হকিতে কতটুকু এগিয়েছে বাংলাদেশ

জসিম উদ্দিন রানা
Printed Edition

১৯৮২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১২ বার এশিয়া কাপ হকিতে খেলা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অর্জন পঞ্চম স্থান এবং তা একবারই। এবার ষষ্ঠ স্থানে থাকায় সরাসরি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে জায়গা হয়নি। পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজ খেলে যদি জিততে পারে তখনই মিলবে বাছাইপর্ব খেলার টিকিট। এশিয়া কাপে ভালো করার আর কোনো উপায় যেন দেখছে না বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন (বাহফে)। সেই মালেক চুন্নু-বশির-সোনা মিয়া-ইউসুফ পেরিয়ে সাদেক-কামাল-জিমি-চয়ন, এরপর মিমো-রোমান-রেজাউলে এসে চলমান থাকলেও কেউ বাংলাদেশের উত্থান ঘটাতে পারেননি।

এশিয়া কাপ হকিতে এবার বাংলাদেশের সুযোগ পাওয়াটা হঠাৎ করেই। পাকিস্তান ভারতে গিয়ে না খেলায় সুযোগ হয়ে যায়। মাত্র ১৫ দিনের কম সময় অনুশীলন করেও যে ভালো করা যায় সেটি দেখিয়েছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। চিরাচরিত নিয়মে এবারো প্র্যাকটিস ম্যাচ ছাড়া খেলতে গিয়েছে রেজাউল করিম বাবু বাহিনী। তার পরও ভারতের বিহারের রাজগিরে কাজাখস্তানের বিপক্ষে প্রাকটিস ম্যাচে ১-০ গোলের জয় চুড়ান্ত পর্বে খেলার সাহস জোগায়। মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ১-৪ গোলে হারের পর চায়নিজ তাইপেকে উড়িয়ে দেয় ৮-৩ গোলে। তবে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন কোরিয়ার বিপক্ষে হার ১-৪ গোলে। বিশ^কাপ কোয়ালিফাইং খেলার মিশনে কাজাখস্তানকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দিলেও স্থান নির্ধারণী ম্যাচে জাপানের কাছে ১-৬ গোলে হেরে ষষ্ঠ হয় বাংলাদেশ। সারা বছর আর্থিক দৈনতায় থাকা বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন (বাহফে) এর চেয়ে ভালো করার আর সুযোগ ছিল না।

রেজাউল করিম বাহিনীর পারফরম্যান্স খারাপ কিংবা হতাশার বলতে নারাজ বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের (বাহফে) কর্মকর্তারা। অতীতে শীর্ষে থাকা দলগুলোর বিপক্ষে আট-দশ গোল হজম করলেও এবার তুলনামুলক কম গোল খেয়েছে বাংলাদেশ। বরং প্রতিটি দলের বিপক্ষে একটি করে হলেও গোল করেছে। এটিই বাহফের চোখে ভালো ও আশাব্যঞ্জক। বাহফে সেক্রেটারি লে. কর্নেল (অব:) রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘আগে ডজন ডজন গোল খেত। এবার পাঁচ-ছয়টির বেশি গোল খায়নি। তা ছাড়া সব দলকেই একটি করে হলেও গোল দিয়েছে। ছেলেরা লড়তে শিখেছে, অ্যাপ্রোচ করতে শিখেছে। ভবিষ্যতে আরো ভালো করার সুযোগ রয়েছে। এরপর জানায় যদি স্থান নির্ধারণীর কথা বলেন, সেটির জন্য দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনার প্রয়োজন। আমরা সেটিও করে রেখেছি। তবে আর্থিক দৈনতায় বারবার পিছিয়ে যাই।’

যত গুড় তত মিস্টি : চয়ন

সাবেক অধিনায়ক মামুনুর রহমান চয়ন সদ্য শেষ হওয়া এশিয়া কাপে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে খুশি। তার কথায়, ‘যত গুড় তত মিষ্টি। এত কম সুযোগ সুবিধা পেয়েও হকিকে ভালোবেসে ছেলেরা নিজেদের উজাড় করে দেয়। ষষ্ঠ হয়েছে পুরো কৃতিত্বই খেলোয়াড়দের। আগের তুলনায় এবার ছেলেরা যথেষ্ট ভালো খেলেছে। প্রতিটি দলের বিপক্ষে গোল পেয়েছে। এরপর বলেন, ১৫ দিনের অনুশীলনে আর কি করবে! যারা এশিয়া কাপে ভালো করছে, তাদের দিকে দেখেন- সারা বছর প্র্যাকটিস করে, ১৪ থেকে ১৫ টা প্রাকটিস ম্যাচ খেলে, ট্যুরে যায়, সিরিজ খেলে। তারা ভালো করবে না তো আমরা করব? আমরা সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌবাহিনীর সাথে প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলে আর কতটুকু ভালো করতে পারব!’

হকি টিকে আছে এটিই তো বেশি : কামাল

বাংলাদেশ হকির লিজেন্ডারি রফিকুল ইসলাম কামাল একসময় হকি ফেডারেশনের কর্মকর্তা ছিলেন। নিজের মনমতো কাজ করার সুযোগ না পেয়ে আড়ালে চলে গিয়েছেন। যার রক্তে হকি তিনি কি আর শতভাগ ছাড়তে পারেন। টুকটাক খোঁজখবর রাখেন। এশিয়া কাপ নিয়ে তার বক্তব্য, ‘পাকিস্তান এশিয়া কাপ খেলতে অস্বীকার করেছে বিধায় বাংলাদেশ সুযোগ পেয়েছে। এখানে কোন কৃতিত্ব নেই। ওমান আসেনি তাই ষষ্ঠ হতে পেরেছে। তা না হলে সপ্তম কিংবা অষ্টম হতে হতো। বাংলাদেশ যে হকিতে এখনো টিকে আছে এটিই তো বেশি। তিনিও বললেন অল্প কয়েক দিনের প্র্যাকটিসে ছেলেরা আর কী করবে। তার পরও তারা বুক চেতিয়ে লড়াই করেছে। সাধুবাদ দিতেই হবে। সুযোগ সুবিধার তুলনায় বেশি ভালো খেলেছে। এরপর যোগ করলেন একটা বিষয় ভালো লেগেছে, আগের মতো ১০-১২ গোল হজম করতে হয়নি। আমাদের স্ট্যান্ডার্ড ওই ষষ্ঠ স্থান পর্যন্তই।’