তপুর বিকল্প আরেক তপু

রফিকুল হায়দার ফরহাদ
Printed Edition
অনুশীলনে শাকিল আহাদ তপুর পেছনে তপু বর্মণ
অনুশীলনে শাকিল আহাদ তপুর পেছনে তপু বর্মণ |ফাইল ছবি

ক্যাম্পের আগেই বাদ দেয়া দুই স্টপার ব্যাক ইয়াসিন খান ও মেহেদী হাসানকে। ইনজুরির জন্য দলে নেই বিশ্বনাথ ঘোষ। এরই মধ্যে ভারতের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচে ২২ মিনিটে ইনজুরির জন্য মাঠ ছাড়েন অধিনায়ক তপু বর্মণ। প্রতিপক্ষ দলে সুনীল ছেত্রীর মতো অভিজ্ঞ ও কুশলী স্ট্রাইকারের উপস্থিতি। ২৫ মার্চ মেঘালয়ের শিলংয়ের মাঠে ডিফেন্ডার তপুর এই চোট বেশ বেকাদায় ফেলে দেয় হাভিয়ার কাবরেরাকে। তবে কোচের মতো পুরো বাংলাদেশীদের শেষ পর্যন্ত টেনশন মুক্ত রাখেন আরেক জন। তিনি আরেক তপু। শাকিল আহাদ তপু। আগে যার মালদ্বীপের বিপক্ষে দুই ফিফা প্রীতিম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা। এ ছাড়া অনূর্ধ্ব-২০ জাতীয় দলের জার্সিতে সাফ এবং এএফসির আসরে খেলা অভিজ্ঞতা। সেই জুনিয়র তপুই অন্যদের সাথে নিয়ে নিচ্ছিদ্র রাখেন বাংলাদেশ দলের পোস্ট। ফলে ড্র এবং ১ পয়েন্ট দিয়ে এবারের এশিয়ান কাপ বাছাই পর্ব শুরু করা লাল-সবুজদের।

গত বছর অনূর্ধ্ব-২০ সাফের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ছিলেন শাকিল আহাদ তপু। বাগেরহাটের এই সন্তান সে আসরে সব ম্যাচ খেলেছেন। এরই পুরস্কারস্বরূপ ডাক পান ভুটানের বিপক্ষে জাতীয় দলের দুই ফিফা প্রীতিম্যাচের স্কোয়াডে। তবে খেলা হয়নি কোনো ম্যাচ। ভুটান থেকে ফেরার পর খেলতে চলে যান ভিয়েতনামে এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ ফুটবল খেলতে। সেখানেই মারুফুল হকের দলের সেরা একাদশের নিয়মিত সদস্য ছিলেন বিকেএসপির সাবেক এই ছাত্র। ভিয়েতনাম থেকে ফেরার পর তাকে মালদ্বীপের বিপক্ষে দুই ফিফা প্রীতিম্যাচে স্কোয়াডে ডাকেন কোচ কাবরেরা। কিংস এরিনায় সেই দুই ম্যাচেই জাতীয় দলের হয়ে পুরো ৯০ মিনিট খেলেন তপু। সেই ধারাক্রমে এবার ভারতের বিপক্ষে খেললেন পুরোটা সময়। নিষ্ক্রিয় করে রাখেন সুনীল ছেত্রীসহ অন্য ফরোয়ার্ডদের।

দুই সিজন ধরে মোহামেডানে খেলছেন শাকিল আহাদ তপু। গতকাল রোজা রেখেই জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুশীলন করেন তিনি। পরে এই ক্লান্ত শরীর নিয়েই ক্লাব প্রাঙ্গণে কথা বলেন ১৮ বছরের এই উঠতি প্রতিভা। ভারতের বিপক্ষে নিজের পরফরম্যান্স নিয়ে বলেন, ‘প্রথমে একটু নার্ভাস ছিলাম। ভয় লাগছিল। পরে অবশ্য হামজা ভাই, তারিক ভাইয়ের উৎসাহে সব ঠিক হয়ে যায়। মাঠে হামজা ভাই দারুণভাবে গাইড করেছেন। ফলে কোচ আমাকে যেভাবে খেলতে বলেছিলেন তা পালন করতে সক্ষম হই।’ জানান, ‘হামজা ভাই বলেছেন, তোমাকে কোচ যে দায়িত্ব দিয়েছে তা পালন করো। বাকিটা মাঠে দেখা যাবে।’ আরো যোগ করেন, ‘যেহেতু মালদ্বীপের বিপক্ষে আগে দু’টি ম্যাচে আমি পুরো ৯০ মিনিট খেলেছিলাম তাই ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামার সময় আত্মবিশ্বাসটা ছিল।’ সেই ম্যাচ নিয়ে জুনিয়র তপুর প্রতিক্রিয়া, সবার সমর্থনে ভালো খেলতে পেরেছি। ভারতের মাঠে তাদের বিপক্ষে খেলাটা কঠিন। সেই ম্যাচ আমরা ড্র করতে পেরেছি। এই ম্যাচই এখন পর্যন্ত আমার ক্যারিয়ারে স্মরণীয়। আর খেলার সময় গোললাইন থেকে একটি সেভ করেছিলাম। তা বারবারই আমার মনে পড়ছে।’ তপু আরো জানান, ‘অনূর্ধ্ব-২০ সাফেও ভারতের বিপক্ষে সেমিফাইনালে ম্যাচ খেলেছিলাম। এবার খেললাম সিনিয়র দলের বিপক্ষে।’

সিনিয়র তপুর ইনজুরির পর জুনিয়র তপুকে রাইট ব্যাক পজিশন থেকে স্টপার ব্যাক পজিশনে নিয়ে আসা হয়। তরুণ ফুটবলার তপু জানান, আমি মোহামেডানেও রাইট ব্যাক পজিশনে খেলেছিলাম। তবে আমার পছন্দের স্থান স্টপার ব্যাক। আগেও এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলাম, আমি যদি আমরা প্রিয় পজিশনে খেলতে পারি তাহলে সেরাটাই দেয়ার চেষ্টা করব। ফলে তপু দা ইনজুরিতে পড়ার পর কোচ আমাকে স্টপার ব্যাক পজিশনে নিয়ে আসে। আমিও তখন আমাকে প্রমানের চেষ্টা করেছি। বাকি উপরওয়ালার সহায়তায় ভারতের কাছ থেকে ১ পয়েন্ট আনতে সক্ষম হয়েছি।’ বললেন, মালদ্বীপের বিপক্ষে দুই ম্যাচেও প্রথম একাদশে ছিলাম স্টপার ব্যাক পজিশনে।

জাতীয় দলে টানা তিন ম্যাচে মূল একাদশে খেললেন শাকিল তপু। তবে বিপিএল ক্লাব ফুটবলে এখন সব ম্যাচে তিনি একাদশে চান্স পান না। তথ্য দিলে, গত বছর স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে মোহামেডানের জার্সিতে বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে মূল একাদশে ছিলাম। বাকি কয়েক ম্যাচে বদলি হিসেবে খেলেছি। এবার ছয় ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়েছে। এর মধ্যে বসুন্ধরা কিং, ওয়ান্ডারার্স ও চট্টগ্রাম আবাহনীর বিপক্ষে (দু’বার) এই চার খেলায় একাদশে ছিলাম।

অনেক দিন ধরেই তপুর স্বপ্ন ছিল সিনিয়র তপুর সাথে লাল-সবুজ জার্সিতে এক সাথে খেলা। সেই স্বপ্নও পূরণ হয়েছিল মালদ্বীপের বিপক্ষে। জানান, ‘তখন তপু দা আমাকে অনেক সাপোর্ট করেছিল।’ বর্তমানে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটিতে পড়া এই ফুটবলারেও টার্গেট বড় তপুর মতো সেট পিচে গোল করা। সেট পিচের সময় তিনিও গোল করতে উপরে উঠেন। জাতীয় দলে না পারলেও বিসিএলে উত্তরা এফসির হয়ে একটি গোল করেছেন, তা সেট পিচে হেডের মাধ্যমে।

২০১৮ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার আগে কস্ট করেই ফুটবল খেলতে হয়েছিল। পরিবার থেকে সমর্থন পেতেন না। তাই স্কুলের বন্ধুর ধার দেয়া বুট পরে খেলেছেন। এরপর পঞ্চম শ্রেণীতে উপবৃত্তি পাওয়ার পর সেই টাকা দিয়ে বুট কিনেছেন। এখন অবশ্য পরিবার থেকে মিলছে পূর্ণ সমর্থন। মামাতো ভাই শিমুলের হাত ধরেই ফুটবলে আসা। এখন এই উঠতি ডিফেন্ডারের লক্ষ্য হারিয়ে না গিয়ে জাতীয় দলকে লম্বা সময় ধরে সার্ভিস দেয়া। জানান, ‘যেহেতু ভারতের বিপক্ষে দারুণ খেলেছি, তাই অনেক দিন ধরেই জাতীয় দলে খেলতে চাই।’