পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে ট্রেন হাইজ্যাকের ঘটনায় নিরাপত্তাবাহিনী এখন পর্যন্ত ১৯০ জন যাত্রীকে উদ্ধার করেছে। বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত চলা অভিযানে সংঘর্ষে নিহত হয়েছে অন্তত ৩৩ হামলাকারী। এ ঘটনায় ভারতকে দায়ী করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। পাকিস্তানের দাবি, হামলাকারীরা ভারতের মদদপুষ্ট বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সদস্য। গত মঙ্গলবার বেলুচিস্তানের এক প্রত্যন্ত এলাকায় কোয়েটা থেকে রাওয়ালপিন্ডিগামী একটি ট্রেনে আক্রমণ করে নিষিদ্ধঘোষিত বিদ্রোহী গোষ্ঠী বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। হামলাকারীরা ট্রেন থামিয়ে যাত্রীদের বন্দী করে এবং পরিচয় যাচাই করে কয়েকজনকে হত্যা করে।
সেনাবাহিনী জানিয়েছে, স্বশস্ত্র গোষ্ঠীর কয়েকজন পালিয়ে গেছে, যাদের ধরতে অভিযান চলছে। পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় ও প্রাকৃতিক সম্পদসমৃদ্ধ প্রদেশ বেলুচিস্তান দীর্ঘ দিন ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল। বেলুচ সম্প্রদায়ের অনেকেই অভিযোগ করেন যে, কেন্দ্র সরকার তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করছে, যদিও ইসলামাবাদ এ অভিযোগ অস্বীকার করে। এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, তুরস্ক, ইরান ও ব্রিটেনসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এই ঘৃণ্য ও কাপুরুষোচিত সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’
শুক্রবার ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমদ শরিফ দাবি করেন, ‘বেলুচিস্তানে এই হামলা ও অন্যান্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রধান মদদদাতা পূর্ব প্রতিবেশী দেশ’, ইঙ্গিত ছিল ভারতের দিকে। তবে তিনি এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেননি। এ দিকে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি বলেছেন, ‘আমাদের কাছে ভারতের সংশ্লিষ্টতার অকাট্য প্রমাণ রয়েছে।’ তবে তিনিও কোনো বিস্তারিত তথ্য দেননি।
ভারত সরকার পাকিস্তানের অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘আমরা এই ভিত্তিহীন অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।’ পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরো দাবি করেছে যে, হামলাকারীরা আফগানিস্তান থেকে পরিচালিত হচ্ছিল এবং সেখানে তাদের ‘হ্যান্ডলার’ ছিল। তবে কাবুল এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, বিএলএ’র কোনো কার্যক্রম আফগানিস্তানে নেই।
পাকিস্তানের নিরাপত্তাবাহিনী জানিয়েছে, কয়েকজন হামলাকারী পালিয়ে গেছে এবং তাদের ধরতে অভিযান চলছে। সেনাবাহিনীর দাবি, নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগই যাত্রীদের নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য ছিলেন। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘ দিনের বৈরী সম্পর্ক থাকলেও এই হামলার পর কূটনৈতিক উত্তেজনা আরো বেড়েছে।



