৮ বিভাগে গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার ট্রাইব্যুনাল গঠন

ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ- এই আট বিভাগে ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হবে। প্রতিটি ট্রাইব্যুনালে একজন চেয়ারম্যান (হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি) এবং দুইজন সদস্য থাকবেন। ট্রাইব্যুনালগুলোকে গুম সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ, তদন্ত তদারকি, সাক্ষ্যগ্রহণ, দায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন ও রায় প্রদানের ক্ষমতা দেয়া হবে।

নিজস্ব প্রতিবেদক
Printed Edition

দেশজুড়ে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ ওঠা গুম, বলপূর্বক নিখোঁজ ও রাষ্ট্রীয় সহিংসতার ঘটনাগুলোর বিচার নিশ্চিত করতে দেশের ৮টি বিভাগে পৃথক ‘গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার ট্রাইব্যুনাল’ গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এই ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

সরকারি সূত্র অনুযায়ী ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ- এই আট বিভাগে ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হবে। প্রতিটি ট্রাইব্যুনালে একজন চেয়ারম্যান (হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি) এবং দুইজন সদস্য থাকবেন। ট্রাইব্যুনালগুলোকে গুম সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ, তদন্ত তদারকি, সাক্ষ্যগ্রহণ, দায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন ও রায় প্রদানের ক্ষমতা দেয়া হবে।

গুমবিরোধী আইনি কাঠামো : আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জাতিসঙ্ঘের ঊহভড়ৎপবফ উরংধঢ়ঢ়বধৎধহপব ঈড়হাবহঃরড়হ অনুসরণ করে একটি বিশেষ আইন প্রণয়নের আলোকে ট্রাইব্যুনালগুলো পরিচালিত হবে। এই আইনে গুমকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হবে এবং রাষ্ট্রীয় বা রাষ্ট্র-সমর্থিত কোনো সংস্থা বা ব্যক্তির দায় এড়ানোর সুযোগ থাকবে না।

ভুক্তভোগীদের জন্য প্রতিকার ব্যবস্থা : ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে শুধু বিচারই নয়, ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর জন্য ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন, মানসিক সহায়তা এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমা ও স্বীকৃতির ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে। প্রত্যেক বিভাগে একটি করে ভুক্তভোগী সহায়তা সেল থাকবে, যেখানে আইনি সহায়তা, তথ্যসংরক্ষণ ও সাক্ষী সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকবে।

তদন্তে স্বাধীনতা : ট্রাইব্যুনালের অধীনে একটি স্বাধীন তদন্ত ইউনিট কাজ করবে, যেখানে সাবেক বিচারক, মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ, ফরেনসিক তদন্তকারী এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষক অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। প্রয়োজনে ট্রাইব্যুনাল যেকোনো নিরাপত্তা সংস্থা বা সরকারি দফতর থেকে নথি তলব করতে পারবে।

মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিক্রিয়া : দেশের শীর্ষ মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা বলছে, দীর্ঘদিন ধরে গুমের অভিযোগের বিষয়ে কার্যকর বিচার না হওয়ায় রাষ্ট্রের ওপর জনগণের আস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভাগভিত্তিক ট্রাইব্যুনাল হলে বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত হবে এবং ভুক্তভোগীদের আদালতে আসা সহজ হবে।

রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় দায় নির্ধারণ : আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ট্রাইব্যুনাল কেবল ব্যক্তি নয়, প্রয়োজনে প্রাতিষ্ঠানিক ও নীতিগত দায় নির্ধারণের পথও খুলে দেবে। অতীতে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সংঘটিত গুমের ঘটনাগুলো রাষ্ট্রীয় জবাবদিহিতার আওতায় আনা সম্ভব হবে।

বাস্তবায়নের সময়সূচি : সরকার আশা করছে, ২০২৬ সালের প্রথম প্রান্তিকের মধ্যেই ট্রাইবুনালগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করবে। এর আগে বিধিমালা, জনবল নিয়োগ এবং অবকাঠামোগত প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত এই উদ্যোগ বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় একটি ঐতিহাসিক মোড় হতে পারে- যেখানে গুমের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ‘আর কখনো নয়’ নীতির বাস্তব প্রতিফলন ঘটবে।