হামজা ডামাডোলেও ফুটবলারদের হতাশা

রফিকুল হায়দার ফরহাদ
Printed Edition

হামজা চৌধুরীকে নিয়ে ভারতের মাটি থেকে ড্র করে আসা। এবার হামজা চৌধুরীর সাথে কানাডা প্রবাসী সমিত সোম এবং ইতালি প্রবাসী ফাহামিদুল ইসলাম। সাথে জামাল ভূঁইয়া ও তারিক কাজীও আছেন। দেশের ক্রীড়াঙ্গনে এখন ক্রিকেট বোর্ডে ফারুক আহমেদকে অপসারণ এবং আমিনুল ইসলামকে নতুন সভাপতি করা নিয়ে মূল আলোচনা। এই আলোচনা গত চার দিন ধরেই। এর আগ থেকে দেশের ক্রীড়াঙ্গন মেতে আছে ১০ জুনের বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের ম্যাচকে ঘিরে। অনলাইনে এই ম্যাচের টিকিট কেনা নিয়ে কী ঘটনাই না ঘটে গেল। সবাই চান বাংলাদেশ দল যেন এই হাইফের মধ্যেই জিততে পারে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে। এই উদ্দেশ্যে গতকাল থেকে শুরু হচ্ছে জাতীয় দলের ক্যাম্প। অন্য দিকে আজ থেকে আগামী সিজনের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলের দলবদল শুরু। দলবদল মানে ফুটবলারদের উৎফুল্ল হওয়ার কথা। অথচ এবার এ নিয়ে বাড়তি উল্লাসতো নেই-ই। উল্টো হতাশা ও টেনশন। ক্লাবগুলো এখনো কথাই বলা শুরু করেনি ফুটবলারদের সাথে, যা তাদের পারিশ্রমিক কমিয়ে দিতে পারে।

অতীতে দেখা গেছে মধ্যবর্তী দল বদলের পর থেকেই পরের সিজনের দল গঠনের জন্য ক্লাবগুলো কথা বলা শুরু করে বিভিন্ন ফুটবলারের সাথে। মোটামুটি তখনই কয়েক ক্লাবের দল গঠন প্রায় চূড়ান্ত হয়ে যায়। তবে এবারের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। দুই একটি ব্যতিক্রম ছাড়া কোনো ক্লাবই কথা বলা শুরু করেনি ফুটবলারদের সাথে।

এবারের লিগে চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড। প্রথম বারের মতো পেশাদার লিগের শিরোপা জিতে দলটি এখন ফুটবলারদের সংবর্ধনা দেয়ার বিশাল আয়োজন করছে। ক্লাব ও সমর্থক দল মিলে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে সংবর্ধনা দেবে চ্যাম্পিয়ন সদস্যদের। অথচ এই ক্লাব এখনো সোলেমান দিয়াবাতে, সুজন হোসেন, শান্তদের পুরো পারিশ্রমিক দিকে পারেনি। তাদের এই বকেয়াই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দিতে যাচ্ছে ক্লাব কর্মকর্তারা। আজ ক্লাবের উদ্যোগে সংবর্ধনা। মোহামেডানের মতো আবাহানী, ব্রাদার্স ইউনিয়নসহ অন্য বড় ক্লাবগুলোও তাদের ফুটবলারদের বকেয়া পারিশ্রমিক দিতে পারেনি।

এই অবস্থাকে হতাশাজনকই মনে করছেন চ্যাম্পিয়ন মোহামেডানের গোলরক্ষক কোচ ছাঈদ হাছান কানন। তার মতে, ‘জানি না আগামী সিজনে ফুটবলাররা কত টাকা করে পারিশ্রমিক পাবে। সে পরিস্থিতি চলছে তা কিন্তু আমার কাছে হতাশা জনকই।’ বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান জানান, ‘আমরা এখনো কথা বলা শুরু করিনি ফুটবলাদের সাথে।’ ক্লাবের অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে ঈদের পর ফুটবলারদের সাথে বসবে ক্লাব কর্তৃপক্ষ।

মোহামেডানের গোলপোস্ট আগলেছেন সুজন হোসেন ও সাকিব আল হাসান। কিপার সাকিব আল হাসান জানান, ‘আমরা অন্য সময় দেখতাম মধ্যবর্তী দলবলের সময়ই পরের সিজনের জন্য দল গঠন শুরু করে ক্লাবগুলো। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম। কোনো ক্লাবই কথা বলছে না।’ পুলিশের স্ট্রাইকার আল আমিন অবশ্য জানান, তার সাথে কয়েক ক্লাব কথা বলেছে।

ব্রাদার্সের ম্যানেজার আমের খান জানান, ‘ফুটবলের দল বদলের এই অবস্থায় আশাবাদী করছে না। দেখলাম কিছু সিনিয়র খেলোয়াড় টেনশনে আছে। আসলে যারা এত দিন অনেক টাকা আয় করে লাইফ স্টাইলকে উঁচু পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল তারা এখন টাকা কম পাচ্ছে। জানি না আগামী দলবদলে তারা কেমন টাকা পাবে। কম টাকা পেলে তারা কি সেই জীবনযাপন বজায় রাখতে পারবে।’ আমেরও জানান, আমরা এখনো কোনো খেলোয়াড়ের সাথে কথা বলিনি আগামী সিজনের জন্য।

গত বছর দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে দুই শীর্ষ ক্লাব শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র এবং লে. শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব দল বদলে অংশ নেয়নি। চট্টগ্রাম আবাহনী পেটে ভাতে খেলোয়াড়দের দলে টানে। তিন ক্লাবের এই দুরবস্থার কারণে রাতারাতি ফুটবলারদের দাম পড়ে যায়। নাবিব নেওয়াজ জীবন, শহীদুল আলম সোহেলদের ঢাকা আবাহনীতে খেলা হয়নি। আগে যারা ৬০ লাখ টাকা পেত তাদের রহমতগঞ্জে খেলতে হয়েছে মাত্র ৫ লাখ টাকায়। এ ছাড়া ফয়সাল আহমেদ শীতলের মতো এএফসি কাপে খেলা ফুটবলারকে খেলতে হয়েছে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের দল উত্তর বারিধারায়। প্রিমিয়ারের ক্লাব পাননি।

সদ্য সমাপ্ত বিসিএল থেকে আগামী বিপিএলে প্রমোশন পেয়েছে পিডব্লিউডি ও আরামবাগ ক্রীড়া সঙ্ঘ। পিডব্লিউডির স্ট্রাইকার মিনহাজুল আবেদীন স্বাধীন জানান, ‘শুনেছি প্রিমিয়ারে খুব একটা ভালো দল গড়বে না পিডব্লিউডি। এটা হতাশাজনক। আমার সাথেও কোনো ক্লাব এখনো কথা বলেনি।’ আরামবাগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী নিশ্চিয়তা দিতে পারলেন না কেমন দল হবে প্রিমিয়ারের জন্য। অর্থ সঙ্কটই নেপথ্য হিসেবে উল্লেখ করলেন। তিনি তথ্য দেন, ‘আমরা যদি বিসিএলের সময় ফুটবলারদের ঠিকমতো টাকা দিতাম তাহলে চ্যাম্পিয়নই হতাম।’