এস এম রহমান পটিয়া-চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম)
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে সরগরম হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসন। বঙ্গোপসাগর ও পাহাড়বেষ্টিত এ উপকূলীয় এলাকায় নির্বাচনী আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখন মাঠে সরব, গ্রামগঞ্জে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কুশলবিনিময় করছেন, আয়োজন করছেন সভা-সমাবেশ।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে (ঘোষণা অনুযায়ী) অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনে এ আসনকে ঘিরে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি) ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে। অন্য দিকে বিএনপি থেকে অর্ধডজন নেতা মনোনয়নের আশায় দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। এ ছাড়া ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) থেকেও একজন প্রার্থী ইতোমধ্যে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।
জামায়াতে ইসলামী থেকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ জহিরুল ইসলাম একক প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। এলডিপি থেকে অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন চৌধুরী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে আল্লামা হাফেজ ফরিদ আহমদ আনসারী এবং এনসিপি থেকে কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব মীর এরশাদুল হক দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন।
অন্য দিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায় রয়েছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী মরহুম জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর দুই ছেলে- দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা ও জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর। এ ছাড়া আছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও গণ্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ লেয়াকত আলী, বাঁশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র আলহাজ কামরুল ইসলাম হোছাইনী ও বৈলছড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো: ইব্রাহিম বিন খলিল।
চট্টগ্রাম মহানগর থেকে ৪৪ কিলোমিটার দূরের এই উপজেলা উত্তরে শঙ্খ নদী ও আনোয়ারা, পূর্বে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া, দক্ষিণে কক্সবাজারের চকরিয়া-পেকুয়া ও পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর দ্বারা বেষ্টিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ধর্মীয় সম্প্রীতির জন্য পরিচিত এই উপজেলায় মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বসবাস করছেন।
এ আসনের সাথে জড়িয়ে আছে মরহুম বিএনপি নেতা আলহাজ জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর ঐতিহ্য। তিনি ১৯৯৬ (দু’বার), ২০০১ ও ২০০৮ সালে মোট চারবার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার জনপ্রিয়তা এখনো স্মরণীয় বাঁশখালীবাসীর কাছে।
জামায়াতের প্রার্থী অধ্যক্ষ জহিরুল ইসলাম হচ্ছেন উপজেলার বিশিষ্ট পীর মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক সাহেবের ছেলে। তিনি ২০১৪ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জামায়াতের প্যানেল নিয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে আলোচনায় আসেন। তার নেতৃত্বে সেই নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াতপন্থীরা জয়ী হয়েছিলেন, পরাজিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা।
স্থানীয়রা জানান, বর্তমানে বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিভাজন থাকলেও জামায়াতের জহিরুল ইসলাম ক্লিন ইমেজের কারণে দলমত নির্বিশেষে জনপ্রিয়। তারা মনে করেন, ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে।
বাঁশখালী উপজেলা বিএনপি নেতা ও সাবেক কালিপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আমিনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, দল যাকে মনোনয়ন দেবে, আমরা সবাই এক হয়ে তার পক্ষেই কাজ করব।
গণ্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ লেয়াকত আলী বলেন, ২০১৮ সালে জেল থেকেই আমি দলীয় প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছিলাম। গত ১৬ বছর নানা নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করে দলের জন্য কাজ করেছি। মানুষের অধিকার রক্ষায় লড়েছি। তাই এবারো আশা করি দল আমাকেই মনোনয়ন দেবে।
অন্য সম্ভাব্য প্রার্থী মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা বলেন, আমার বাবা মরহুম জাফরুল ইসলাম চৌধুরী চারবার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি ও বাঁশখালীর জনপ্রিয় নেতা। তার আদর্শ ধারণ করে আমি রাজনীতিতে এসেছি। মনোনয়ন পেলে বাঁশখালীর জনগণ আমাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবে- এ বিশ্বাস রাখি।
অন্য দিকে জামায়াতের একক প্রার্থী অধ্যক্ষ জহিরুল ইসলাম বলেন, বাঁশখালীর মানুষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আমাকে ও জামায়াতের প্যানেলকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছিল। এবারো জনগণ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে রায় দেবেন বলে আমি আশাবাদী।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাঁশখালী আসনে লড়াইটা হবে মূলত বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যেই। বিএনপি যদি অভ্যন্তরীণ বিভাজন কাটিয়ে একক প্রার্থী দিতে পারে, তাহলে তারা শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়বে। অন্য দিকে জামায়াতের জহিরুল ইসলাম ইতোমধ্যে মাঠে সংগঠিত ও জনপ্রিয় প্রার্থী হিসেবে অবস্থান তৈরি করেছেন।
সব মিলিয়ে বঙ্গোপসাগর ও পাহাড়বেষ্টিত এই শান্তিপ্রিয় বাঁশখালী উপজেলাই এখন চট্টগ্রাম দক্ষিণের রাজনীতির অন্যতম আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। এখানকার নির্বাচনের ফলাফল অনেকটাই নির্ভর করবে বিএনপির মনোনয়ন প্রক্রিয়া ও ঐক্যের ওপর, আর জামায়াতের সাংগঠনিক শক্তি কতটা ভোটে রূপ নিতে পারে- তা নিয়েই জল্পনা চলছে সর্বত্র।



