মালয়েশিয়া প্রতিনিধি
দক্ষিণ এশিয়ার ‘ইউরোপ’ হিসেবে পরিচিত মালয়েশিয়া শুধু নিরাপদ নগরায়ন ও সুশৃঙ্খল জীবনধারার জন্যই নয়, বরং আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন স্পট এবং দৃষ্টিনন্দন ইসলামী স্থাপনার কারণেও বিশ্বব্যাপী খ্যাতি পেয়েছে। এসব স্থাপনার মধ্যে সবচেয়ে বিশেষ আকর্ষণ ‘গোলাপি পাথরে নির্মিত’ পুত্রা মসজিদ, যা আন্তর্জাতিক পর্যটকদের কাছে মালয়েশিয়ার অন্যতম পরিচিত ল্যান্ডমার্ক।
রাজধানী কুয়ালালামপুর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে দেশটির প্রশাসনিক কেন্দ্র পুত্রাজায়ায় অবস্থিত এই মসজিদটি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একেবারে পাশে- দূরত্ব মাত্র ১০০ মিটার। ১৯৯৯ সালে সৌদি আরব থেকে আনা বিশেষ গোলাপি পাথরে নির্মিত মসজিদটি এখনো নতুনের মতো ঝকঝকে সৌন্দর্য ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
পুত্রা মসজিদের নিরাপত্তা কর্মকর্তা মোহাম্মদ বাকরি বিন ওহাব জানান, মসজিদটি পুত্রাজায়া ফেডারেল টেরিটরির ‘সরকারি প্রিসিঙ্কটের’ ধর্মীয় কেন্দ্র হিসেবে নির্মিত হয়। মালয়েশিয়ার প্রথম প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত টুঙ্কু আবদুর রহমান পুত্রা আল-হাজের নামানুসারে মসজিদের নামকরণ করা হয়।
মসজিদটি পুত্রাজায়া লেকের ঠিক উপরবর্তী ১০ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। দাতারান পুত্রা এবং জাম্বাতান পুত্রার সমন্বয়ে তৈরির ফলে এটি প্রশাসনিক কেন্দ্রের সাথে এক অনন্য স্থাপত্যিক সাদৃশ্য তৈরি করেছে। নির্মাণশৈলীতে মধ্যপ্রাচ্যের নকশা ও ঐতিহ্যবাহী মালয় শিল্পকলা মিশে গেছে অসাধারণভাবে।
মসজিদের প্রধান গম্বুজটি সম্পূর্ণ গোলাপি পাথরের-আরবেস্ক নকশায় খোদাই করা এই গম্বুজ মিসরের ঐতিহ্যবাহী মসজিদের নকশার অনুপ্রেরণায় তৈরি। মসজিদের দরজা সেঙ্গাল কাঠের, ভেতরের কার্পেট ও সজ্জা মালয় সংস্কৃতি এবং ইসলামী শিল্পকলা উভয়ের সমন্বয় বহন করে। ১১৬ মিটার উঁচু মিনারটির নকশা নেয়া হয়েছে ১২০২ খ্রিস্টাব্দে ইরাকে নির্মিত সিতি জুবাইদা বা জুমুরুদ খোতুন মসজিদের আদলে।
মসজিদের নকশা দুই ভাগে-প্রধান মসজিদ এবং ‘সাহান’। সাহান অংশটি সামাজিক কার্যক্রম ও ধর্মীয় কার্যক্রমের মাঝে সংযোগস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং এটি অতিরিক্ত ইবাদতের স্থান হিসেবেও কার্যকর। ভেতরের মূল মসজিদে পাঁচ হাজার এবং পুরো কমপ্লেক্সে একসাথে প্রায় ১৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।
পুত্রা মসজিদের অনন্য রং ও নকশা এটিকে বিশ্বের মুসলিম ও অমুসলিম পর্যটকদের অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্যে পরিণত করেছে। প্রতি বছর মালয়েশিয়া ভ্রমণে আসা বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশী পর্যটকও কুয়ালালামপুর পৌঁছে প্রথমেই এই গোলাপি মসজিদ দেখতে এবং নামাজ আদায় করতে ছুটে আসেন।



