- তবে আলোচনার জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন আব্বাস আরাগচি
- তেহরানের বক্তব্যের পর ট্রাম্প ফের হামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জানান, তেহরান তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি থেকে সরে আসতে পারে না। যদিও গত মাসে ইসরাইল-ইরান যুদ্ধের সময় এই কর্মসূচির গুরুতর ক্ষতি হয়েছে। সোমবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজে প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান আরাগচি।
এদিকে ইরানের এই বক্তব্যের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফের ইরানে হামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লিখেছেন, আমি যা বলেছিলাম, তা-ই করেছি। আর প্রয়োজনে আবারো করব! পরে তিনি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের একটি খবর নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এতে বলা হয়েছিল, মার্কিন হামলা ইরানের কর্মসূচিকে মাত্র কয়েক মাসের জন্য বিলম্বিত করতে পেরেছে। তিনি সেই খবরের সাংবাদিককে বরখাস্ত করার দাবিও তোলেন।
আরাগচি বলেন, ‘ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এখন বন্ধ আছে। কারণ ক্ষতিগুলো গুরুতর ও ভয়াবহ। তবে অবশ্যই আমরা আমাদের সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি ত্যাগ করতে পারি না। এটি আমাদের বিজ্ঞানীদের এক বিশাল অর্জন। শুধু তাই নয় এটি এখন আমাদের জাতীয় গর্বের অংশ।’ সাক্ষাৎকারের শুরুতেই ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তেহরান যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সংলাপে আগ্রহী। যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে তা সরাসরি হবে না।
তিনি বলেন, ‘যদি তারা (যুক্তরাষ্ট্র) একটি উভয়ের জন্য লাভজনক সমাধানে আগ্রহী হয়, আমি আলোচনায় যুক্ত হতে প্রস্তুত।’ আরাগচি আরো বলেন, ‘আমরা যেকোনো আস্থা-গঠনের পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত, যা প্রমাণ করবে যে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ এবং চিরকাল শান্তিপূর্ণই থাকবে। ইরান কখনো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দিকে যাবে না। আর এর বিনিময়ে আমরা তাদের কাছ থেকে প্রত্যাশা করি যে, তারা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে।’
‘তাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আমার বার্তা হলো- আসুন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানে পৌঁছাই।’ আরাগচির এ মন্তব্য ফক্স নিউজে প্রচারিত একটি ১৬ মিনিটের সাক্ষাৎকারের অংশ। এটি এমন একটি সম্প্রচারমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে যা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করেন বলে কথিত আছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের পারমাণবিক কর্মসূচির একটি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব। আমরা অতীতেও একবার এটি করেছি। আমরা আবারো এটি করতে প্রস্তুত।’
যুদ্ধ শুরুর আগে ওমানের মধ্যস্থতায় তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে পাঁচ দফা পারমাণবিক আলোচনা হয়। কিন্তু ইউরেনিয়াম কতটা পরিমাণে সমৃদ্ধ করতে ইরানকে অনুমতি দেয়া হবে- সে বিষয়ে তারা একমত হতে পারেনি। ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে, ইরান এমন মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছিল, যা তাকে দ্রুত পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করার ক্ষমতা দিতে পারত। তবে তেহরান বরাবরই বলছে, তার সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি শুধু বেসামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য।
ফক্স নিউজের ‘ব্রেট বেয়ারের সাথে বিশেষ রিপোর্ট’ অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, মার্কিন ও ইসরাইলি হামলার পর ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে যে ক্ষতি হয়েছে, তা গুরুতর এবং আরো মূল্যায়ন করা হচ্ছে। আরাগচি আরো বলেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ভালো আছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ইসরাইল ১৩ জুন ইরানে হামলা চালায়। এরপর মধ্যপ্রাচ্যের এই প্রতিদ্বন্দ্বী দু’টি দেশ ১২ দিনের এক বিমানযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রও ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালায়। অবশ্য জুনের শেষদিকে একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো হয়। ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির (এনপিটি) সদস্য। তবে ইসরাইল এই চুক্তির সদস্য নয়। জাতিসঙ্ঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা বলেছে, ইরানে কোনো সক্রিয়, সমন্বিত অস্ত্র কর্মসূচির ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ’ তারা পায়নি।
তেহরান বলে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত। ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র দেশ, যার পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তারা জানিয়েছে, ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ছিল তেহরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখতে।



