প্রকল্প অনুমোদন না হওয়ায় ২০২৪-এর জুন থেকে এখন পর্যন্ত টানা ১১ মাস বেতন পাচ্ছেন না বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে কর্মরত অল্টারনেটিভ মেডিক্যাল কেয়ার প্রকল্পে কর্মরত ৪৮১ জন চিকিৎসক। ফলে তাদের অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কবে বেতন পাবেন তা কেউ জানেন না। জানা গেছে, বর্তমান সরকার ২০২৬ সালের জুনের পর থেকে এ প্রকল্প চালাবে না। নতুন কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা না হলে ২০২৬ সালের পর এসব জনবলের কী হবে তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছেন চিকিৎসকরা।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসার পাশাপাশি ইউনানী, আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাকে মূল চিকিৎসা ব্যবস্থায় সম্পৃক্ত করে জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে ১৯৯৯ সালে ৪৫ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর ২০১৪ সালে এইচপিএনএসপি প্রকল্পের তৃতীয় সেক্টর কর্মসূচির অধীন ২২৬ জন এবং ২০২১ সালে চতুর্থ সেক্টর কর্মসূচির অধীন ১১০ জন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়। তাদের মধ্যে তিনটি মেডিক্যাল কলেজের প্রভাষক, মেডিক্যাল অফিসার, রেজিস্ট্রার, সহকারী রেজিস্ট্রারসহ জেলা-উপজেলার মেডিক্যাল অফিসার পদ রয়েছে। কিন্তু তৃতীয় ও চতুর্থ সেক্টর কর্মসূচিতে নিয়োগ পাওয়া জনবল রাজস্বে স্থানান্তরিত না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানসমূহে তীব্র শিক্ষক ও চিকিৎসক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন না থাকায় হাসপাতালগুলো থেকে সেবাগ্রহীতারা বিনামূল্যে ওষুধও পাচ্ছেন না। এ নিয়ে সেবাগ্রহীতাদের সাথে চিকিৎসকদের ঝামেলা লেগেই থাকে। সেবাগ্রহীতারা সন্দেহ করেন, ওষুধ ঠিকই আসে, সেগুলো ডাক্তাররা মেরে দিচ্ছেন।
সারা দেশে বেশকিছু ইউনানী, আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা বরাবরই বেতন পাওয়ার আশ্বাস পেয়েছেন। কিন্তু কবে নাগাদ বেতন হতে পারে সে সম্বন্ধে কারো কাছে কোনো তথ্যও পাচ্ছেন না বলে তারা বেশ উদ্বিগ্ন।
একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন মেডিক্যাল অফিসার (ইউনানী) জানান, ‘পরিবার নিয়ে বেতন ছাড়া কতদিন চলা যায়? সংসার চালাতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কিস্তি পরিশোধ করতে পারছি না। হতাশা ধরে বসেছে।’ তিনি আরো বলেন, একবার শুনলাম এপ্রিলের শেষে বেতন হতে পারে, এখন জুন চলে গেছে। বেতন কবে পাবো নির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারছে না।
তাদের বেতন হয় ওপির মাধ্যমে। চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর প্রোগ্রাম শেষ হয়েছে ২০২৪ সালের ৩০ জুন। তবে চতুর্থ সেক্টর প্রোগ্রাম ২০২২ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরে আরো দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালে শেষ হওয়ার কথা। এরপর থেকেই তাদের বেতন-ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে এর মধ্যেই স্বাস্থ্য অধিদফতর ইউনানী-আয়র্বেদিক চিকিৎসকদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের সুপারিশ করে তা বাস্তবায়নের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হলেও গতকাল পর্যন্ত রাজস্বে স্থানান্তরেরও কোনো খবর নেই।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অল্টারনেটিভ মেডিক্যাল কেয়ার বিভাগের লাইন পরিচালক ডা: আবু জাহের নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘চতুর্থ সেক্টর প্রোগ্রাম ২০২৪ সালে জুনে শেষ হলেও নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম পাস হয়নি। এটা হয়তো জুলাই আন্দোলনের কারণে হতে পারে। তবে এটা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাজ। আমরা যতদূর জানতে পেরেছি, ইউনানী-আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকদের ২০২৪-২৫ এবং ২০২৫-২৬ বছরের জন্য প্রথমে ডিপিপি হওয়ার কথা। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে, দু-এক মাসের মধ্যে তা হয়ে যেতে পারে।’
সরকারি ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধিকাংশ শিক্ষক ও জনবল প্রকল্পের অধীন। এ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৩৯ জন শিক্ষক প্রকল্পের অধীন বলে তারা গত ১১ মাস থেকে বেতন পাচ্ছেন, তা সত্ত্বেও তারা অফিস করছেন নিয়মিত। এ প্রতিষ্ঠানের দুই বিভাগ মিলে মাত্র একজন শিক্ষক রাজস্বের অধীন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় মোট ৩৮টি অপারেশনাল প্ল্যান আছে। এর মধ্যে অল্টারনেটিভ মেডিক্যাল কেয়ার একটি। এগুলোর অপারেশনাল প্ল্যান হয় পঁাঁচ বছর মেয়াদি। জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকার পঞ্চম সেক্টর কর্মসূচি দুই বছর মেয়াদের জন্য করতে চায়। জানা গেছে, বর্তমান ডিপিপি অনুযায়ী এক্সিট প্ল্যান তৈরি করে অত্যাবশ্যকীয় জনবল রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করার কথা বলা হয়েছে। এটা সবশেষ প্ল্যান বলে জনবলও রাজস্ব খাতে যাবে। এ প্রকল্পের চিকিৎসকদের সাপোর্ট স্টাফ কম্পাউন্ডার ও হার্বাল অ্যাসিস্ট্যান্ট-এর পদগুলো রাজস্বে স্থানান্তর হওয়ার পরও প্রভাষক, মেডিক্যাল অফিসার পদগুলো রাজস্বে স্থানান্তরিত হচ্ছে না। এ বৈষম্য দূর করে বকেয়া বেতন ও চাকরি স্থায়ীকরণের দাবি জানিয়েছেন ইউনানী, আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকরা।