গাজীপুর-১ ও ২ আসনে নতুন সমীকরণের রাজনীতি

মো: আজিজুল হক, গাজীপুর মহানগর
Printed Edition

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে শিল্পসমৃদ্ধ জেলা গাজীপুরের রাজনীতিতে চাঙ্গাভাব ফিরে এসেছে। দীর্ঘদিন জেলার রাজনীতিতে আধিপত্য ধরে রাখা আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকায় গাজীপুরের নির্বাচনী সমীকরণে তৈরি হয়েছে বড় ধরনের পরিবর্তন।

বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যে সক্রিয় প্রচারণায় নেমে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করছে। অন্য দিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এনসিপি, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, এবি পার্টিসহ অন্যান্য দলের তৎপরতাও দৃশ্যমান। তবে বাম দলগুলো ও জাতীয় পার্টির তৎপরতা নেই। বিশ্লেষকদের মতে, গাজীপুর-১ ও গাজীপুর-২ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সবাই নতুন মুখ এবং সংসদীয় নির্বাচনের নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে মাঠে নামছেন।

গাজীপুর-১ : হেভিওয়েটদের প্রতিযোগিতা

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, আসনটিতে মোট ভোটার চার লাখ ৭৫ হাজার ২৭৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ ৩৭ হাজার ২৪১ ও নারী ভোটার দুই লাখ ৩৮ হাজার ২৭ এবং ট্রান্সজেন্ডার ভোটার ছয়জন।

এ আসনে বিএনপি এখনো চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করেনি। তবে পাঁচ হেভিওয়েট নেতা মনোনয়নের দৌড়ে শীর্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তারা হলেন- ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম (বাবুল), কেন্দ্রীয় সহ-শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান, কেন্দ্রীয় নেতা ও স্থগিত মেয়র মজিবুর রহমান, সাবেক উপজেলা সভাপতি ভিপি হেলাল উদ্দিন এবং জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকীর ছেলে ব্যারিস্টার ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকী। প্রত্যেকেই মনোনয়ন প্রত্যাশায় প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ, মতবিনিময় ও সভা-সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছেন।

অন্য দিকে কয়েক মাস আগে থেকেই দলীয় মনোনয়ন পেয়ে মাঠ সরগরম করে রেখেছেন জামায়াত মনোনীত প্রার্থী সাবেক সচিব মো: শাহ আলম বকশি। শোডাউন, কর্মিসভা এবং এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগের মাধ্যমে তিনি ভোটারদের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য সাড়া পাচ্ছেন। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী জি এম রুহুল আমীন, এনসিপির দেওয়ান মাহবুবুল আলম পনির, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মুফতি আব্বাস মাদারীপুরী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী মুফতি ইমদাদুল হক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী কাজী সাইয়েদুল আলম (বাবুল) বলেন, বাংলাদেশ এখন গণতন্ত্রের মহাসড়কে। এই পথ থেকে আর কেউ আমাদের সরাতে পারবে না। জনগণই রাষ্ট্রের মালিক, আমরা সেই মালিকানার হক ফিরিয়ে দিতে লড়ছি।

জামায়াতের প্রার্থী মো: শাহ আলম বকশি বলেন, এবারের নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভিন্নধারা সূচনা করবে। জনগণ রাতের ভোটের দুঃশাসন চায় না। আমরা ফ্যাসিবাদী রাজনীতির অবসান ঘটিয়ে জনগণকে সত্যিকারের গণতন্ত্র উপহার দিতে চাই।

হুমায়ুন কবির খান বলেন, এই আসনে মানুষ পরিবর্তন চাইছে। গণতন্ত্র আর কখনো ছিনতাই করতে দেয়া হবে না। জি এম রুহুল আমীন (ইসলামী আন্দোলন) বলেন, ন্যায়ভিত্তিক রাজনীতি প্রতিষ্ঠাই আমাদের লক্ষ্য। দেওয়ান মাহবুবুল আলম পনির (এনসিপি) বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনে আস্থা রাখি। মুফতি আব্বাস মাদারীপুরী (খেলাফত মজলিস) বলেন, জনগণের অধিকারই আমাদের রাজনীতির মূল ভিত্তি।

গাজীপুর-২ : নতুন মুখ বনাম পুরনো তৃণমূল নেটওয়ার্ক

সিটির ১ থেকে ৬ এবং ১৩ থেকে ৩১ নম্বর ওয়ার্ড ও সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসনে মোট ভোটার পাঁচ লাখ ২৮ হাজার ৪৭১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ ৬১ হাজার ২০৪ ও নারী ভোটার দুই লাখ ৬৭ হাজার ২৫৯ এবং ট্রান্সজেন্ডার ভোটার আটজন।

এখানে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য ও মহানগরের নায়েবে আমির মো: হোসেন আলী প্রায় ছয় মাস ধরে মাঠপর্যায়ে টানা প্রচার চালিয়ে জনপ্রিয় অবস্থান তৈরি করেছেন। সম্প্রতি বিএনপি থেকে প্রার্থী ঘোষণার পর সাবেক মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানের ছেলে ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম মঞ্জুরুল করিমও প্রচারণায় নতুন গতি এনেছেন। প্রার্থী হিসেবে নতুন হলেও বাবার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক নেটওয়ার্ক তার বড় শক্তি হয়ে উঠতে পারে।

শিল্প-শ্রমিক অধ্যুষিত এ আসনে চাঁদাবাজিমুক্ত, মাদকমুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত রাজনীতির প্রতিশ্রুতির কারণে জামায়াত ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য সাড়া পাচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিমত। জামায়াতপ্রার্থী হোসেন আলী বলেন, মাদক, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত রাজনীতির পথেই আমরা এগিয়ে যাব। ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসানের পর মানুষ নতুন প্রত্যাশার দিকে তাকিয়ে আছে। আমরা সেই প্রত্যাশা পূরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এম মঞ্জুরুল করিম বলেন, গাজীপুর-২ এলাকাটি রাজনৈতিক অবহেলার শিকার। এবার জনগণের ভোটে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার সময় এসেছে। রাতের ভোটের রাজনীতি এখন অতীত। এবার নতুন বাংলাদেশে নতুন রাজনীতি তৈরি হবে। এম এ হানিফ সরকার (ইসলামী আন্দোলন) বলেন, সৎ রাজনীতি ছাড়া দেশ এগোতে পারে না। মুফতি নাছির উদ্দিন খান (খেলাফত মজলিস) বলেন, জনগণের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। আব্দুল্লাহ আল মুহিম (এনসিপি) বলেন, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আলহাজ ইঞ্জিনিয়ার মো: আলমগীর হোসেন (এবি পার্টি) বলেন, গণতন্ত্র রক্ষাই এখন আমাদের সবার মূল লক্ষ্য। গাজীপুরের এই দুই গুরুত্বপূর্ণ আসনে বড় দুই দলের প্রচার প্রচারণার পাশাপাশি ইসলামী ধারার বেশ কয়েকটি দলের সক্রিয় অংশগ্রহণে নির্বাচনী অঙ্গন আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। আগামীর দিনে সমীকরণ কোন দিকে যায়- সেদিকেই তাকিয়ে গাজীপুরের রাজনীতি।