১ সপ্তাহের মধ্যে ঘোষণা হতে পারে বিএনপির জোট প্রার্থী

বিএনপির সাথে থাকা দলগুলোর সাথে আসন নিয়ে বিএনপির আলোচনা শেষপর্যায়ে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আসনগুলোর বিষয় আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়া হবে বিএনপির পক্ষ থেকে। এরপরই চূড়ান্ত করা হবে বিএনপির মোট ৩০০ আসনের প্রার্থী।

ইকবাল মজুমদার তৌহিদ
Printed Edition

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বড় রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। জামায়াতে ইসলামী ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করলেও বিএনপি ২৩৭ আসনে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। গুঞ্জন রয়েছে বাকি ৬৩টি আসনে বিএনপির সাথে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকা দলগুলোর সাথে আলোচনা করে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে।

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বিএনপির সাথে থাকা দলগুলোর সাথে আসন নিয়ে বিএনপির আলোচনা শেষপর্যায়ে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আসনগুলোর বিষয় আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়া হবে বিএনপির পক্ষ থেকে। এরপরই চূড়ান্ত করা হবে বিএনপির মোট ৩০০ আসনের প্রার্থী।

সূত্রটি জানায়, বিএনপির সাথে যেসব দল নির্বাচনে যাবে তাদের মধ্যে যাদের নিবন্ধন নেই তারা বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হবেন। যাদের নিবন্ধন আছে তারা নিজ দলের প্রতীক নিয়ে লড়বেন। তবে নিবন্ধন থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর অনেকে আবার বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়তে চান। এ জন্য তারা নির্বাচন কমিশনের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানায় সূত্রটি।

গতকাল শনিবার বিএনপির সাথে থাকা সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সাথে কথা হলে তারা এসব বিষয় জানান। গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে ১৭৮জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছি। এখন বিএনপির সাথে আমাদের আলোচনা হচ্ছে। দেখা যাক কী হয়।

বিএনপির কাছে গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে কয়টি আসন চাওয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে সাইফুল হক বলেন, আমরা ৫০টির মতো আসন নিয়ে আলোচনা করছি। আলোচনার পরে সিদ্ধান্ত হবে কয়টি হচ্ছে।

১২দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা নয়া দিগন্তকে বলেন, আমাদের ১২ দল থেকে তিনজন প্রার্থীকে চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে সেটা হয়তো আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে।

এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল অলি আহমেদ নয়া দিগন্তকে বলেন, বিএনপির সাথে আলোচনার কথা রয়েছে। কয়টি আসন নিয়ে আলোচনা হবে সেটা বিএনপিকেই বলব।

গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর নয়া দিগন্তকে জানান, বিএনপি ও জামায়াত উভয়ের সাথে তাদের আলোচনা হয়েছে। এসব আলোচনায় কোনো সমঝোতা হয়নি। কিন্তু সম্মানজনক আসন বিএনপির পক্ষ থেকে ছাড় দেয়া হলে বিএনপির সাথে জোট হতে পারে। তবে গণমাধ্যমে দু-তিনটি আসন ছাড় দেয়ার যে খবর ছাপা হয় তা অবাস্তব।

তিনি জানান, গতকাল শনিবার আমাদের দলের মিটিং হয়েছে। যেহেতু উচ্চ কক্ষে পিআর পদ্ধতিতে প্রতিনিধি নির্বাচিত হবে। সেহেতু সম্মানজনক আসন ছাড় না পেলে আমরা এককভাবে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের প্রধান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ নয়া দিগন্তকে জানান, গত বুধবার আমাদের সাথে বিএনপির আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা ৯টি আসন চেয়েছি। এখন আল্লাহ ভাগ্যে কী রাখছেন আল্লাহ ভালো জানেন। গণফোরামের কার্যকর সভাপতি সুব্রত চৌধুরী নয়া দিগন্তকে জানান, এখনো পর্যন্ত আমাদের সাথে বিএনপির আসন ভাগাভাগি নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি। তবে আমাদের পক্ষ থেকে ১৭টি আসন চেয়ে একটি তালিকা দেয়া হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির পক্ষ থেকে তালিকাটি ছোট করে দেয়ার অনুরোধ করা হয়। এরপরে আমরা ছয়টি আসন চেয়ে একটি তালিকা বিএনপির কাছে দিয়েছি। এখন আনুষ্ঠানিক আলোচনার পরে সিদ্ধান্ত জানা যাবে।

এ ছাড়া ঢাকা-১৭ আসনে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, ঢাকা-১৩ আসনে এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে নারায়ণগঞ্জ জেলা জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের সভাপতি মুফতি মনির হোসেন কাসেমীকে গ্রিণ সিগন্যাল দেয়া হয়েছে বলে জানা যায়। বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীর দাবি জোট প্রার্থী চূড়ান্ত হলে বিএনপির ঘোষিত সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হোক। যতদ্রুত প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে তত দ্রুত দলের অভ্যন্তরে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে যে দূরত্ব রয়েছে তা দূর হবে।

তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আরো জানান, মনোনয়ন চূড়ান্ত না হওয়ায় সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় থাকা অনেক ত্যাগী নেতা ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছেন। মিথ্যা অভিযোগ, এআই ট্যুল ব্যবহার করে কৃত্রিম ভুয়া ফোন রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে বিব্রত করা হচ্ছে অনেক প্রার্থীকে।

সামগ্রিক বিষয় নিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী নয়া দিগন্তকে বলেন, দীর্ঘ সময় যেসব দল আমাদের সাথে রাজপথে ছিল তাদের বিষয় আমাদের কমিটমেন্ট রয়েছে। সেই কমিটমেন্ট অনুযায়ী অবশ্যই তাদের আসন ছাড় দেয়া হবে।

নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের প্রার্থীসহ সারা দেশে বিভিন্ন সম্ভব্য প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভুয়া ফোন রেকর্ডসহ নানা অপপ্রচার চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় কোনো প্রভাব ফেলবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে রুহুল কবির রিজভী বলেন, এআইয়ের যুগে নানান পক্ষ থেকে এরকম অপপ্রচার অস্বাভাবিক না। এসব অপপ্রচার চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় কোনো প্রভাব ফেলবে না।