চলনবিলের পতনমুখ বুড়ি পোতাজিয়া এলাকায় মিলিত হয়েছে শতাধিক খালবিল, বড়ালনদসহ অর্ধশতাধিক নদীর পানি। এটি মূলত চলনবিল ও যমুনার পানির সংযোগস্থল। এখানে মাটি ভরাট করে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ হলে পানি প্রবাহ ব্যাহত হয়ে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে চলনবিল। বাঘাবাড়ি নৌবন্দরও বন্ধের আশঙ্কায় থাকবে। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনা না করেই সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের বুড়ি পোতাজিয়ায় স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন। তাই চলনবিলকে বাঁচিয়ে বিকল্প স্থানে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস স্থাপন করা হোক- এটাই সবার প্রত্যাশা। গতকাল শুক্রবার বড়াইগ্রাম উপজেলা প্রেস ক্লাবে ‘চলনবিলে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ : ঝুঁকি ও বিকল্প পরিকল্পনা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন বক্তারা।
চলনবিল রক্ষা আন্দোলন ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) বড়াইগ্রাম উপজেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চলনবিল রক্ষা আন্দোলনের সদস্যসচিব ও বাপার কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম মিজানুর রহমান।
এতে সভাপতিত্ব করেন বড়াইগ্রাম উপজেলা প্রেস ক্লাব সভাপতি অহিদুল হক। আব্দুল আউয়াল মণ্ডলের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন চলনবিল প্রেস ক্লাব সভাপতি আলী আক্কাছ, জুলাই যোদ্ধা শেখ জাবের আল শিহাব, সাংবাদিক আব্দুল মান্নান, হাসানুল বান্না উজ্জ্বল, পিকেএম আব্দুল বারী, দেলোয়ার হোসেন লাইফ, আবু মুসা ও নাহিদুল ইসলাম।
মূল প্রবন্ধে এস এম মিজানুর রহমান বলেন, চলনবিলের শাহজাদপুর উপজেলার বুড়ি পোতাজিয়া এলাকায় ১০০ একর জায়গায় ৯-১৪ মিটার উচ্চতার বালু ভরাট করে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যার নির্মাণ ব্যয় ৯৬৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে শুধু বালি ভরাটের জন্যই ৪৪৮ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে। অথচ পার্শ্ববর্তী শাহজাদপুর রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি বা অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য বরাদ্দ করা এক হাজার ১৫৬ একর জমির ওপর অনেক কম খরচে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করা সম্ভব। এতে সরকারের খরচও কমবে, আবার বাঘাবাড়ি নৌবন্দরসহ চলনবিলও রক্ষা পাবে।
সভায় বক্তারা বলেন, ‘বিল ভরাট করা ২০০০ সালের জলাশয় রক্ষা আইনের বিরোধী এবং ২০১৩ সালের পানি আইনের সাথে সাংঘর্ষিক। পানি আইনের ২০ ধারায় স্পষ্টভাবে পানিপ্রবাহ বন্ধ করে সব ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা নিষিদ্ধ। এ ছাড়া দেশের উচ্চ আদালত নদ-নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নির্মাণের সাথে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু তা হতে হবে চলনবিল ও প্রকৃতিকে রক্ষা করে।’



