- সব ঠিক থাকলে রোববার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তোলা সম্ভব হবে : মির্জা ফখরুল
- ঢাকায় জুবাইদা রহমান
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া এখন নির্ভর করছে তার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার ওপর। গত বৃহস্পতিবার মেডিক্যাল বোর্ড তাকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দেয়ার পর প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। এখন নতুন করে আবারো মেডিক্যাল বোর্ড তার স্বাস্থ্যের অবস্থা পর্যালোচনা করছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, চিকিৎসকরা নিশ্চিত করলেই খালেদা জিয়াকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হবে। এ দিকে কাতার সরকার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসনের জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্ত পেলে আজ বিকেলে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি ঢাকায় এসে পৌঁছাতে পারে। এ দিকে লন্ডনে বেগম জিয়ার এই চিকিৎসা যাত্রায় সঙ্গী হতে গতকাল ঢাকায় এসেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা: জুবাইদা রহমান।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরীসহ দায়িত্বশীল বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, টেকনিক্যাল ত্রুটি থাকায় যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি পাঠানোর কথা ছিল, সেটির বদলে বিকল্প একটি বিমান পাঠাবে কাতার সরকার। তবে বিকল্প এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি কখন নাগাদ ঢাকায় এসে পৌঁছাবে, তা নির্ভর করছে মেডিক্যাল বোর্ডের গ্রিন সিগন্যালের ওপর। যদি মেডিক্যাল বোর্ড খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা ফ্লাই করার মতো ফিট রয়েছে বলে জানায়, তাহলে আজ বিকেল ৫টা নাগাদ এয়ারক্রাফটি ঢাকায় এসে পৌঁছাবে। তবে এ ক্ষেত্রেও ‘কিন্তু’ রয়েছে, কারণ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে থাকা চিকিৎসকরাও বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য ফ্লাই করার মতো উপযোগী কি না তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন। এভাবে আগামী ৩৬ ঘণ্টা সব কিছু ঠিক থাকলে রোববার খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হতে পারে।
চিকিৎসকরা নিশ্চিত করলে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হবে : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, চিকিৎসকরা নিশ্চিত করলেই দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হবে।
গতকাল শুক্রবার বাদ জুমা রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সংলগ্ন মসজিদের সামনে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এ কথাগুলো বলেন। এর আগে মসজিদে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
খালেদা জিয়াকে সুস্থ করে তুলতে চিকিৎসকেরা প্রাণপণে চেষ্টা করছেন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল আরো বলেন, চিকিৎসকেরা আশা করছেন শনিবার কাতার থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বাংলাদেশে এসে পৌঁছালে রোববার তাকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় গত এক সপ্তাহ ধরে খালেদা জিয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের উচ্চমানের চিকিৎসকেরা তার চিকিৎসা করছেন। তবে এই চিকিৎসা আরো উন্নত হাসপাতালে করা প্রয়োজন বলে সবাই মনে করছেন। সে কারণে তাকে ইংল্যান্ডের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকার খালেদা জিয়াকে ছয় বছর কারারুদ্ধ করে রেখেছিল বলেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, এর মধ্যে দুই বছর তাকে নির্জন, পুরনো কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। সবাই সন্দেহ করেন, সেখান থেকেই তার রোগের সূচনা হয়। চিকিৎসার অভাবে তিনি আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন। করোনার সময় থেকে গত চার বছর তিনি গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। এরপর তিনি সুস্থ হলেও কিছুদিন আগে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। দেশবাসীর কাছে খালেদা জিয়ার সুস্থতায় দোয়া চান মির্জা আলমগীর।
খালেদা জিয়ার পাশে জুবাইদা রহমান : হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রায় সঙ্গী হতে ঢাকায় পৌঁছেছেন পুত্রবধূ ডা: জুবাইদা রহমান। গতকাল শুক্রবার বেলা পৌনে ১১টায় জুবাইদাকে বহনকারী বিমানের ফ্লাইট শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছায় বলে জানান বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন।
বিমানবন্দরে জুবাইদা রহমানকে অভ্যর্থনা জানান যুক্তরাজ্যের চিকিৎসক রিচার্ড বেলি, জুবাইদা রহমানের বড় বোন শাহিনা খান জামান ও তার স্বামী অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর সৈয়দ শফিউজ্জামান ও মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামসুল ইসলাম শামস, শারমীন আখতার ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর মঈনুল হোসেন।
বিমানবন্দর থেকে সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালে যান জুবাইদা রহমান। আতিকুর রহমান রুমন জানিয়েছেন, ‘ভাবী লন্ডন থেকে দেশে ফিরে সরাসরি এভারকেয়ারে আসেন। সেখানে বেগম খালেদা জিয়ার শয্যার পাশে ছিলেন। এরপর ডাক্তারদের সাথে সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে মিটিং করেন। বেগম খালেদা জিয়ার শয্যার পাশে থাকার পর ধানমন্ডিতে বাবার বাসা মাহবুব ভবনে যান জুবাইদা রহমান। ওখানে তার মা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু রয়েছেন।’
গত ২৩ নভেম্বর রাতে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়। পরীক্ষায় ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ায় তাকে সেখানে ভর্তি করা হয়। গত রোববার ভোরের দিকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে এসডিইউ থেকে সিসিইউতে নেয়া হয়। গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেনের সাথে কথা বলে জানান, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। চিকিৎসকদের নিবিড় তত্ত্বাবধায়নে আছেন তিনি।
এভারকেয়ার হাসপাতালের অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের অধীনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। এই চিকিৎসকেরা গত বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার সর্বশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনা করে বিদেশে নেয়ার সিদ্ধান্ত দেন। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খবর আসে কারিগরি ত্রুটির কারণে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স শুক্রবার আসছে না। পরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, ‘সব ঠিক থাকলে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স শনিবার পৌঁছাতে পারে। ম্যাডামের শরীর যদি যাত্রার উপযুক্ত থাকে এবং মেডিক্যাল বোর্ড যদি সিদ্ধান্ত দেয়, তাহলে ৭ তারিখ রোববার তিনি ফ্লাই করবেন।’
চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির দেয়া এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করেই লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে লন্ডন ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন তিনি। চিকিৎসা শেষে চার মাস পর ৫ মে কাতারের আমিরের দেয়া এয়ার অ্যাম্বুলেন্সেই দেশে ফিরেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এবারো কাতার সরকার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করছে বলে বিএনপির তরফ থেকে জানানো হয়েছে।



