চট্টগ্রামের বিতর্কিত ব্যবসায়ী সাইফুল আলম মাসুদ ওরফে এস আলম ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং অপরাধ তদন্তে তিন সংস্থার সমন্বয়ে একটি যৌথ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সিআইডি ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কমিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে সিএসআরের অর্থ কিভাবে ব্যয় হয়েছে, এস আলম ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কী পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে তার তদন্ত করতে মাঠে নেমেছে। এজন্য ২০১৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মোট ৮ বছরের সিএসআর ব্যয়ের তথ্য তলব করেছে। একইসাথে সিএসআরের অর্থ বের করে নিতে যেসব কর্মকর্তা স্বাক্ষর করেছেন বা সহযোগিতা করেছেন তাদেরও তথ্য চাওয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দুদক থেকে ইসলামী ব্যাংকের কাছে পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ঋণের নামে ইসলামী ব্যাংকসহ এস আলমের দখলে থাকা ব্যাংকগুলো থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার পাশাপাশি গরিব দুঃখীদের ব্যয় করার জন্য সিএসআর তহবিলও নানা কায়দায় হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। আর এ কাজে সরাসরি সহযোগিতা করেছিল এস আলমের পিএস ও পরে ইসলামী ব্যাংকের ডিএমডি আকিজ উদ্দিন ও মিফতা উদ্দীন। বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক তদন্তে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
ইসলামী ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ধূর্ত আকিজ ও মিফতা কোনো ফাইলে স্বাক্ষর করতেন না। ইসলামী ব্যাংকের কিছু নিরীহ কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুতির ভয় দেখিয়ে, কখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে হেনস্তা করার ভয় দেখিয়ে তাদের মাধ্যমে ফাইলে স্বাক্ষর করে অর্থ বের করে নিতেন। এর নির্দেশদাতা ছিলেন আকিজ উদ্দিন ও মিফতা উদ্দিন, কিন্তু নিরীহ কিছু কর্মকর্তাদের দিয়ে ফাইলে স্বাক্ষর করিয়ে অর্থ বের করে নেয়ায় স্বাক্ষরদাতা হিসেবে ওইসব নিরীহ কর্মকর্তারাই এখন তদন্তের আওতায় চলে আসছে। এমন এক ভুক্তভোগী কর্মকর্তা গতকাল নয়া দিগন্তকে এস আলম মূলত আকিজ ও মিফতাকে দিয়েই ব্যাংক চালাতেন। ব্যাংকের এমডি শুধু হুকুম তামিল করতেন। এমডিও অনেক সময় ব্যাংকের স্বার্থ সংরক্ষণে আকিজের হুকুম তামিল না করলে তাকে ডিবি হারুনকে দিয়ে হয়রানি করা হতো। একাধিক দিন এমডিকে ডিবি অফিসে ডেকে নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখারও অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে আকিজ উদ্দিন ও মিফতা উদ্দিনের হয়রানির হাত থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই তাদের অনৈতিক হুকুম তামিল করতে ফাইলে স্বাক্ষর করতেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক তদন্তে এস আলমের দখলে থাকা ব্যাংকগুলো থেকে ঋণের নামে অর্থ বের করে নেয়ার পাশাপাশি সিএসআরের অর্থ থেকেও বিপুল টাকা বের করে নেয়া হয়েছে। এসব অর্থের বেশির ভাগই নগদে বের করে নেয়া হয়েছে। কম্বল কেনার নামে, গরিবের ভোগ্যপণ্য কেনার নামে ও বিভিন্ন দাতব্য সংস্থার নামে হাজার হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে এস আলম। এসব অর্থ কিভাবে বের করে নিয়েছে, ঠিক কী পরিমাণ অর্থ বের করে নেয়া হয়েছে এবং এসব অপকর্মের সাথে জড়িতদের শনাক্ত করতেই তদন্তে নেমেছে দুদক। ইতোমধ্যে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম মাসুদ, তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মানিলন্ডারিং অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ তদন্তে গঠিত দুদক, সিআইডি ও এনবিআর সমন্বয়ে তদন্ত টিমের আওতায় সিএসআর খাতে অর্থ ব্যয় নিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।
এ বিষয়ে দুদক থেকে ইসলামী ব্যাংকের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে ইসলামী ব্যাংক থেকে ২০১৭ সাল থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত আট বছরের সিএসআরের খাতে বছরভিত্তিক বিবরণ খাতসহ, বর্ণিত সময়ে ব্যাংকের সিএসআর ব্যয়ের প্রস্তাব প্রদান থেকে অনুমোদন প্রক্রিয়া পর্যন্ত কর্মকর্তাদের নামের তালিকা ও পদবি দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। একইসাথে ইসলামী ব্যাংকের সিএসআর পলিসি ও বাংলাদেশ ব্যাংক সময়ে সময়ে ব্যাংককে প্রদত্ত সিএসআরসংক্রান্ত সার্কুলার পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। এজন্য এসব বিষয়ে তথ্য দেয়ার জন্য দুদক থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।