ট্র্যাভেল অ্যাজেন্সির অবৈধ আর্থিক কর্মকাণ্ড বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা চাইল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ট্রাভেল এজেন্সির বিভিন্ন অবৈধ আর্থিক কর্মকাণ্ড বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরকে আধা সরকারি পত্র দিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।

বিশেষ সংবাদদাতা
Printed Edition

ট্রাভেল অ্যাজেন্সিগুলোর অবৈধ আর্থিক কর্মকাণ্ড বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা চাইল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ট্রাভেল এজেন্সির বিভিন্ন অবৈধ আর্থিক কর্মকাণ্ড বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরকে আধা সরকারি পত্র দিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।

বাণিজ্য উপদেষ্টা সম্প্রতি এক চিঠিতে এই সহায়তা চেয়েছেন বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে চিঠিতে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেছেন, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে নিবন্ধিত ট্রাভেল এজেন্সির বাইরেও বহুসংখ্যক অনিবন্ধিত এজেন্সি রয়েছে। এসব এজেন্সি অফলাইনে ও অনলাইনে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধমূলক আর্থিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। যেমন অর্থ আত্মসাৎ, নগদ জমা অথবা অগ্রিম পরিশোধের ভিত্তিতে ক্যাশব্যাক অফার, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতো ডিপোজিট ও বিনিয়োগ স্কিমে অর্থ সংগ্রহ, টাকা পাচার, রাজস্ব ফাঁকি, ইত্যাদি কার্যক্রমে লিপ্ত রয়েছে।

সম্প্রতি ফ্লাইট এক্সপার্ট নামের একটি অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি মালিক এ ধরনের প্রতারণামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে দেশ ছেড়েছেন। বিষয়টি গুরুতর এবং উদ্বেগজনক। এক্ষেত্রে নিবন্ধিত কিংবা অনিবন্ধিত যেকোনো ট্রাভেল এজেন্সির অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি।

চিঠিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন এবং বিধিমালার আলোকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে ট্রাভেল এজেন্সির নিবন্ধন সনদ দেয়া হয়। ফলে নিবন্ধিত বৈধ ট্রাভেল এজেন্সিগুলো অফলাইনে ও অনলাইনে বর্ণিত আইন ও বিধিমালা যথাযথভাবে প্রতিপালন সাপেক্ষে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে। তবে এজেন্সির সাথে সংশ্লিষ্ট নয় এমন কোনো কার্যক্রম অবৈধভাবে গ্রহণ করা আচরণবিধির লঙ্ঘন বা পরিপন্থী। বাংলাদেশ ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার একমাত্র অধিকার বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের। ফলে ট্রাভেল এজেন্সির বাজার থেকে অগ্রীম কমিশন বা ইনসেনটিভ লভ্যাংশের লোভনীয় প্রস্তাবের বিনিময়ে আমানত সংগ্রহ এবং বিনিয়োগের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক কোম্পানি আইন এবং ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী বেআইনি ও অবৈধ।

উপদেষ্টা চিঠিতে আরো উল্লেখ করেন, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী এ ধরনের নগদ লেনদেন অবৈধ। অথচ বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ট্রাভেল এজেন্সি ও গ্রাহকদের আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত একটি আনুষ্ঠানিক সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ মোক্তার হোসেন জানান, ট্রাভেল এজেন্সির নগদ জমা অথবা অগ্রীম পরিশোধের ভিত্তিতে আমানত সংগ্রহ ও বিনিয়েগের বিষয়টি আইনের পরিপন্থী নয়। যদিও সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী এ ধরনের কার্যক্রম আইনসম্মত নয়।

বাণিজ্য উপদেষ্টা গভর্নরকে বলেন, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিস্তার রোধ একটি সামগ্রিক ও সামষ্টিক বিষয়। এক্ষেত্রে ট্রাভেল এজেন্সি সংক্রান্ত অপরাধের বহুমাত্রিকতার কারণে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ, রাজস্ব ফাঁকি রোধ, নগদ জমা সংক্রান্ত অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে গভর্নরের ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ ও প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে।

এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ট্রাভেল অ্যাজেন্সিগুলোর এ ধরনের অবৈধ আর্থিক কর্মকাণ্ড একমাত্র বাংলাদেশ ব্যাংকই বন্ধ করতে পারে। তাই বাণিজ্য উপদেষ্টা এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সহায়তা চেয়েছেন।