- আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৩ স্তরের নিরাপত্তা
- ৩৩ হাজার মণ্ডপে থাকবে ৩ লাখ আনসার সদস্য
- স্বেচ্ছাসেবক ৮০ হাজার
আসন্ন দুর্গাপূজা উৎসবমুখর ও নির্বিঘেœ উদযাপনের লক্ষ্যে সারা দেশে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে সরকার। এ জন্য ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব প্রস্তুতি নিয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব:) মো: জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা উদযাপন নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গাপূজা ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন নিশ্চিত করার জন্য সারা দেশের পূজা মণ্ডপগুলোর চার পাশে পূজার আগে, পূজার সময়, মূর্তি বিসর্জন এবং পূজার পরে- এই তিন ধাপে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দেশব্যাপী পূজা মণ্ডপগুলোতে পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড (বিসিজি) এবং সামরিক বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি প্রায় তিন লাখ আনসার সদস্য এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ৮০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন করা হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও পূজা উদযাপন কমিটি সূত্রে জানা গেছে, পূজা উদযাপন কমিটির নেতাসহ সব স্টেকহোল্ডারদের সাথে বৈঠক করে সরকার পূজা শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের জন্য একটি বিস্তারিত নিরাপত্তা পরিকল্পনাও তৈরি করেছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো: জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, দুর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে ২৪ সেপ্টেম্বর (আজ) থেকে সারা দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা মোতায়েন করা হবে। তিনি বলেন, সীমান্তবর্তী এলাকার পূজা মণ্ডপগুলোতে বিজিবিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে। অন্য দিকে উপকূলীয় অঞ্চল এবং নদী তীরে স্থাপিত পূজা মণ্ডপগুলোর তদারকির দায়িত্ব বাংলাদেশ নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড এবং নদী পুলিশকে দেয়া হয়েছে। দেবী দুর্গার মূর্তি নিরাপদে বিসর্জন নিশ্চিত করার জন্য নদী পুলিশকে বিশেষভাবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, প্রতিটি পূজা মণ্ডপে আটজন আনসার সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট পূজা উদযাপন কমিটির নিযুক্ত সাতজন স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন থাকবেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে।
তিনি বলেন, প্রতিটি পূজা মণ্ডপে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করতে বলা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য, পুলিশ, র্যাব এবং বিজিবির পেট্রোল টিম পূজা মণ্ডপের চার পাশে নিয়মিত টহল দেবে। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আরো বলেন, পূজা মণ্ডপগুলোতে যেকোনো সম্ভাব্য অপ্রীতিকর ঘটনার তাৎক্ষণিক তথ্য পাওয়ার জন্য একটি অ্যাপও তৈরি করা হয়েছে, যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে সহায়তা করে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, পূজা উদযাপনকে ঘিরে কোনো নিরাপত্তা হুমকি নেই। পুলিশ, র্যাব এবং সামরিক বাহিনীও শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর উদযাপনের জন্য সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকি করবে। তিনি বলেন, এ বছর দুর্গাপূজা যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, পবিত্রতা এবং উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হবে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সবাইকে দুর্গাপূজা ঘিরে কোনো গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, পূজা শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন নিশ্চিত করতে পুলিশ তিনটি পর্যায়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে- পূজার আগে, পূজার সময় এবং মূর্তি বিসর্জনের সময় ও পূজার পরে।
দুর্গাপূজা চলাকালীন যেকোনো সম্ভাব্য অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় সোয়াট, ক্রাইম রেসপন্স টিম (সিআরটি) এবং বোমা নিষ্ক্রিয়কারী ইউনিট সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে পুলিশ সদর দফতর এবং অন্যান্য পুলিশ ইউনিটে মনিটরিং সেল সক্রিয় থাকবে। দুর্গাপূজা চলাকালীন কেউ যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে সে জন্য পুলিশ সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে, পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের জাতীয় জরুরি পরিষেবা ৯৯৯ অথবা নিকটতম থানায় যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত দুর্গাপূজা উদযাপনের জন্য সারা দেশে ৩২ হাজার ৯৯০টি পূজা মণ্ডপ স্থাপন করা হয়েছে। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পূজা মণ্ডপের জন্য বরাদ্দ দুই কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে এ বছর পাঁচ কোটি টাকা করা হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত বছর দুর্গাপূজা উদযাপনের জন্য চার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল। হিন্দু সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপন নিশ্চিত করার জন্য অর্থ ছাড়াও প্রতিটি পূজা মণ্ডপে ৫০০ কেজি চালও দেওয়া হবে।