পাচারকারীদের সম্পর্কে সতর্ক থাকার আহ্বান

লিবিয়ার ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে ফিরেছেন হাজারো বাংলাদেশী

অবৈধভাবে বিমানবন্দর পার হয় কিভাবে, প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের

মনির হোসেন
Printed Edition

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ লিবিয়ার বেনগাজি ও ত্রিপোলির বিভিন্ন ডিটেনশন ক্যাম্পে কতজন বাংলাদেশী আটক থেকে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তার সঠিক পরিসংখ্যান বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে নেই। তবে যারা মাফিয়াদের হাত থেকে বেঁচে দূতাবাসের আশ্রয়ে যেতে পারছেন, তাদেরকে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম-এর সহযোগিতায় বিশেষ ফ্লাইটে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এমন বেশ কয়েকটি চার্টার ফ্লাইটে গত মাসে প্রায় এক হাজার বাংলাদেশী দেশে ফিরেছেন।

লিবিয়ার ত্রিপোলির বাংলাদেশ দূতাবাসের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে মোট তিন দফায় ৯২৮ বাংলাদেশীকে আইওএম-এর সহযোগিতায় দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

সর্বশেষ গত ৩০ অক্টোবর ৩১০ জন লিবিয়া থেকে বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। তাদেরকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে গাড়িভাড়া ও খাওয়াসহ সার্বিক সহযোগিতা দেয়া হয়েছে।

ফেরত আসা এই হতভাগ্যরা তাদের ওপর চলা জুলুম ও নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন। তারা যাদের (দালাল) প্রলোভনে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তারা।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে লিবিয়ার ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে থাকা মাদারীপুরের সাত্তার বলেন, সাগরপথে ইউরোপের দেশ ইতালিতে পাড়ি দিতে গিয়ে অনেকেই কোস্টগার্ডের অভিযানে আটক হয়ে লিবিয়ার ডিটেনশন ক্যাম্পে ঠাঁই পান। দূতাবাসের হস্তক্ষেপে অনেকে দেশে ফিরলেও এখনো অনেক বাংলাদেশী মাফিয়াদের ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে আছেন। এরমধ্যে বর্তমানে লিবিয়ার ত্রিপোলির তাজুইরা ও বেনগাজির গানফুদা ডিটেনশন সেন্টারে অনেক বাংলাদেশী আটক রয়েছেন।

লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ঢাকার ফকিরাপুলকেন্দ্রিক মানবপাচারকারী চক্র সারা দেশ থেকে মানুষ সংগ্রহ করে বিমানবন্দর পার করে উড়োজাহাজে উঠিয়ে দিচ্ছে। এই চক্রকে নির্মূল না করা পর্যন্ত মানবপাচারের সংখ্যা কোনোভাবেই কমবে না। এ নিয়ে দূতাবাস থেকে লিবিয়া দিয়ে ইউরোপে মানবপাচারে কোন কোন চক্র জড়িত, তাদের কারা কারা সহযোগিতা করছেন তার বিস্তারিত প্রতিবেদন ঢাকায় দেয়া হচ্ছে।

ঢাকার বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন ব্যবহার করে কিভাবে অবৈধ লোক উড়োজাহাজে চলে যাচ্ছে- এমন তথ্য জানতে গত সপ্তাহে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের বক্তব্য নিতে তার দফতরে গেলে তিনি এসব অভিযোগের বিষয়ে প্রতিবেদন থাকলে সেটি দিতে বলেন। তবে তিনি নয়া দিগন্তের প্রতিবেদকের কাছে কোনো মন্তব্য করেননি।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, এই রুটে মানবপাচার কমাতে হলে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যারা সরাসরি সম্পৃক্ত তাদের কর্মকাণ্ড সরাসরি মনিটরিং করতে হবে। একই সাথে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে আরো তৎপর হতে হবে। পাশাপাশি এই ফাঁদে যারা পা দিচ্ছেন তাদের সতর্ক থাকতে হবে বলে মনে করছেন অভিবাসন বিশ্লেষকরা।