কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে ত্রয়োদশ নির্বাচনে কে হবেন কর্ণধার

Printed Edition

আলি জামশেদ নিকলী (কিশোরগঞ্জ)

হাওরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার বলে খ্যাত নিকলী-বাজিতপুর একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী এলাকা। পর্যটন নিকলী ১৮৬৯ সালে বাজিতপুরের প্রাচীন এই পৌরসভায় জন্ম হয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) সংসদীয় আসনটি দীর্ঘদিন বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। বিএনপির দলীয় অন্তঃকোন্দলের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় নানাবিধ কারণে দীর্ঘ ৩৫ বছর পর ২০০৮ সালের অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বারের মতো মতায় আসে। পরবর্তীতে ফ্যাসিবাদী কৌশলে ২০১৪ পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে পরিণত করে নিলেও গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পরে তাদের কার্যক্রম না থাকায় রাজনীতির মেরুকরণ দেখা দিয়েছে। দলীয় কোন্দল না থাকলে পুরনো এ ঘাঁটিতে ফের বিএনপির বিজয় অনেকটাই সুনিশ্চিত বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বাজিতপুরে ১১টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা ও নিকলী উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন-১৬৬। নিকলী-বাজিতপুর উপজেলার নির্বাচন অফিসের সর্বশেষ তথ্যমতে, বাজিতপুর উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৯৪ হাজার ৬৯০ জন আর নিকলীতে এক লাখ ১৬ হাজার ৬৭৭ জন। এ আসনে সর্বমোট ভোটার তিন লাখ ১১ হাজার ৩৬৭ জন।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বাজিতপুর ও নিকলী উপজেলার সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে চলছে ভিন্ন কৌশলে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান ইকবাল এবং বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা। সৈয়দ এহসানুল হুদার বাড়িও বাজিতপুরেই।

বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্য নেতারা হলেন- বাজিতপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র এহেসান কুফিয়া, ইতালি প্রবাসী বদরুল আলম শিপু, বাজিতপুর বিএনপি নেতা জি এস মীর জলিল ও বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মামুন। উল্লেখ্য, মামুনের পিতা প্রয়াত মজিবুর রহমান মঞ্জু দুইবারের বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য ছিলেন। নিকলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট বদরুল মোমেন মিঠু। উল্লেখ্য, মিঠুর পিতাও প্রয়াত আমির উদ্দিনও তিনবারের সংসদ সদস্য ছিলেন। তবে ১৯৯৬ সালে মনোনয়ন বঞ্চিত হলে দলের বিতর্কিত অবস্থানে চলে যান। পরে এডিপিতেও যোগদান করেন। এ ছাড়াও সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক শফিকুল আলম রাজনসহ কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহসাধারণ সম্পাদক ও নিকলী উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি মাসুক মিয়ার নামও শোনা যাচ্ছে। এদিকে স্থানীয় বিএনপি নেতা হাজী মাসুদের নামও প্রচার করছেন তার অনুসারীরা। তাছাড়াও প্রচার-প্রচারণা থেকে শুরু করে নানাবিধ কারণে গুরুত্বের সাথে উঠে আসে রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুমের নাম। তার বাড়িও বাজিতপুরেই। তিনিও সংসদ সদস্য পদে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় রয়েছেন দীর্ঘদিন থেকেই। জোটে আসতে পারলেই তারও ভাগ্য বদলে যেতে পারে।

এই দিকে বিএনপির বা শরিক দলের শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আলোচনায় রয়েছে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও জেলা আমির অধ্যাপক রমজান আলী। দলমত নির্বিশেষে আলোচনা রয়েছে রমজান কিন, একজন কিন ইমেজের রাজনীতিবিদ। জামায়াত থেকে তার মনোনয়ন আগে থেকেই অনেকটা চূড়ান্ত রয়েছে। তার নির্বাচনী এলাকাতে গণসংযোগও চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সেেেত্র বিএনপির অন্তর্দ্বন্দ্ব বিরাজমান থাকলে জামায়াতে ইসলামীও চমক দেখাতে পারেন বলে জানান বিশ্লেষকরা।