জাতিগত নিধনের ৮ বছরেও বদলায়নি রোহিঙ্গাদের ভাগ্য

কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার সরকারের সাথে বাংলাদেশের চুক্তি হলেও আট বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।

কূটনৈতিক প্রতিবেদক
Printed Edition
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ঢল
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ঢল |ফাইল ফটো

জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার আট বছর পরও মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। বরং গেল বছর থেকে রাখাইন রাজ্যের দখল নিতে বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মির সাথে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্ঘাতের মধ্যে পড়ে রোহিঙ্গাদের অবস্থা আরো নাজুক হয়ে গেছে। মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর পর এখন রাখাইন রাজ্যের বেশির ভাগ দখলে নেয়া আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের ওপর নতুন করে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। তাদের অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে নতুন করে দেড় লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসঙ্ঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। এ ছাড়া আরো হাজারো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পাড়ি দেয়ার জন্য সীমান্তে জড়ো হচ্ছে বলে খরব পাওয়া যাচ্ছে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার সরকারের সাথে বাংলাদেশের চুক্তি হলেও আট বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ইউএসএইডের কার্যক্রম প্রায় বন্ধ গেছে। রোহিঙ্গাদের মানবিক সেবা দেয়ার সাথে জড়িত ইউএসএইড সংশ্লিষ্ট এনজিওগুলো তাদের কার্যক্রম সীমিত বা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। ইউক্রেন, গাজাসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সঙ্ঘাতের কারণে রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক তহবিলও আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে। এই অবস্থায় নতুন করে আসা রোহিঙ্গারা পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করে তুলেছে। চলমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা সঙ্কটের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে গতকাল কক্সবাজারে তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু হয়েছে। আজ সোমবার এতে যোগ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সম্মেলনে দেশী-বিদেশী আমন্ত্রিত অতিথি, বিশেষজ্ঞ ও রোহিঙ্গাদের মতামতের ভিত্তিতে সরকার একটি অবস্থানপত্র তৈরি করবে। আগামী সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ অধিবেশনের সাইড লাইনে অনুষ্ঠেয় রোহিঙ্গাবিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনে বাংলাদেশ এই অবস্থানপত্র উত্থাপন করবে। জাতিসঙ্ঘ সম্মেলনে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধান, মানবিক তহবিল সংগ্রহ ও রাখাইনে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে। এ ছাড়া আগামী ডিসেম্বরে কাতারের রাজধানী দোহায় রোহিঙ্গাবিষয়ক অপর একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে পরিচালিত মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর পরিকল্পিত নিধনযজ্ঞের কারণে বাংলাদেশ অভিমুখে রোহিঙ্গাদের জনস্রোতের আট বছর পর পরিস্থিতি আরো অবনতির দিকে যাচ্ছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসঙ্ঘ। গত শুক্রবার জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এক বিবৃতিতে জানান, মিয়ানমারের ভেতরে থাকা এবং বিদেশে নির্বাসিত উভয় রোহিঙ্গারাই দিন দিন এক ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন। আট বছর পরও তারা আরো অবনতিশীল পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন। চলমান সহিংসতার কারণে আরো বেশি রোহিঙ্গা দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। তাদের অনেকেই বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছেন। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে মিয়ানমার থেকে যাওয়া ১১ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষ বসবাস করছেন।

ডুজারিক সতর্ক করে বলেন, এই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ থেকে রোহিঙ্গাদের জোর করে ফেরত পাঠানো বা সীমান্তে বাধা দেয়ার মতো ঘটনা ঘটছে, যা আন্তর্জাতিক নীতি লঙ্ঘনের গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করছে এবং শরণার্থীদের আশ্রয়ের সুযোগ সঙ্কুচিত করছে। তহবিল সঙ্কটের কারণে রোহিঙ্গাদের শিক্ষা, খাদ্যসহায়তা, স্বাস্থ্যসেবা, জীবনধারণের সুযোগ এবং সুরক্ষা পরিষেবাগুলো মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

মুখপাত্র জানান, জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস আন্তর্জাতিক মানবাধিকার, মানবিক ও শরণার্থী আইন অনুযায়ী সব বেসামরিক নাগরিককে সুরক্ষা দেয়ার জন্য তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। এ বছরের শুরুতে গুতেরেস কক্সবাজার সফর করে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করেছেন। মহাসচিব সেখানে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সহনশীলতা দেখেছেন এবং আন্তর্জাতিক সংহতি জোরদার ও সমর্থন বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।

স্টিফেন ডুজারেক বলেন, এই সঙ্কটের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে একটি ব্যাপক রাজনৈতিক সমাধানের পথে হাঁটতে হবে, যেখানে রোহিঙ্গাদের অর্থপূর্ণ অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা যায়। জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের নির্দেশনায় আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সংখ্যালঘু বিষয়ে যে উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তা একটি স্থায়ী সমাধানের প্রয়োজনীয়তার দিকে বিশ্বের মনোযোগ ফেরাতে সাহায্য করবে।

জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত সহিংসতা বন্ধের লক্ষ্যে সব পক্ষের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন উল্লেখ করে মুখপাত্র বলেন, তিনি মিয়ানমারের নেতৃত্বে একটি কার্যকর রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন, যা রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে, মর্যাদার সাথে টেকসই প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করবে।

অপর এক বিবৃতিতে মানবাধিকারবিষয়ক জাতিসঙ্ঘের হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেছেন, দায়মুক্তির সুযোগ নিয়ে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনী ও আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের ওপর অব্যাহতভাবে নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে। এটি আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের (আইসিজে) অন্তর্বর্তী পদক্ষেপের আদেশ এবং আন্তর্জাতিক আইনের সরাসরি লঙ্ঘন। তিনি বলেন, সহিংসতার চক্র ভাঙতে দায়মুক্তির অবসান এবং রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপত্তা, সমতা ও নাগরিকত্বের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আন্তর্জাতিক মানবিক তহবিল সঙ্কটের কারণে মিয়ানমার ও বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্যসহায়তার ব্যাপক কাটছাঁট করা হয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরো নজুক করে তুলেছে।

বিবৃতিতে জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার প্রধান রোহিঙ্গাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণের জন্য মানবিক তহবিল বাড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি একই সাথে রোহিঙ্গাদের গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক সমর্থন চেয়েছেন।

কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু

উখিয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা জানান, রোহিঙ্গা সঙ্কটের টেকসই সমাধানে সুস্পষ্ট সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে কক্সবাজারে গতকাল শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন। এ সম্মেলন আগামী ২৬ আগস্ট মঙ্গলবার পর্যন্ত চলবে।

স্টেকহোল্ডারস ডায়ালগ : টেকঅ্যাওয়ে টু দ্য হাই-লেভেল কনফারেন্স অন দ্য রোহিঙ্গা সিচুয়েশন’ শীর্ষক এ সম্মেলন আয়োজন করেছে রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভের কার্যালয় এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) আসন্ন ৮০তম অধিবেশনের ফাঁকে অনুষ্ঠিতব্য উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের আগে এ সম্মেলনের গুরুত্ব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

উখিয়ার ইনানীতে সেনাবাহিনী পরিচালিত হোটেল বে ওয়াচে (অনুষ্ঠানরত) এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করছেন ৪০টি দেশের কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ, বিভিন্ন দেশের শিাবিদ, বৈশ্বিক সংস্থা ও রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা।

সংলাপের প্রথম দিনের কার্যক্রমে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের সাথে বিশেষ ইন্টার-অ্যাকটিভ সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য আস্থা গড়ে তোলার উপায় নিয়ে আলোচনা হয়।

কক্সবাজারের বিভিন্ন শিবির থেকে আগত রোহিঙ্গা প্রতিনিধি এবং প্রবাসী রোহিঙ্গাদের সাথে রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম এ সেশনে অংশ নেন।

সেশনটি পরিচালনা করেন রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ লাকি করিম, মোহাম্মদ রফিক (খিন মৌং) ও ওমর সালমা। এতে বক্তব্য রাখেন সয়েদুল্লাহ, ফুরকান মির্জা, আবদুল্লাহ, হুজ্জাউত উল্লাহ, সহাত জিয়া হিরো, আবদুল আমিন, জাইতুন নারা, জিহিন নূর, আবদুল্লাহ এবং রো মুজিফ খান। রোহিঙ্গা প্রবাসী সদস্যরাও তাদের অভিমত ব্যক্ত করেন।

মিয়ানমারে জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত বিশেষ দূত থমাস এইচ অ্যান্ড্রুজও এ সেশনে যোগ দেন। এ ছাড়া অংশ নেন বাংলাদেশে জাতিসঙ্ঘের আবাসিক সমন্বয়ক (ভারপ্রাপ্ত) রানা ফ্লাওয়ারস, মিয়ানমারের জন্য স্বাধীন তদন্ত সংস্থার প্রধান নিকোলাস কৌমজিয়ান এবং ইউএনএইচসিআরের সহকারী হাইকমিশনার রাউফ মাজুও। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং গণ অধিকার পরিষদসহ প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা, সংবাদমাধ্যম কর্মীরাও এ সংলাপে অংশগ্রহণ করেন। তবে এই সেশনটি রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের জন্য নির্ধারিত থাকায় অন্য অংশগ্রহণকারীরা কেবল পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

তিন দিনের আন্তর্জাতিক স্টেকহোল্ডার সংলাপ থেকে প্রাপ্ত সুপারিশগুলো নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনে ইনপুট হিসেবে উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম।

তিনি বলেন, ‘এই সংলাপ মূলত সেপ্টেম্বরের বৈঠকের প্রস্তুতিমূলক ধাপ হিসেবে আয়োজন করা হয়েছে। এর বিশেষ তাৎপর্য হলো রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সরাসরি অংশগ্রহণ। তারা এখানে তাদের আশা-আকাক্সক্ষা, হতাশা এবং ভবিষ্যৎ প্রত্যাশার কথা জানাবেন। এই মতামত ও আলোচনা নিউইয়র্ক সম্মেলনের আলোচনায় প্রতিফলিত হবে।’

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সংলাপ শেষে একটি ‘চেয়ার’স সামারি’ তৈরি করা হবে। এই নথিতে আলোচনার মূল সারমর্ম ও সুপারিশগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এটি নিউইয়র্ক সম্মেলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আউটপুট ডকুমেন্ট হিসেবে কাজ করবে।

মানবিক সহায়তার জরুরি প্রয়োজনীয়তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সহায়তা না পেলে যে মানবিক দুর্যোগ সৃষ্টি হবে, তা আমরা এই সংলাপে জোরালোভাবে তুলে ধরছি। বর্তমানে যারা সহায়তা করছেন, তাদের পাশাপাশি নতুন উৎস থেকেও আর্থিক সহায়তা পাওয়ার চেষ্টা চলছে।

রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সিয়াম বলেন, বাংলাদেশের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। তবে এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া কেবল বাংলাদেশের প্রচেষ্টার ওপর নির্ভরশীল নয়, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ ও আস্থার ওপরও তা নির্ভর করে।

তিনি আরো উল্লেখ করেন, রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান এখন শুধু একটি আঞ্চলিক নয়, বরং বৈশ্বিক দায়িত্বে পরিণত হয়েছে। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে সমন্বিত প্রচেষ্টা জোরদারের আহ্বান জানাবেন বলে পররাষ্ট্র সচিব উল্লেখ করেন।

সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে আজ যোগ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, বীর প্রতীক, রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, জাতিসঙ্ঘের আবাসিক সমন্বয়ক (অ্যাড-ইনচার্জ) রানা ফাওয়ার্স, মিয়ানমার বিষয়ক স্বাধীন তদন্ত মেকানিজমের প্রধান নিকোলাস কুমজিয়ান, মিয়ানমারে জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকারসংক্রান্ত বিশেষ দূত টমাস এইচ. অ্যান্ড্রুজ এবং জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) সহকারী হাইকমিশনার রাউফ মাজু সংলাপে উপস্থিত থাকবেন।

সম্মেলনটি পাঁচটি থিম্যাটিক অধিবেশনকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হচ্ছে- মানবিক সহায়তা ও তহবিল সঙ্কট, রাখাইন রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি, প্রত্যাবাসনের জন্য আস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ, ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ এবং টেকসই ও সময়োপযোগী সমাধানের দীর্ঘমেয়াদি কৌশল।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এ সম্মেলনে রোহিঙ্গা পুরুষ, নারী ও যুবকদের কণ্ঠস্বর বিশেষভাবে তুলে ধরা হবে, যাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সরাসরি তাদের অভিজ্ঞতা, প্রত্যাশা ও অভিযোগ শুনতে পারে।

আগামীকাল অংশগ্রহণকারীরা সরেজমিনে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করবেন, যাতে শরণার্থীদের বাস্তব জীবনের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সরাসরি ধারণা পাওয়া যায়।

নিউ ইয়র্কে ৩০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে প্রায় ১৭০টি দেশের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণের কথা রয়েছে। সেখানে রোহিঙ্গাসহ মিয়ানমারের অন্যান্য নিপীড়িত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর দুর্দশা নিয়ে গুরুত্বসহকারে আলোচনা হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গাদের গণহারে বাংলাদেশে আশ্রয়ের আট বছর পূর্তির সময়ে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন আন্তর্জাতিক সহায়তা ক্রমশ কমছে এবং মিয়ানমারে সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সম্প্রতি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো: তৌহিদ হোসেন বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে কাজ করছে- অব্যাহত বিদেশী সহায়তা নিশ্চিত করা, বৈশ্বিক অঙ্গনে রোহিঙ্গা সঙ্কটকে দৃশ্যমান রাখা এবং রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছামূলক ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের পথ সুগম করা।