রাজধানীর চানখারপুলে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির সময় পুলিশের গুলিতে নিহত মো: ইয়াকুবের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের ভাতিজা আব্দুস সালাম আদালতে তার জবানবন্দী দিয়েছেন।
গতকাল রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ বিচারপতি মো: শফিউল আলম মাহমুদের দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেলে সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। ট্রাইব্যুনালে অন্য সদস্য হলেন, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো: মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
আব্দুস সালাম (৪০), যিনি বংশালের ৬১/১ নাজিমুদ্দিন রোডের বাসিন্দা। তিনি জানান, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সকালে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে তিনি নাজিমুদ্দিন রোডে ছাত্র-জনতার সাথে একত্রিত হন।
বেলা আনুমানিক ১১টার দিকে পুলিশ তাদের উদ্দেশে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ এবং গুলি বর্ষণ করে। এতে জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়, পরে আবার একত্র হলে পুলিশ একইভাবে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে এবং গুলি চালাতে থাকে। এতে বহু মানুষ নিহত ও আহত হয়।
আব্দুস সালাম তার জবানবন্দীতে বলেন, ‘বেলা আনুমানিক ১২টা ৪৫ মিনিটের দিকে পুলিশ ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়লে আমার চাচা মো: ইয়াকুব পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আমরা তাকে চিকিৎসার জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যাই। হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
তিনি আরো জানান, তার চাচা গুলিবিদ্ধ হওয়ার দৃশ্য এবং হাসপাতালে নেয়ার দৃশ্য তিনি নিজের মোবাইল ফোনে ধারণ করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা ভিডিওসহ মোবাইলটি তার কাছ থেকে জব্দ করেন এবং পরে আবার ফেরত দেন।
রাজধানীর চানখারপুলে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার ১২তম দিনে এটি ছিল ২০ নম্বর সাক্ষীর জবানবন্দী।
গত ১৬ অক্টোবর দ্বিতীয় দিনের মতো এ মামলায় সাক্ষ্য দেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে তাকে জেরা করেন স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। গত ৯ অক্টোবর আসিফ মাহমুদের প্রথম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। তবে শেষ না হওয়ায় অবশিষ্ট জবানবন্দী নিতে প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ অক্টোবর নেয়া হয়।
এ মামলায় গ্রেফতার চার আসামি হলেন- শাহবাগ থানার সাবেক ওসি (অপারেশন) মো: আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো: সুজন মিয়া, মো: ইমাজ হোসেন ইমন ও মো: নাসিরুল ইসলাম।
পলাতক আসামিরা হলেন- সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ আলম, মো: আখতারুল ইসলাম ও রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল। গত ১৪ জুলাই চানখারপুলের মামলাটির পলাতক চার আসামিসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট চানখারপুল এলাকায় শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে গুলি চালায় পুলিশ। এতে বহু হতাহতের ঘটনার পাশাপাশি শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ জুনায়েদ, মো: ইয়াকুব, মো: রাকিব হাওলাদার, মো: ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া শাহরিক নিহত হন।



