জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষী দিবস উদযাপিত

আমাদের শান্তিরক্ষীরা সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত : সেনাপ্রধান

“আমাদের শান্তিরক্ষীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উন্নত প্রশিক্ষণ, নৈতিক মূল্যবোধ, দক্ষতা এবং নিরপেক্ষতার প্রমাণ রেখে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সর্বদা প্রস্তুত।”

নিজস্ব প্রতিবেদক
Printed Edition
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান |সংগৃহীত

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে। শান্তিরক্ষী মিশনে নিহত ১৬৮ জন বীর সৈনিক ও পুলিশ সদস্যের আত্মত্যাগ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে তিনি বলেন, তাদের এই আত্মত্যাগ জাতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। গতকাল বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আহত শান্তিরক্ষীদের সংবর্ধনা এবং জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর বিশেষ উপস্থাপনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

সেনাপ্রধান বলেন, আমাদের শান্তিরক্ষীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উন্নত প্রশিক্ষণ, নৈতিক মূল্যবোধ, দক্ষতা এবং নিরপেক্ষতার প্রমাণ রেখে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সর্বদা প্রস্তুত। জাতিসঙ্ঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ আজ একটি বিশ্বস্ত ও গ্রহণযোগ্য নাম। জাতিসঙ্ঘের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ ১৯৮৮ সাল থেকে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে আসছে। বর্তমানে শান্তিরক্ষা কাজে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৪ হাজার ৮৮০ জন, নৌবাহিনীর ৩৪৩ জন, বিমানবাহিনীর ৩৯৬ জন এবং পুলিশের ১৯৯ জনসহ সর্বমোট ৫ হাজার ১১৮ জন শান্তিরক্ষী বিভিন্ন দেশে ৯টি শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত রয়েছে। তিনি বলেন, পুরুষ সদস্যের পাশাপাশি আমাদের নারী সদস্যরাও শান্তিরক্ষার কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। অদ্যাবধি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশের সর্বমোট ৩ হাজার ৬৪৫ জন মহিলা শান্তিরক্ষী সফলভাবে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছে। বর্তমানে ৪৪৪ জন মহিলা সদস্য সক্রিয়ভাবে নিয়োজিত রয়েছেন।

জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান তার বক্তব্যে বলেন, সম্প্রতি আমাদের একটি হেলিকপ্টার কন্টিজেন্ট আর্মড রোলে কঙ্গো মিশনে মোতায়েন রয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি ক্যারিবিয়ান আর্মিকে আমাদের নিজেদের প্রযুক্তিতে তৈরীকৃত বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয়কারী যান অনুদান হিসেবে হস্তান্তর করেছি। সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে আমাদের অনুদান ও তত্ত্বাবধানে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা স্থানীয় জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে।

সেনাপ্রধান বলেন, এই ক্লিনিকটা যে দিন উদ্বোধন হয় সে দিন সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের রাষ্ট্রপতি উপস্থিত ছিলেন এবং আমি উপস্থিত ছিলাম। আমরা একই সঙ্গে ক্লিনিকটি উদ্বোধন করেছি।

অনুষ্ঠানের মধ্যে উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত/ হাইকমিশনার, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসঙ্ঘের আবাসিক সমন্বয়কারী, তিন বাহিনী প্রধান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, পুলিশের মহাপরিদর্শক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এ দিকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় এ বছর পালিত হয় আন্তর্জাতিক জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষী দিবস। দিবসটি উপলক্ষে নেয়া কর্মসূচির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সকালে ‘পিসকিপার্স রান’ আয়োজন করা হয়। তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে শুরু হওয়া এই রানে বিভিন্ন সময় শান্তি মিশনে অংশ নেয়া সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। সেখানে থেকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনের সড়ক প্রদক্ষিণ করে ফ্যালকন হলের ভেতরে এসে শেষ হয় পিসকিপার্স রান।

আন্তর্জাতিক জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষী দিবস উদযাপিত : গতকাল বিকালে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানায়, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় আন্তর্জাতিক জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষী দিবস উদযাপিত হয়। জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী বিশ্বের সব দেশের শান্তিরক্ষীদের অসামান্য অবদানকে এই দিনে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়।

দিবসের কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বেলা ১১টায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আহত শান্তিরক্ষীদের জন্য সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। সংবর্ধনায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসঙ্ঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব মো: রুহুল আলম সিদ্দিকী। এ ছাড়া জ্যেষ্ঠতম শান্তিরক্ষী হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান, জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বক্তব্য প্রদান করেন। সবশেষে, অর্থ উপদেষ্টা বক্তব্য প্রদান করেন এবং বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের সাথে ভিটিসির মাধ্যমে মতবিনিময় করেন।

খুলনায় জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষী দিবস উদ্যাপন : বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদা ও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে খুলনায় বৃহস্পতিবার ‘আন্তর্জাতিক জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২৫’ উদ্যাপিত হয়। দিবসটি সর্বস্তরের জনসাধারণের কাছে তুলে ধরতে বিশেষ র‌্যালি ও বানৌজা তিতুমীরস্থ ফেয়ারওয়ে মাল্টিপারপাস হলে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান। অনুষ্ঠানে জাতিসঙ্ঘের স্থানীয় প্রতিনিধি, খুলনা ও যশোর অঞ্চলের বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত সদস্যরা, বাংলাদেশ পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীরা এবং বিএনসিসি ও নৌ স্কাউটের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন।