ৫জি সেবা বাস্তবায়নের জন্য দেশের ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ অপরিহার্য। তিনি জানান, রবি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে বছরে প্রায় ২০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে এবং ৫জি সেবা চালু করতে আগ্রহী রয়েছে।
তবে তিনি ব্যয়বহুল স্পেকট্রাম ফি এবং বিচ্ছিন্ন লাইসেন্সিং ব্যবস্থাকে বিদেশী অপারেটরদের বিনিয়োগের সিদ্ধান্তে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে উল্লেখ করেন। এ ছাড়া আজিয়াটা বাংলাদেশে ডেটা সেন্টারের জন্য যৌথ উদ্যোগে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রেও আগ্রহী বলে জানান সুদ।
অধ্যাপক ইউনূস বেসরকারি খাত এবং নিয়ন্ত্রকদের মধ্যে আরো শক্তিশালী সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কাছাকাছি আসা এবং একে অপরকে বোঝা।
আজিয়াটা প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন আজিয়াটা গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং ইন্ডিপেন্ডেন্ট নন-এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর শাহরিল রিদজা রিদজুয়ান। এ ছাড়া বৈঠকে অংশ নেন আজিয়াটা গ্রুপের প্রধান নিয়ন্ত্রক ও সরকারি বিষয় সংক্রান্ত কর্মকর্তা ফুঙ চি কিয়ং এবং গ্রুপের প্রধান ব্যবসা ও প্রযুক্তি কর্মকর্তা থমাস হান্ডট।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো: তৌহিদ হোসেন, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ।
প্রবাসীদের রেমিটেন্সে অর্থনীতি মজবুত অবস্থায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে : প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি এক বছরের মধ্যে মজবুত অবস্থায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
গতকাল কুয়ালালামপুরে একটি হোটেলে প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটির সাথে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, স্বৈরশাসনের সময় টাকা চুরি করে ব্যাংক খালি করা হয়েছিল। পুরো আর্থিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। কিন্তু প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের কারণে অর্থনীতি মজবুত অবস্থায় ফিরে এসেছে।
প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, সেই নির্বাচনে আপনারা ভোট দিতে পারবেন। নির্বাচন কমিশন এ নিয়ে কাজ করছে।
মালয়েশিয়ায় ব্যবসায়ী ও বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সাথে বৈঠকের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস জানান, মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বড় ধরনের বিনিয়োগের আশ্বাস পাওয়া গেছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় যারা অনিয়মিত হয়ে পড়েছেন, তাদের এ জটিলতা নিরসনে সরকার কাজ করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে বৈধ কাগজপত্র নিয়ে বিদেশে আসার পরামর্শ দেন।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার শামীম আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো: তৌহিদ হোসেন বক্তব্য রাখেন।
প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে কাজ করছে সরকার : বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় মালয়েশিয়ার প্রবাসী বাংলাদেশীদের কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘আপনারা অর্থনীতিতে মস্ত বড় অবদান রাখছেন। আপনাদের এই অবদানের স্বীকৃতি আমাদের দিতে হবে। আগামী নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটাধিকার আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।’
গতকাল কুয়ালালামপুরে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো: তৌহিদ হোসেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে চেষ্টা করেছি প্রবাসীদের সাথে আলোচনা করতে, তাদের কথাগুলো শুনতে। আপনাদের অনেক ন্যায্য অভিযোগ রয়েছে। আমরা এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য ধারাবাহিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি। জটিলতা কমানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি।’