গত দুই দশকের মধ্যে, ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন নানা সিরিজের মাধ্যমে জায়োনিস্ট শাসক ও তার আগ্রাসী মনোভাবের বিরুদ্ধে দৃঢ় বার্তা প্রেরণ করেছে। এসব ধারাবাহিকের মূল বিষয়বস্তু প্রায়ই বাস্তব ঘটনাগুলোর ওপর ভিত্তি করে তৈরি, যা ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরান ও অন্যান্য দেশের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর ষড়যন্ত্র এবং হামলার প্রমাণ বহন করে।
সম্প্রতি, ২০২৫ সালের ১৩ জুন শুক্রবার, ইসরাইল এক অপ্রত্যাশিত সামরিক আক্রমণ চালিয়ে ইরানের সার্বভৌম ভূখণ্ডে হামলা চালায়। এই নৃশংস হামলায় ইসলামী বিপ্লব রক্ষীবাহিনীর প্রভাবশালী কমান্ডার, পারমাণবিক বিজ্ঞানী এবং নির্বিচারে নিরীহ নাগরিক শহীদ হন। হামলার পর থেকে ইসরাইলি বোমাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে, যেখানে বেসামরিক পারমাণবিক স্থাপনা ও বসতবাড়ি লক্ষ্য করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী এবং আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা বৃদ্ধি করেছে।
ইরানের জবাবে, ইসলামী বিপ্লব রক্ষীবাহিনী ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস থ্রি’ নামে একটি ব্যাপক প্রতিহত অভিযান শুরু করেছে। এতে তারা দখলদার ইসরাইলি ভূখণ্ডে গভীর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে সামরিক ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে টার্গেট করেছে।
এদিকে, ইরানের রাষ্ট্র সম্প্রচার সংস্থা (আইআরআইবি) বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে গত ২০ বছরে জায়োনিস্ট শাসকের নৃশংসতার ওপর বেশ কয়েকটি শক্তিশালী টেলিভিশন সিরিজ প্রচার করেছে। এই সিরিজগুলো ইসরাইলি বাহিনীর বিরুদ্ধে ইরান ও অন্যান্য দেশের মানুষের সংগ্রামের চিত্র তুলে ধরে।
উল্লেখযোগ্য সিরিজের মধ্যে রয়েছে-
শূন্য ডিগ্রি টার্ন : ২০০৭ সালে নির্মিত এই ঐতিহাসিক নাটকটি চল্লিশের দশকে নাৎসি দখলের সময় প্যারিসে ইরানি কূটনীতিক আবদুল হোসেন সরদারির বাস্তব জীবনের ঘটনা অবলম্বনে তৈরি। সিরিজটি ইহুদি নির্যাতন ও জায়োনিস্ট বিরোধিতার পটভূমিতে এক প্রেমকাহিনী বর্ণনা করে।
ওফা : ২০০৬ সালের এই সিরিজে একটি মেন্টাল হাসপাতাল থেকে ইরানি ইহুদি যুবককে অপহরণের চেষ্টা নিয়ে কাহিনী তৈরি হয়েছে, যেখানে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের ষড়যন্ত্র উঠে আসে।
জাহ্রার নীল চোখ : ২০০৪ সালে নির্মিত এই সিরিজে ফিলিস্তিনি এক কন্যার জীবনের মাধ্যমে ইসরাইলি দখলদারির নিষ্ঠুরতা তুলে ধরা হয়েছে।
ভঙ্গুর না হওয়া দর্পণ : ২০০৮ সালের এই সিরিজে পারমাণবিক স্থাপনা সংক্রান্ত গুপ্তচরবৃত্তির বিরুদ্ধে একটি ঘনঘন চলা নাটকীয় কাহিনী দেখানো হয়েছে।
একটি স্বপ্নের ভুল বোঝাবুঝি : ২০১৫ সালে প্রচারিত এই সিরিজে বিদেশী গুপ্তচরদের পারমাণবিক বিজ্ঞানী অপহরণের ব্যর্থ চেষ্টা এবং ইরানি গোয়েন্দাদের প্রতিরোধের গল্প তুলে ধরা হয়েছে।
সাম্প্রতিক ঘটনায়, ২০২৫ সালের ১৬ জুন তেহরানে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সম্প্রচার সংস্থার (আইআরআইবি) প্রধান ভবনে ইসরাইলি হামলা ঘটে, যেখানে তিন জন সাংবাদিক শহীদ হন। ওজওই দেশের বৃহত্তম সংবাদমাধ্যম এবং ইসরাইলের বেসামরিক ও সামরিক অবকাঠামোতে আক্রমণের প্রতিবেদন দিয়ে জনগণের মধ্যে সত্য তুলে ধরছে, যা ইসরাইলের জন্য নাভিশ্বাসের কারণ হতে পারে।
ওই হামলা ইরানের জনগণ ও সরকারের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির ইসরাইলি চেষ্টা ব্যর্থ করার লক্ষ্যে করা হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।