বিশেষ সংবাদদাতা
নিরাপত্তা বিষয়সহ বাংলাদেশের সাথে প্রথমে একটি ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে গত কয়েক দিনে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে যে আলোচনা হয়েছে, তাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এরপর ট্যারিফ (শুল্ক) ও নন-ট্যারিফ (অশুল্ক) বিষয়ে আলোচনা হবে। তবে বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করার বিষয়ে সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান একথা বলেছেন।
গতকাল সচিবালয়ে জ্বালাানি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, বন্দর ও রাজস্ব অধিকতর গতিশীল করার জন্য গঠিত কমিটি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, আগামীতে এনবিআর (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) বলে কিছু থাকবে না।
ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি নিয়ে ফাওজুল কবির বলেন, আমেরিকার কিছু কৌশলগত বিষয়ে রয়েছে। তার মধ্যে নিরাপত্তা ও অন্য দেশের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত।এখন ট্যারিফ অফার নিয়ে আলোচনা করবে। নন-ট্যারিফ বাধা কী কী আছে, সেগুলো দূর করার জন্য কী করণীয়, সেসব বিষয়ে আলোচনা হবে। আশা করা হচ্ছে ১ আগস্টের আগেই আলোচনা শেষ হবে। বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করার বিষয়ে সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে।
এলএনজি আমদানির বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট কোনো আলোচনা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজিসহ অন্য পণ্য আমদানি করা হচ্ছে। এক্সিলারেট এনার্জি থেকে আমদানি হচ্ছে। শেভরনের সাথে কাজ হচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগে সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিয়োগে যোগ্যতা নির্ধারণে নীতিমালা করার সুপারিশ দেয়া হচ্ছে বলে জানান।
এনবিআরে সংস্কার উদ্যোগ বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে প্রায় দুই মাস আন্দোলন করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ আন্দোলনের বিষয়ে ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘আমরা দেখলাম যে সমস্যাটার সূত্রপাত কোথায়। সমস্যার সূত্রপাত বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের সাথে অন্যান্য ক্যাডারের যে বিরোধ শুল্ক, আবগারি, আয়কর কর্মকর্তাদের, এটি একটি পুরোনো বিরোধ। ২৪ ক্যাডার মিলে ওদের আরেকটি অ্যাসোসিয়েশন আছে। এটা হচ্ছে মূল কারণ।’
তিনি বলেন, তবে কথা হলো অধ্যাদেশকে (রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫) কেন্দ্র করে এটা হলো কেন? দুটি কারণে এটি হয়েছে। অধ্যাদেশটাতে কিছু মৌলিক ত্রুটি আছে। আমরা বলবো- এখানে কিছুটা চতুরতার আশ্রয় নিয়েছেন যারা এই অধ্যাদেশ প্রণয়ন করেছেন তারা। যেমন ধরুন, অধ্যাদেশে আছে সরকার উপযুক্ত কোনো যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মকর্তাকে রাজস্ব নীতি বিভাগের সচিব নিয়োগ দিতে পারবেন। এখন উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন কে? এক্ষেত্রে তো আপনি যে কোনো লোককে সচিব করতে পারবেন। এটা একটা সমস্যা। সরকারি রাজস্ব আহরণ কাজে অভিজ্ঞতার কথা বলা হয়েছে। কিছু সমস্যা আমরা কমিটি চিহ্নিত করেছি। আমরা এগুলোকে বিবেচনায় নেয়ার পরামর্শ দেবো।
তিনি বলেন, এনবিআরে চাকরি করছেন শুনে সবাই একটা লম্বা হাসি দেয়। আপনারা সবাই জানেন এই হাসিটার অর্থ কী! তাই এনবিআর না থাকাটাই সবার জন্য ভালো। দু’টি বিভাগের কথা বলা হয়েছে, দু’টি বিভাগ হবে।’
অধ্যাদেশ অনুযায়ী দু’টি ক্যাডার কর্মকর্তাদের নিয়ে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব বিভাগ গঠিত হবে জানিয়ে ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘আমরা কমিটি থেকে মনে করি এটাও গ্রহণযোগ্য নয়। দুই বিভাগে প্রশাসন ক্যাডারের খবরদারি এটাও গ্রহণযোগ্য নয়। ওরা (শুল্ক, আবগারি ক্যাডার) বলছে সব লোক আমাদের হতে হবে, এটাও গ্রহণযোগ্য নয়। তাহলে আমাদের যেটা করতে হবে, সেটা হলো- এই যে নতুন দু’টি বিভাগ হবে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব বাস্তবায়ন- এই দু’টি বিভাগের সচিব কারা হবেন সেই বিষয়ে একটি নীতিমালা করতে হবে। সেখানে বলা হবে এই এই যোগ্যতা থাকতে হবে। শুধু সচিব না, এটার ঊর্ধ্বতন পদগুলোতেও নিয়োগের জন্য নীতিমালা করতে হবে, যাতে রাজস্ব আদায় কার্যক্রমটা আরো বেগবান হয়। আমাদের রাজস্ব আদায় হার অত্যন্ত কম, এটা যাতে বাড়ে, বন্দরে হয়রানি ও কন্টেইনার জটও যাতে আমরা পরিহার করতে পারি।
কমিটি মাঠ পরিদর্শন করে একটা প্রতিবেদন দেবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, এনবিআরের কর্মকর্তাদের আন্দোলনের ফলে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি নিরূপণের বিষয়টি নৌপরিবহন উপদেষ্টা বিবেচনা করছেন।
‘এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তাদের আচার-আচরণের মাধ্যমে সরকারের হারিয়ে যাওয়া আস্থা অর্জন করতে হবে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গতকাল বিশ্বব্যাংক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেখানে তারা বলেছে, বাংলাদেশে এখন যে পরিস্থিতি তাতে আগামীতে মঙ্গা দেখা দিতে পারে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘না, আমি এটা মোটেই মনে করি না। আমি উল্টোটা মনে করি। অর্থনীতি এখন মূলত পিকআপ করছে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘এই প্রতিবেদনগুলোর ডেটাগুলো ছয় মাস আগের। ওই সময়টা তো আমরা পার হয়ে এসেছি। ডলারের দাম কমেছে আপনি শুনেছেন? ডলারের দাম তো কমেছে বাজারে, আপনাদের পত্রিকাতেই এসেছে। উল্টোটাই এখন সত্য- অর্থনীতি এখন গতিশীল হয়েছে। তবে আমরা যেখানে চাই সেখানে গেছে, এটা নয়। তবে মঙ্গা, ব্যাংকক্রাপসি আমরা পিছনে ফেলে এসেছি।’
প্রসঙ্গত, গত ৩০ জুন ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, বন্দর ও রাজস্ব আদায় কার্যক্রম অধিকতর গতিশীল করতে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি গঠন করে সরকার।
পাঁচ সদস্যের এই কমিটিতে আরো রয়েছেন- নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) এম সাখাওয়াত হোসেন; বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।



