কাজে ফিরেছেন বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

বড় দরপতন দিয়ে পুঁজিবাজারে সপ্তাহ শুরু

মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে ছিল জ্বালানি খাতের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি তিতাস গ্যাস

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
Printed Edition

পতনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেই নতুন সপ্তাহ শুরু হয়েছে পুঁজিবাজারে। গতকাল সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে দেশের দুই পুঁজিবাজারই বড় ধরনের সূচক হারায়। অবনতি ঘটে বাজারের সব ক’টি সূচকের। প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সার্বিক সূচক ২৯ দশমিক ৫১ পয়েন্ট হ্রাস পায়। ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ সূচকের অবনতি ঘটে যথাক্রমে ৪ দশমিক ৪৪ ও ৯ দশমিক ২৮ পয়েন্ট। দেশের দ্বিতীয় পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচকের ৪৩ দশমিক ৩৫ পয়েন্ট অবনতি ঘটে। এখানে সিএসই-৩০ সিএসসিএক্স সূচক হারায় যথাক্রমে ৩৮ দশমিক ১০ ও ২৫ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট।

এ দিকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সৃষ্ট অচলাবস্থার নিরসন হয়েছে। চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের পদত্যাগের দাবি থেকে সরে এসে কাজে যোগদান করেছেন বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিএসইসি অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে গত শনিবার রাতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজে ফেরার অনুরোধ জানানো হলে গতকাল রোববার সংস্থার কর্মকর্তা কর্মচারীরা কাজে যোগ দেন।

গত ৪ মার্চ বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদানের ঘোষণা দেয়া হলে ৫ মার্চ কমিশনের কর্মকর্তা কর্মচারীরা ৪ ঘণ্টারও বেশি সময় কমিশন চেয়ারম্যান ও সদস্যদের অবরুদ্ধ করে রাখে। এ সময় ভবনের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেন। লিফট ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করাসহ তারা ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। তারা সাইফুর রহমানের অবসরের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার ও কমিশনের পদত্যাগসহ চার দফা দাবি পেশ করেন। আর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবি মানা না হলে টানা কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। একপর্যায়ে সেনাবাহিনীকে সংবাদ দেয়া হলে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কমিশন চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ বিএসইসি ভবন ত্যাগ করেন। ওই দিন বিকেল ৫টায় শেরেবাংলা নগর থানায় এ ঘটনায় জড়িত ১৬ কর্মকর্তাকে আসামি করে মামলা করেন কমিশনারের গানম্যান আশিকুর রহমান।

৬ মার্চ বিএসইসির কর্মকর্তা কর্মচারীরা ঘোষণা অনুযায়ী কর্মবিরতি পালন করেন। কিন্তু বিকেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় কমিশন চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ কার্যালয়ে ফেরেন। এ সময় চেয়ারম্যান সরকারের উচ্চপর্যায়ের ঘোষণা অনুযায়ী তার সিদ্ধান্তে অটল থাকার ঘোষণা দেন।

এ দিকে শনিরার ৮ মার্চ রাত্রে বিএসইসি কর্মকর্তা-কর্মচারী ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে সবাইকে কাজে যোগদানের অনুরোধ জানানো হয়। এর আলোকে গতকাল রোববার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজে যোগদান করেন। তবে এ সময় কমিশনের পক্ষ থেকে করা মামলায় আসামির তালিকায় থাকা ১৬ জন অনুপস্থিত ছিলেন। বিএসইসির নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করে।

বাজার পরিস্থিতি : গতকাল লেনদেনের শুরুতেই বিক্রয়চাপে পড়ে দুই পুঁজিবাজার। দিনের লেনদেনের বিভিন্ন পর্যায়ে পতনের এ ধাক্কা সামলে ওঠার চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি। দিনশেষে উভয় বাজারই সূচক হারায়। ঢাকা শেয়ারবাজারে ৫ হাজার ২০৩ দশমিক ৯৬ পয়েন্ট থেকে লেনদেন শুরু করে প্রথম কয়েক মিনিট সূচকটি স্থির থাকলেও দ্রুত বিক্রয়চাপের মুখে পড়ে। দিনশেষে ২৯ দশমিক ৫১ পয়েন্ট হারিয়ে ৫ হাজার ১৭৪ দশমিক ৪৪ পয়েন্টে স্থির হয় সূচকটি।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা গতকালের বাজার আচরণের জন্য বিএসইসিতে যে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে সেটাকেই কারণ হিসেবে দেখছেন। তারা মনে করেন, বাজারে এমনিতেই মন্দা ও আস্থাহীনতা বিরাজ করছে। এমতাবস্থায় বিনিয়োগকারীদের কাছে নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ অচলাবস্থার কথা অজানা নেই। কোন ভরসায় তারা এখানে বিনিয়োগে উৎসাহ পাবেন?

গতকালও ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষস্থানটি দখলে রাখে ওরিয়ন ইনফিউশন। ১৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় কোম্পানিটির ৪ লাখ ৫৬ হাজার শেয়ার হাতবদল হয় গতকাল। ১৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকায় ২১ লাখ ১০ হাজার ৭২২টি শেয়ার বেচাকেনা করে দিনের দ্বিতীয় কোম্পানি ছিল আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ। বাজারটির শেনেদেনের শীর্ষ দশ কোম্পানির অন্যগুলো ছিল যথাক্রমে লিনডে বিডি, বিচ হ্যাচারিজ, ফারইস্ট নিটিং, মিডল্যান্ড ব্যাংক, রবি অজিয়াটা, হাক্বানি পেপার অ্যান্ড পাল্প, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ও লভেলো আইসক্রিম।

দিনের মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে ছিল জ্বালানি খাতের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি তিতাস গ্যাস। গতকাল ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি ঘটে কোম্পানিটির। এ ছাড়া লিনডে বিডি ৫ দশমিক ২০ ও এইচ আর টেক্সটাইলসের ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি ঘটে। দিনের মূল্যবৃদ্বির তালিকায় আরো ছিল সাউথইস্ট ব্যাংক, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম, ফারইস্ট নিটিং ও ডেসকো লিমিটেড।

অপর দিকে দিনেসর দরপতনের শীর্ষে ছিল আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ। গতকাল ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ দর হারায় বস্ত্র খাতের কোম্পানিটি। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য দরপতনের শিকার অন্য কোম্পানির মধ্যে এস আলম কোল্ডরোল স্টিলস ৯ দশমিক ৪৫, মিডল্যান্ড ব্যাংক ৮ দশমিক ১০ ও বসুন্ধরা পেপার ৮ দশমিক ০৭ শতদাংশ দর হারায়। এ তালিকার শীর্ষ দশে আরো ছিল আর এস আর এম স্টিলস, ইন্দু বাংলা ফার্মা, ফার্স্ট প্রাইম ফিন্যান্স মিউচুয়াল ফান্ড, তশরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ ও ন্যাশনাল হাউজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স লিমিটেড।

গতকাল ডিএসইতে ১ লাখ ১৪ হাজার ৮৫০টি হাওলায় মোট ১২ কোটি ৪০ লাখ ৫১ হাজার শেয়ার হাতবদল হয় যার বাজারমূল্য ছিল ৩৩৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। লেনদেন হওয়া কোম্পানি র্ছিল মোট ৩৯৯টি। এদের মধ্যে ৫৮টির দাম বাড়ে, ২৭৪টির কমে এভং ৬৭টির দাম অপরিবর্তিত থাকে।