নতুন শরিয়াহ কাউন্সিল গঠন করবে বিএসইসি ডিএসইর লেনদেন ফের ৫০০ কোটি ছাড়াল

পুঁজিবাজারের গভীরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশকে দেশের পুঁজিবাজারে সম্পৃক্ত করার সুযোগ তৈরি হবে।

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
Printed Edition

বৈশি^ক পুঁজিবাজারে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটলেও আমাদের পুঁজিবাজারে এখনো তার বিশেষ প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি। বিগত তিন কর্মদিবসে দেশের পুঁজিবাজার সামান্য মন্দায় কাটলেও গতকাল আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দেশের দুই পুুঁজিবাজারেই বেড়েছে লেনদেন। প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন ফের ছাড়িয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। গতকাল বাজারটিতে ৫২৭ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে ডিএসই। এটি গত দেড় মাসের মধ্যে ডিএসইর সর্বোচ্চ লেনদেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারির পর আর এ পর্যায়ে পৌঁছেনি ডিএসইর লেনদেন।

বুধবার দিনের লেনদেনের শুরুতেই দেশের দুই পুঁজিবাজার ছিল ঊর্ধ্বমুখী। প্রায় ৩ ঘণ্টা এ ধারা অব্যাহত থাকে। ডিএসইর প্রধান সূচক সকালে ৫ হাজার ১৮৫ দশমিক ৮২ পয়েন্ট থেকে দিন শুরু করলেও ১ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যায় ৫ হাজার ২২০ পয়েন্টে। এ সময় ৩৫ পয়েন্ট উন্নতি ঘটে সূচকটির। বেলা ১টা পর্যন্ত সূচকের এ অবস্থান ধরে রাখে বাজারটি। তবে এরপর বাজারের বিক্রয়চাপ সৃষ্টি হলে নিম্নমুখী হয় সূচক। দিনশেষে ১০ দশমিক ২১ পয়েন্ট উন্নতি ধরে রেখে শেষ হয় লেনদেন। একই সময় ডিএসই-৩০ সূচকটি ২ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট অবনতি ঘটলেও ২ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট উন্নতি ধরে রাখে ডিএসই শরিয়াহ সূচক।

দেশের দ্বিতীয় পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ও দেখা যায় সূচকের মিশ্র আচরণ। এখানে সিএসই সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ও সিএসই-৩০ সূচক যথাক্রম ৩ দশমিক ০৫ ও ৮ দশমিক ৫৭ পয়েন্ট অবনতি ঘটলেও সিএসসিএক্স সূচকের উন্নতি ঘটে ৫ দশমিক ১৮ পয়েন্ট।

এ দিকে পুঁজিবাজারে নতুন শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল (এসএসি) গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিএসইসির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে এ তথ্য জানা যায়। এতে আগের কমিশনের আমলে করা ৯ সদস্যের শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিলটি বাতিল হতে যাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২০ জানুয়ারি তৎকালীন কমিশনের হাত ধরে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে শরিয়াহ ইনডেক্স চালু করা হয়। দেশের জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ ইসলামী শরিয়াহ মেনে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখালে ডিএসই পর্ষদ তাদের বাজারে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে এ ইনডেক্স চালু করে। এ ইনডেক্সের অধীনে কোন কোন সিকিউরিটিজকে অন্তর্ভুক্ত করা যায় তা নির্ধারণে প্রয়োজন হয় শরিয়াহ কাউন্সিলের।

এর আগে ২০২৩ সালের ২৮ মে বিএসইসির তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এ বিষয়ে একটি নির্দেশনা জারি করেন। দেশের পুঁজিবাজারে ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক বিভিন্ন প্রকার সিকিউরিটিজ ইস্যু আনা, ইসলামিক ক্যাপিটাল মার্কেট গঠন ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সে সময় শরিয়াহসম্মত সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে একটি বিধিমালা প্রণয়ন করেছিল বিএসইসি। ২০২২ সালের ১৬ অক্টোবর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (সিকিউরিটিজ মার্কেট শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল) বিধিমালা, ২০২২ নামে গেজেটটি প্রকাশ করা হয়। শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিলের কাজ হলো বিএসইসির চাহিদা অনুসারে বিভিন্ন ইস্যুতে পরামর্শ দেয়া, শরিয়াহসংক্রান্ত গাইডলাইন প্রণয়ন, ইসলামী শরিয়াহসম্মত সিকিউরিটিজের মান প্রণয়ন, কোনো সিকিউরিটিজ শরিয়াহসম্মত কি না, সে বিষয়ে মতামত দেয়া।

৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বে পুনর্গঠিত বিএসইসি পুঁজিবাজারের জন্য গঠিত আগের শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। একই সাথে নতুন শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শরিয়াহভিত্তিক সিকিউরিটিজ ইস্যু করতে এবং ইসলামিক ক্যাপিটাল মার্কেট গঠন করতে কমিশন শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল গঠনের প্রয়োজন মনে করছে। এ জন্য নতুন করে নয় সদস্যের শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিলের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

জানা যায়, শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুর রশিদকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কাউন্সিলের জন্য নির্বাচিত পাঁচজন ইসলামী শরিয়াহ স্কলার হলেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ (ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), মুফতি শহীদ রাহমানী (চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার, সেন্টার ফর ইসলামিক ইকোনমিকস বাংলাদেশ), মুফতি ইউসুফ সুলতান (ফাউন্ডার অ্যান্ড চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার, এডিএল অ্যাডভাইজরি, মালয়েশিয়া), মুফতি ড. ওয়ালিউর রহমান খান (ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিনিধি) এবং মাওলানা শাহ ওয়ালী উল্লাহ (খতিব, সোবহানবাগ মসজিদ অ্যান্ড মাদরাসা কমপ্লেক্স)।

এ ছাড়া পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট এক্সপার্ট চার সদস্য হলেন, অধ্যাপক আবু তালেব (ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং এক্সপার্ট), এ কে এম নুরুল ফজল বুলবুল (লিগ্যাল এক্সপার্ট), অধ্যাপক মো: নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়া (অ্যাকাউন্টিং এক্সপার্ট) এবং মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ (ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপার্ট)।

কমিশন মনে করে, শরিয়াহ কাউন্সিলকে যথাযথ কার্যকর করা গেলে ইসলামী শরিয়াহর মানদণ্ড মেনে ডিএসইর শরিয়াহ ইনডেক্সে আরো নতুন নতুন কোম্পানির অন্তর্ভুক্তি সহজ হবে। ফলে পুঁজিবাজারের গভীরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশকে দেশের পুঁজিবাজারে সম্পৃক্ত করার সুযোগ তৈরি হবে।

গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের শীর্ষে জায়গা করে নেয় জীবন বীমা কোম্পানি সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স। ২৭ কোটি ৮১ লাখ টাকায় কোম্পানিটির ৩৭ লাখ ৯৭ হাজার শেয়ার হাতবদল হয়। ২০ কোটি ৪৬ লাখ টাকায় ২১ লাখ ৫৮ হাজার শেয়ার বেচাকেনা করে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ছিল দ্বিতীয় অবস্থানে। ডিএসইর লেনদেনের শীর্ষ দশ কোম্পানির অন্যগুলো ছিল যথাক্রমে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, বিচ হ্যাচারিজ, এসিআই লি:, শাইনপুকুর সিরামিকস, ইস্টার্ণ লুব্রিকেন্ট, অগ্নি সিস্টেমস, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস ও ইফাদ আটোস।

দিনের মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে ছিল কনফিডেন্স সিমেন্ট। কোম্পানিটির ১০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি ঘটে গতকাল। ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি পেয়ে এ তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল জেএমআই সিরিঞ্জ। এ তালিকায় আরো ছিল যথাক্রমে ডরিন পাওয়ার, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, এমবি ফার্মা, বারাকা পাওয়ার, ইউনাইটেড পাওয়ার, মেঘনা সিমেন্ট, ইফাদ আটোস ও সন্ধানি লাইফ ইন্স্যুরেন্স।