- স্বাস্থ্যসেবা, মাধ্যমিক ও কারিগরি শিক্ষা, জ্বালানি বড় ভাগ্যবান
- বিমান, খাদ্য, পরিসংখ্যানসহ কপালপোড়া ৩০ মন্ত্রণালয়
- সর্বোচ্চ ৪১৮টি নতুন প্রকল্প ভৌত অবকাঠামো বিভাগে
আগামী উন্নয়ন বাজেটে বড় ভাগ্যবান স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, জ্বালানি ও খণিজ সম্পদ বিভাগ। আর ২০২৫-২৬ অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেটে কপাল পুড়ল ৩০ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের। তাদের মধ্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও পরিসংখ্যান বিভাগের বেশি পুড়েছে। তবে আগামীতে সর্বোচ্চ ৪১৮টি নতুন প্রকল্প পেয়েছে ভৌত অবকাঠামো বিভাগ সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে (এনইসি) অনুমোদিত এডিপি থেকে জানা গেছে।
অনুমোদিত এডিপির তথ্য বলছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে বাড়তি বরাদ্দ পেয়েছে ২৭ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। চলতি ২০২৪-২৫ সংশোধিত এডিপির চেয়ে ওই মন্ত্রণালয়গুলোর বরাদ্দ সর্বনিম্ন ৩ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৬১.৩২ শতাংশ বেড়েছে। আর বরাদ্দ কমেছে ৩০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের। তাদের সর্বোচ্চ ২৪০.৫৮ শতাংশ কমেছে।
ভাগ্যবান মন্ত্রণালয় ও বিভাগ
বরাদ্দ বেড়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের ৬১.৩২ শতাংশ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের ৫৮.৪৩ শতাংশ, জ্বালানি ও খণিজসম্পদ বিভাগের ৫৩.৫৮ শতাংশ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ৫১.২০ শতাংশ, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের ৫০.৬১ শতাংশ, বন, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ৪৮.৬০ শতাংশ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ৪২.৩৯ শতাংশ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের ৩৮.৭৩ শতাংশ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ৩৯.৩০ শতাংশ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ৩৭.৪৫ শতাংশ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ২৪.৭২ শতাংশ, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ১২.৩৪ শতাংশ, ধর্ম মন্ত্রণালয়ে ১২.২৮ শতাংশ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ২৯.৫২ শতাংশ, শিল্প মন্ত্রণালয়ের ১৯.০৩ শতাংশ, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ১০.৯৮ শতাংশ, ভূমি মন্ত্রণালয়ের ২০.১১ শতাংশ, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে ১২.২১ শতাংশ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ৩৭.৯৩ শতাংশ, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে ২৩.৫৫ শতাংশ, আইন মন্ত্রণালয়ে ১২.১২ শতাংশ।
দুর্ভাগা মন্ত্রণালয় ও বিভাগ
সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ কমেছে ২৪০.৫৮ শতাংশ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের। ৯৬৮ কোটি টাকা চলতি আরএডিপি থেকে কমে আগামী এডিপিতে পেয়েছে মাত্র ২৮৪ কোটি টাকার কিছু বেশি। এ ছাড়া কমেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ১০০.৯০ শতাংশ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের (এসআইডি) ১২৬.৪৪ শতাংশ, আইএমইডির ১০৮.৫১ শতাংশ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের ১৯৮.৮৯ শতাংশ, নির্বাচন কমিশনের ৮৫.৯১ শতাংশ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ৮১.৮৯ ১৫ শতাংশ, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ৭৭.১৫ শতাংশ, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ৭৫.৯১ শতাংশ, জননিরাপত্তা বিভাগের ৩৩.৭৩ শথাংশ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৩২.১৯ শতাংশ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৩৪.৫৯ শতাংশ বরাদ্দ কমানো হয়েছে।
খাতভিত্তিক নতুন প্রকল্প সংখ্যা
আগামী অর্থবছরের এডিপিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ৯৯০টি প্রকল্প যুক্ত করেছে, যেখানে প্রস্তাবনা ছিল এক হাজার ৪১৩টি। এর মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রকল্প হলো ভৌত অবকাঠামো বিভাগের ৪১৮টি, যার ২১৮টি হলো গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাদির। পরিবহন ও যোগাযোগের ১১৮টি, জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষার ৬৪টি। আর্থসামাজিক খাতের ২২৩টি প্রকল্পের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৭৮টি হলো শিক্ষার। এ ছাড়া ধর্ম, সংস্কৃতি ও বিনোদনে ৪১টি, স্বাস্থ্যের ৩৭টি, সামাজিক সুরক্ষায় ৩২টি প্রকল্প। কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগে ২১৫টি প্রকল্পের মধ্যে কৃষিতেই ১০২টি, স্থানীয় সরকারের ৬৪টি এবং পরিবেশ ও জলবায়ুতে ৪৯টি প্রকল্প। ১৩৪টি প্রকল্প রয়েছে শিল্প ও শক্তি বিভাগে। এখানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে ৭৩টি এবং শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবাসংক্রান্ত ৬১টি প্রকল্প।
উন্নয়ন প্রকল্পে খাতভিত্তিক বরাদ্দ
অন্তর্বর্তী সরকারের এই বাজেটে উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয়ে খাতভিত্তিক বরাদ্দ উল্লেখ করেছে, যা আগে কখনো হয়নি। এখানে প্রকল্পের অনাবাসিক ভবন র্নিমাণে ২৮ হাজার ১৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা (১১.৭৪%), সড়ক ও মহাসড়ক নির্মাণ ও সংস্কারে ১৭ হাজার ৩৫৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা (৭.২৮%), বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি ১৬ হাজার ৭৩.৪৮ কোটি টাকা (৬.৭৪%), ভূমি অধিগ্রহণ/ক্রয় ১৫ হাজার ৮২৮.৮৬ কোটি টাকা (০.০০%), গবেষণা ও উন্নয়নে ৯ হাজার ৬২৭.৬৩ কোটি টাকা (৪.০৪৭%), গ্রামীণ সড়কে ৯ হাজার ২১.৪৬ কোটি টাকা (৩.৯২%), আবাসিক ভবন ৯ হাজার ১৬.৭৩ কোটি টাকা (৩.৭৮%), অন্যান্য ভবন ও স্থাপনায় ৬ হাজার ৯১৭.৮৮ কোটি টাকা (২.৯০%), প্রকল্পে সেতু খাতে ছয় হাজার ৫০৫.২০ কোটি টাকা (২.৭৩%) এবং বাঁধ নির্মাণে ছয় হাজার ৪৭৩.৬৩ কোটি টাকা (২.৭১%)। এসব খাতে মোট এক লাখ ২৪ হাজার ৯৩৬.৫৮ কোটি টাকা বা ৫২.৩৬ শতাংশ।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, আগামী অর্থবছরে এডিপি যাতে শুরু থেকেই বাস্তবায়ন করা যায়, সেটি নিয়ে এনইসিতে আলোচনা হয়েছে। সেই প্রচেষ্টা থাকবে। তিনি বলেন, চলমান প্রকল্পের বোঝা আমাদের ঘাড়েও আছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে অনেক প্রকল্প যাচাই-বাছাই করেছে, বরাদ্দ কমিয়েছে, তহবিলের অপব্যবহার রোধ করেছে। যার ফলে বাস্তবায়নের ধারা কিছুটা ধীর হয়ে গেছে।