কোরবানি উপলক্ষে জমে উঠেছে রাজধানীর পশুর হাটগুলো। একটু দেরিতে জমলেও শুরু হয়েছে কোরবানির পশু বেচাকেনা। শেষ সময়ের অপেক্ষায় ক্রেতা ও বিক্রেতারা। ক্রেতারা জানান, এখনো দাম বেশি হাঁকাচ্ছে বেপারীরা। তা ছাড়া পশু রাখার মতো জায়গা নেই। তাই শেষের দিকে কিনতে চাচ্ছেন তারা। ব্যবসায়ীরা জানান, কেউ দাম বললেও বড় পার্থক্যের কারণে বিক্রি করতে পারছেন না। তবে শেষের দুই দিন ভালো বিক্রি করতে পারবে বলে আশা করছেন তারা।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় ট্রাকে করে আসছে গরু। আর মাত্র একদিন পরই ঈদ। এ দিকে গতকাল থেকে সরকারি অফিস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাজধানীর হাটগুলোতে বেড়েছে ক্রেতাদের উপস্থিতি। গতকাল রাত থেকে বেশি বেচাকেনা শুরু হয়েছে বলে জানায় ব্যবসায়ীরা। কেউ কেউ পছন্দ হলে নিয়ে নিচ্ছেন কোরবানির পশু। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, ছোট ও মাঝারি গরুর দাম তুলনামূলক বেশি। তবে বড় গরুর ক্ষেত্রে দাম কিছুটা স্বাভাবিক আছে।
রাজধানীর কমলাপুর পশুর হাটে সরেজমিন ঘুরে দেখে গেছে, বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা গরু বেপারীরা নিজেদের পশুর যতে্ন ব্যস্ত সময় পার করছেন। তা ছাড়া ক্রেতাদের উপস্থিতিও ছিল গত কয়েক দিনের তুলনায় অনেক বেশি। ঘুরে ঘুরে পছন্দ মতো গরু কিনতেও দেখা গেছে অনেককে। তা ছাড়া বেচাকেনাও বেড়েছে বিগত দিনের চেয়ে। ক্রেতারা দুপুরের পর থেকেই হাটে এসে পছন্দ অনুযায়ী গরু কেনার জন্য দেখছেন। কেউ কেউ পছন্দ মতো গরু কিনলেও অনেককেই দেখা গেছে বাজার ঘুরে যাচাই করতে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, প্রতিটি গরুর পেছনে তাদের যেই পরিমাণ খরচ হয়েছে ক্রেতারা সেই পরিমাণ দাম বলে না। তারা ছোট গরু দাম বলছে বড় গরুগুলোতেও।
এ দিকে মাঝারি ও ছোট গরুর চেয়ে ভালো দাম পাচ্ছেন বড় গরুগুলোতে এমনই দাবি করছেন ক্রেতারা। তারা জানান, মাঝারি ও ছোট গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি এতে করে ব্যবসায়ীরা অধিক দাম হাঁকাচ্ছেন। দেখা গেছে, একটি মাঝারি আকারের গরুর দাম হতে পারে ৯০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। কিন্তু বেপারীরা চাচ্ছেন দেড় লাখ টাকা। কিন্তু বড় গরুর ক্ষেত্রে এই চিত্র আবার ভিন্ন কারণ সেগুলো কিছুটা কমেও কেনা যাচ্ছে। তবে অনেকেই বলছেন, গত বছরের তুলনায় দাম ঠিকই আছে। কিছুটা বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। কারণ গো খাদ্যের দামও বেড়েছে।
রাজধানীর ওয়ারী এলাকা থেকে ছেলেমেয়েকে নিয়ে পছন্দের গরু কিনতে আসেন মো: ইজাজ। তিনি বলেন, আমি বেশ কয়েকটি গরু দেখেছি। তবে দাম চাহিদা অনুযায়ী বেশি চাচ্ছেন বিক্রেতারা। মাঝারি সাইজের একটি গরু দেখেছি, যার দাম এক লাখের বেশি হওয়ার কথা না। কিন্তু এই দাম বলার পরেও তারা দিচ্ছে না। তাদের দাবি এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। তবে এই টাকা দিয়ে আরো একটু বড় গরুও কেনা সম্ভব। ঘুরে দেখছি যদি পছন্দ হয় তাহলে কিনে নেবো।
আরিফুল আলম নামে একজন ক্রেতা বলেন, আজকে দেখার জন্য এসেছি। তবে পছন্দ হলে কিনতেও পারি। বেপারীরা যেই দাম বলছে তাতে একটু বেশি মনে হচ্ছে। তবে শেষ সময়ে কিছুটা কমতে পারে। তাই সেই অপেক্ষায় আছি। তা ছাড়া বাসায় রাখার মতো জায়গা নেই। সেজন্য ঈদের রাতে কেনার ইচ্ছে। বাজার ভালোই জমে উঠেছে। আগামীকাল থেকে আরো বেশি জমবে।
মেহেরপুর থেকে ৩১ মে আটটি গরু নিয়ে রাজধানীর কমলাপুর গরুর হাটে আসেন তৌফিক এলাহি। তিনি বলেন, এখনো পর্যন্ত একটি গরুও বিক্রি করতে পারিনি। গত কয়েক দিন তেমন ক্রেতা না আসলেও বুধবার থেকে অনেকেই এসে দাম বলছেন। আমাদের পোষায় না বলে বিক্রি করছি না। আমাদের খরচ মিলিয়ে একটি গরুর দাম দেড় লাখ টাকা চাইলেও ক্রেতারা মাত্র এক লাখ টাকা বলে। কমে বিক্রি করতে গেলে আমার খরচও উঠবে না। ক্রেতাদের দামের সাথে আমাদের অনেক পার্থক্য থাকে এতে করে গরু ছাড়তে পারছি না। অল্প লাভেও ছাড়তে রাজি আছি। তবে বিনালাভে কেউ গরু ছাড়বে না। মেহেরপুর থেকে এগুলোকে আনতে আমাদের অনেক টাকা খরচ হয়েছে।
গত রোববার মেহেরপুর থেকে ২৬টি গরু নিয়ে ঢাকার কমলাপুর হাটে আসেন মহিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাজারে এখন কিছু বেচাকেনা বেড়েছে। আমি এখন পর্যন্ত পাঁচটি গরু বিক্রি করতে পেরেছি। আশা করছি আজ বুধবার রাত থেকে ভালো বিক্রি হবে। তবে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার পুরোদমে বেচাকেনা হবে। আমরা যা চাচ্ছি ক্রেতারা সেই অনুযায়ী দাম বলতে চাচ্ছে না। অনেকের ধারণা না থাকার কারণে বড় গরুকে ছোট গরুর দাম বলে।
কমলাপুর গরুর হাটের হাসিলের দায়িত্বে থাকা মো: সালাম বলেন, গত কয়েক দিনের চেয়ে আজকে (গতকাল) বাজার জমজমাট হয়ে উঠেছে। জমজমাট হলেও কেউ কেউ আসছেন দেখতে। হয়তো সন্ধ্যার পর থেকে বেশি বেচাকেনা হবে। তবে যাদের বাজেট বেশি সেই সব লোক গরু কিনে নিচ্ছেন। গতকাল বুধবার থেকে অফিস বন্ধ হয়েছে। তাই সবাই রাতের দিকে হাটে এসে গরু কেনার চেষ্টা করবে। তবে বিগত দিনের চেয়ে আজকে বেশি বিক্রি হচ্ছে। গড়ে দুই লাখ টাকার মধ্যে গরু বেশি বিক্রি হয়েছে। অন্যান্য গরুও বিক্রি হচ্ছে। ছোট গরুগুলোর ক্রেতারা মূলত শেষের দিকে কিনে।