জাতীয় কবিতা পরিষদের নিয়মিত কবিতা পাঠ ও আলোচনা অনুষ্ঠানের ৫১তম আয়োজন মঙ্গলবার, বিকেলে ইস্কাটন গার্ডেন রোডের ‘কাজল মিলনায়তন’-এ অনুষ্ঠিত হয়। এবারের কবিতা পাঠ ও আলোচনা অনুষ্ঠানটি সংগঠনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে নিবেদন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান। বিশেষ অতি ছিলেন রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ছোট ভাই চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা: সাইফুল্লাহ্।
অনুষ্ঠানে কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে নিয়ে আলোচনায় অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, আমার জীবনের প্রথম প্রেম রাজনীতি এবং শেষ প্রেমও রাজনীতি। এই রাজনৈতিক জীবনের ভাঙা-গড়া, উত্থান-পতন রয়েছে। এই ক্ষেত্রে যারা অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও কবি মোহন রায়হান অন্যতম। আমি যখন ক্লাস এইটের ছাত্র তখন কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ‘বাতাসে লাশের গন্ধ’ কবিতাটি আমার রক্তে আগুন জ্বেলে দেয়। কবি মোহন রায়হানের রাউফুন বসুনিয়াকে নিয়ে লেখা কবিতাটিও আমাকে ভীষণভাবে আন্দোলিত করে। তিনি বলেন, আমি চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় বিশ ঘণ্টা কাজ করি। কাজ করতে করতে যখন মাথা জ্যাম হয়ে যায় তখন রুদ্রের কবিতা পড়ি বা হেলাল হাফিজের কবিতা পড়ি এবং বিভিন্ন কবি সাহিত্যিকদের লেখা পড়ার চেষ্টা করি। তিনি আরো বলেন, ‘রুদ্র আমার কাছে গর্বের, রুদ্র আমার কাছে অহঙ্কারের। রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ তার সাহিত্যে শব্দের ব্যবহার এমনভাবে করেছেন, এমন শব্দ চয়ন করেছেন যা পড়লে শরীর, মন ও রক্তে মাতম ধরিয়ে দেয়। রুদ্র বেঁচে থাকবেন, রুদ্র মরে না, রুদ্ররা মরে না।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডা: সাইফুল্লাহ বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধে আমার বাবাকে ধরে নিয়ে যায়। বাবার অনেক স্বপ্ন ছিল রুদ্র ভাই ডাক্তার হবেন। কিন্তু তিনি ডাক্তার না হয়ে সাহিত্যকেই বেছে নিলেন। এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে খুব ভালো ফলাফল করেছিলেন। হঠাৎ এইচএসসিতে গিয়ে তিনি বিজ্ঞান থেকে কলা অনুষদে ভর্তি হলেন কবি হবেন বলে। সাহিত্য তাকে এমনইভাবে আঁকড়ে ধরেছিল যে, তিনি সাহিত্য ছাড়া অন্য কিছু বুঝতে চাইতেন না। কবিতা লিখতে শুরু করলেন। খুব তাড়াতাড়ি নিজেকে কবি হিসেবে পরিচয় করাতে পেরেছিলেন। ফলে বড় ভাই ডাক্তার না হওয়ার কারণে আমার উপর ডাক্তার হওয়ার দায়িত্ব পড়ে।
রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর বন্ধু কবি তুষার দাশ বলেন, সত্তর দশক ও আশির দশকে রুদ্রের সাথে আমার অনেক স্মৃতি রয়েছে। রুদ্রের সাথে যারা ভালো কবিতা লিখেছেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ আজও বেঁচে আছেন। কিন্তু রুদ্র এমন একটা আবহ তৈরি করতো, এমন একটা নৈকট্য তৈরি করতো, এমন একটা স্বজন বোধের জায়গা তৈরি করতো যে রুদ্রকে ভুলে থাকা মুশকিল। রুদ্রের মধ্যে সারল্য ও মাতৃত্বের মমতা ছিল। তিনি তার বন্ধুদের সাথে ধ্যানে নিমগ্ন হতে চেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে জীবনের অন্তিম ধ্যানে নিমগ্ন হয়ে পৃথিবী ছেড়ে চিরবিদায় নিলেন।
স্বাগত বক্তব্যে জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি মোহন রায়হান বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যে দুটি ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও ‘জাতীয় কবিতা পরিষদ’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিল রুদ্র। তিনি তৎকালীন পাকিস্তানি শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছিল তার উপনিবেশ বিরোধী চেতনার মধ্য দিয়ে। তার সাথে অনেক স্মৃতি-বিস্মৃতি আছে, অনেক দুঃখ-বেদনা-বিরহ, আনন্দ ও সুখের স্মৃতি রয়েছে। তার জন্মদিনকে স্মরণ করে আজকের অনুষ্ঠানটি করতে পেরে খুব ভালো লাগছে।
অনুষ্ঠানে কবি মোহন রায়হান, রেজাউদ্দিন স্টালিন, তুষার দাশ, লিলি হক, গোলাম শফিক, মনজুরুর রহমান, কামার ফরিদ, শ্যামল জাকারিয়া, এ বি এম সোহেল রশিদ, নূরুন্নবী সোহেল, তপন রায়, ক্যামেলিয়া আহমেদ, আসাদ কাজলসহ সত্তর জন কবি স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন। অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন ছায়ানটের ছাত্রী পুষ্টিবিদ মিশু দাস ও কবি ফারহান উদ্দিন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন মনিরুজ্জামান রোহান ও শিমুল পারভীন। বিজ্ঞপ্তি।



