রাজধানীতে প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার পিঠা বিক্রি হয়। প্রায় শতাধিক ধরনের পিঠার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় ভাপা ও চিতই পিঠা। প্রতি বছর শীত মৌসুমে পিঠার এমন বিক্রি বেড়ে যায় বলে জানিয়েছেন একাধিক বিক্রেতা। তবে অনুমাননির্ভর হিসাবে কোটি টাকা হলেও বিক্রেতাদের ভাষ্য, বাস্তবে বিক্রি আরো বেশি।
বিক্রেতারা জানান, ঢাকায় বর্তমানে পেশাদার পিঠা বিক্রেতা শতাধিক হলেও মৌসুমি বিক্রেতা ১০ হাজারের কম না। সে হিসাবে একজন বিক্রেতা প্রতিদিন কমপক্ষে ২০০ ভাপা ও চিতই বিক্রি করেন। চিতই ১০ টাকা এবং ভাপা ১৫ টাকা করে হলে ১০ হাজার বিক্রেতা দিনে প্রায় দুই লাখ পিঠা বিক্রি করেন, যার মোট মূল্য হয় ২৫ লাখ টাকা। বাকিগুলোর প্রতিটির দাম সর্বনিম্ন ৩০ টাকা থেকে ১২০ টাকা। সে হিসাবে সবমিলে পিঠা বিক্রি দিনে কোটি টাকার কম হবে না।
ক্রেতাদের ভাষ্য, যান্ত্রিক সভ্যতার এই ইট-কাঠের নগরীতে প্রাচীন সংস্কৃতির কদর কমলেও পিঠার চাহিদা কমেনি। তাই প্রতি বছর শীতের আগমনে নগরজুড়ে চলে পিঠাপুলির উৎসব। নগরের প্রধান সড়কের ফুটপাথ, অলিগলি, বিনোদন স্পট- সর্বত্রই বসে গরম গরম চিতই, ভাপা আর তেলের পিঠা পিঠার মেলা।
অপেশাদার বিক্রেতারা ১০ থেকে ১৫ টাকায় চিতই ভাপা বিক্রি করলেও পেশাদার ব্যবসায়ী চিতই, ভাপা আর তেলের পিঠার বাইরে সর্বনিম্ন ৩০ টাকা থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত অন্যান্য পিঠা বিক্রি করেন। যার মধ্যে অন্যতম দুধে ভেজানো চিতই ১০০ টাকা, ক্ষীর পাটিসাপটা ৮০, সুন্দরী পাকন ৫০, নকশি পিঠা ৭০, রসভরি ৮০, লবঙ্গ লতিকা ৫০, নারকেল পুলি ৫০, মালপোয়া ৫০, ঝাল পোয়া ৪০, ভাপের পুলি ৭০, চুই পিঠা ১২০, ছিটা রুটি ৩০ টাকা। এ ছাড়া রয়েছে দুধ চিতই, ঝাল পিঠা, মালপোয়া, মেড়া পিঠা, মালাই পিঠা, মুঠি পিঠা, আন্দশা, কুলশি, কাটা পিঠা, কলা পিঠা, খেজুরের পিঠা, ক্ষীরকুলি, গোকুল পিঠা, গোলাপ ফুল পিঠা, লবঙ্গ লতিকা, রসফুল পিঠা, সুন্দরী পাকান, সরভাজা, পুলি পিঠা, পাতা পিঠা, পাটিসাপটা, পাকান পিঠা, নারকেলের সেদ্ধ পুলি, নারকেল জিলাপি, তেজপাতা পিঠা, তেলের পিঠা, তেলপোয়া পিঠা, চাঁদ পাকান পিঠা, ছিট পিঠা, পানতোয়া, জামদানি পিঠা, হাঁড়ি পিঠা, ঝালপোয়া পিঠা, ঝুরি পিঠা, ছাঁচ পিঠা, ছিটকা পিঠা, বিবিখানা, চুটকি পিঠা, চাপড়ি পিঠা, ঝিনুক পিঠা, সূর্যমুখী পিঠা, ফুল পিঠা, বিবিয়ানা পিঠা, সেমাই পিঠা, নকশি পিঠা, নারকেল পিঠা, নারকেলের ভাজা পুলি, দুধরাজ ও ফুলঝুরিসহ শতাধিক ধরনের পিঠা।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, খেজুর বা আখের গুড় দিয়ে ভাপা আর তেলের পিঠা ছাড়াও বিক্রি হচ্ছে চিতই, ডিম পিঠা আর ঝাল পিঠা। এর সাথে যুক্ত হয়েছে ভর্তার বৈচিত্র্য। যে দোকানে নানা পদের বৈচিত্র্যময় ভর্তা পাওয়া যায় সেই দোকানেই বিক্রি বেশি।
একাধিক বিক্রেতা জানান, রাজধানীতে শীতের গরম পিঠার জনপ্রিয়তা দিনকেদিন বেড়েই চলেছে। নগরের বিভিন্ন এলাকার ফুটপাথে মৌসুমি পিঠাপুলির দোকানে ক্রেতাদের ভিড়ই তার বড় প্রমাণ। তাই শীত এলেই তারা সন্ধ্যায় পিঠা বিক্রি করেন। চিতই পিঠার সাথে সর্ষে, ধনে পাতা ও শুঁটকি ভর্তার পাশাপাশি আট থেকে ১০ ধরনের ভর্তা ফ্রিতে দেয়া হয়। প্রতিদিন প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার টাকার পিঠা বিক্রি হয়। এর মধ্যে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা লাভ থাকে।
শিল্পকলার সামনে পিঠা বিক্রেতা ইদ্রিস জানান, শীতের মৌসুমে পিঠা বিক্রির ওপর নির্ভর করেই বহু পরিবার সংসার চালাচ্ছে। অনেকে অন্য কাজ করলেও সন্ধ্যায় অবসর সময়ে পিঠা বিক্রি করেন। এতে প্রতিদিন দুই থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। তার মতো এলাকার অলিগলিতে পিঠা বিক্রি করছেন আরো অনেকে। এসব পিঠার মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে চিতই পিঠা। তবে অনেকে ক্রেতাদের চাহিদার কারণে পিঠার সাথে হাঁসের ও গরুর গোশত বিক্রি করেন।
এ দিকে ঢাকার গোল্ডেন টিউলিপ দ্য গ্র্যান্ডমার্ক শীতের ঐতিহ্যবাহী পিঠার আয়োজন করছে ‘পৌষ পার্বণ শীতের ঐতিহ্যের স্বাদ’ শীর্ষক বিশেষ প্রমোশনে। ডিসেম্বরের ১ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত চলবে এই উৎসব।
আয়োজকরা জানান, গোল্ডেন ডাইন রেস্তোরাঁর লাইভ কুকিং স্টেশনে অতিথিরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পিঠার স্বাদ পাবেন। ভাপা পিঠার মিষ্টি গন্ধ, তেলেভাজা পিঠার কড়কড়ে আওয়াজ এবং পাটিসাপটার সোনালি রঙ মিলিয়ে হবে এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। পরিবেশন করা হবে দুধ চিতই পিঠা, নারকেলের পিঠা, নকশি পিঠা, পুলি পিঠাসহ আরো অনেক ঐতিহ্যবাহী পিঠা।



