সংশোধনে সূচক হারাল ২ পুঁজিবাজার

আইপিও বিধির খসড়া নিয়ে বিএসইসির মতবিনিময়

Printed Edition

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

সংশোধন ঘটেছে পুঁজিবাজারে। দু’দিনের সূচকের উত্থানে বাজারের মূল্যস্তরে যে পরিবর্তন ঘটেছে তা থেকে মুনাফা তুলে নিতে গত দু’দিন সংশোধন ঘটেছে পুঁজিবাজারে। এর ফলে মঙ্গলবার ঢাকা বাজারে মিশ্র আচরণ ছিল সূচকের। কিন্তু গতকাল দুই বাজারেই সবগুলো সূচকের কমবেশি অবনতি ঘটে। তবে গত কয়েক দিনের বাজার আচরণ কিছুটা হলেও আশাবাদী করে তুলেছে সংশ্লিষ্টদের। তারা মনে করছেন, ধারাবাহিক পতন সামলে নিয়ে বাজারে আস্থার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গতকাল ৮ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট অবনতির শিকার হয়। পাঁচ হাজার ১৮ দশমিক ২৮ পয়েন্ট থেকে লেনদেন শুরু করা সূচকটি বুধবার দিনশেষে নেমে আসে পাঁচ হাজার ৯ দশমিক ৮০ পয়েন্টে। বাজারটির দুই বিশেষায়িত সূচক ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ এ সময় যথাক্রমে ৬ দশমিক ৮২ ও ৪ দশমিক ৮৮ পয়েন্ট হারায়। দেশের দ্বিতীয় পুুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই গতকাল ২৯ দশমিক ৮০ পয়েন্ট হারায়। ১৪ হাজার ২৪ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট থেকে যাত্রা করা সূচকটি গতকাল দিনশেষে স্থির হয় ১৩ হাজার ৯৯৫ দশমিক ১৪ পয়েন্টে। একই সময় বাজারটির দুই বিশেষায়িত সূচক সিএসই-৩০ ও সিএসসিএক্স সূচকের অবনতি ঘটে যথাক্রমে ৩৬ দশমিক ৮১ ও ৫ দশমিক ৫১ পয়েন্ট।

সূচকের অবনতি ঢাকা শেয়ারবাজারের লেনদেনকেও প্রভাবিত করে। গতকাল ডিএসই ৩২৭ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে যা আগের দিন অপেক্ষা ১০৯ কোটি টাকা কম। মঙ্গলবার বাজারটির লেনদেন ছিল ৬৩৬ কোটি টাকা। তবে লেনদেন বেড়েছে চট্টগ্রাম শেয়ারবাজারে। এখানে ২৮ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি হয় যা আগের দিন অপেক্ষা সাত কোটি টাকা বেশি। মঙ্গলবার সিএসইর লেনদেন ছিল ২১ কোটি টাকা। তবে দু’টি কোম্পানির লেনদেনই ছিল ২২ কোটি টাকার বেশি। এগুলোর একটি খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ আর অন্যটি ওরিয়ন ইনফিউশন।

বাজার সংশ্লিষ্টরা দিনের বাজার আচরণকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন। কারণ গত বেশ কিছুদিন বাজারের লেনদেন ও মূল্যবৃদ্ধি কিছু নির্দিষ্ট সিকিউরিটিজেই সীমাবদ্ধ ছিল। সাধারণত পুঁজিবাজারে মূল্যবৃদ্ধি বা দরপতনে খাতওয়ারি একটা প্রবণতা থাকে। কিন্তু গত বেশ কিছুদিন থেকে তা ছিল অনুপস্থিত। কিন্তু সম্প্রতি ধীরে হলেও বাজারের স্বাভাবিক ধারা ফিরে আসছে। এটা ইতিবাচক। এটা অব্যাহত থাকলে দীর্ঘমেয়াদে বাজারের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে অসাধু বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ কিছু নির্দিষ্ট সিকিউরিটিজ নিয়ে নানা কারসাজির মাধ্যমে বাজারকে অস্বাভাবিক আচরণের দিকে নিয়ে যেতে তৎপর রয়েছে। কিছু স্বল্প মূলধনী কোম্পানির শেয়ার স্বল্পতাকে পুঁজি করেই তারা তাদের এ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে যা বাজারের শৃঙ্খলা নষ্ট করছে।

এদিকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আইপিওর খসড়া বিধিমালা নিয়ে অংশীজনদের সাথে মতবিনিময় করেছে । এ সময় বিএসইসির করা খসড়া এ বিধিমালা নিয়ে অংশীজনরা তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত ব্যক্ত করেন। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসির মাল্টিপারপাস হলে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো: আবুল কালাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে বিএসইসির পক্ষ থেকে কমিশনার ফারজানা লালারুখ ও কমিশনার মো: সাইফুদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মাহমুদ ওসমান ইমাম, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসির (ডিএসই) চেয়ারম্যান মো: মমিনুল ইসলাম, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসির (সিএসই) চেয়ারম্যান এ কে এম হাবিবুর রহমান, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) সভাপতি রূপালী হক চৌধুরী এবং বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মাজেদা খাতুন উপস্থিত ছিলেন।

অন্যান্যদের মধ্যে ডিএসই পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন, ডিবিএ-এর সিনিয়র সহসভাপতি মো: মনিরুজ্জামান, বিএপিএলসির পরিচালক ও নির্বাহী সদস্য মো: কায়সার হামিদ, ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আসাদুর রহমান, সিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম সাইফুর রহমান মজুমদার বৈঠকে অংশ নেন।

বৈঠকে বিভিন্ন মার্চেন্ট ব্যাংক ও অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহীরাও তাদের মূল্যবান মতামত দেন। এদের মধ্যে ভিআইপবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির সিইও শহিদুল ইসলাম, ইউসিবি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট এইচ এ মামুন ও মো: খালেদ হাসান, ঢাকা ব্যাংক সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: নাফিজ আল তারিক, ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের হেড অব প্রাইমারি মার্কেট শাহ রাকিব খান, লংকাবাংলা ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সিইও ইফতেখার আলম, আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, শান্তা ইকুইটি লিমিটেডের সিইও রুবায়েত-ই-ফেরদৌস এবং বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা শেয়ারবাজারে গতকাল এক লাখ ৮২ হাজার ৮৬৩টি হাওলায় মোট ১৮ কোটি ৬৫ লাখ ৬৭ হাজার ১১১টি সিকিউরিটিজ বেচাকেনা হয় যার বাজারমূল্য ছিল ৫২৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। বাজারটিতে লেনদেন হওয়া মোট ৩৮৫টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে ১৫৭টির দর বৃদ্ধি পায়, ১৭৪টির দর হ্রাস পায় এবং ৫৪টির দর অপরিবর্তিত থাকে। অপরদিকে চট্টগ্রাম শেয়ারবাজারে এক হাজার ২০৩টি হাওলায় মোট ৩২ লাখ ৩২ হাজার ৯৫৪টি শেয়ার ও ফান্ড হাতবদল হয় যার মূল্য ছিল ২৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এখানে লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও ফান্ডের সংখ্যা ছিল ১৭৯টি। যার মধ্যে ৭৫টির মূল্যবৃদ্ধি ঘটে, ৮২টি দর হারায় এবং ২২টির দর অপরিবর্তিত থাকে।