ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী নির্বাচনে চমক দেখাতে পারে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। নিজেদের নেতাদের পাশাপাশি বিভিন্ন সংখ্যালঘুদের প্রার্থী করতে পারে দলটি। এ ছাড়া বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতা, নারী প্রতিনিধি এবং ডাকসু, জাকসুসহ বিভিন্ন ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের প্রার্থী করার কথাও ভাবছে দলটি।
জাতীয় সংসদের ৩০০ সংসদীয় আসনে ইতোমধ্যে প্রার্থী ঠিক করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এর মধ্যে পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনরত আটটি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছে দলটি। আন্দোলনরত দলের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে জানা আছে। সে ক্ষেত্রে এসব দলকে বেশ কিছু আসনে ছাড় দিতে প্রস্তুত রয়েছে দলটি। ফলে কিছু আসনে বর্তমানের প্রার্থীদের সরিয়ে নিতে হবে জামায়াতকে। এ ছাড়া নির্বাচনে বিজয়ী হতে প্রার্থী নির্বাচনে আরো চিন্তাভাবনা করছে দলটি। এ কারণে নেতারা সব সময় বলে আসছেন এটি তাদের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা নয়। জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা মনে করছেন, বিগত যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে দলটি। বিভিন্ন জরিপেও আগের চেয়ে ভোটের হার অনেক বেড়েছে জামায়াতের। এ ছাড়া ডাকুস, জাকসু, চাকসু ও রাকসু নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় তাদের মনোবল আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। নেতাকর্মীরা মনে করছেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে ইনক্লুসিভ (জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ নির্বিশেষে সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে) পদ্ধতি প্রয়োগ করেছিল ইসলামী ছাত্রশিবির। এ কারণেই ব্যাপক জয় এসেছে। শিবিরের এ বিজয়ের পর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও তাদের প্রার্থী বাছাই নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে। দলটির সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনরত দলগুলোকে আসন ছাড়ার পর বাকি আসনগুলোতে তাদের প্রার্থী বাছাইয়ে আরো চিন্তাভাবনা করছে দলটি। নেতারা এবারের নির্বাচনে বিজয়ী হতে সর্বোচ্চ পন্থা প্রয়োগ করতে চান। এর অন্যতম হলো এবারই প্রথমবারের মতো নারীদের প্রার্থী করার কথা ভাবছে দলটি। জামায়াতে মহিলা বিভাগের নেত্রীদের বেশির ভাগই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। এ ছাড়া চিকিৎসক-ইঞ্জিনিয়ারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পেশায় থেকে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করছেন তারা। এসব নারীর মধ্য থেকে কয়েকজনকে প্রার্থী করার কথা আলোচনায় রয়েছে দলটির মধ্যে। এ ছাড়া এবার সংখ্যালঘু প্রার্থী দেয়ার কথাও চিন্তা করছে দলটি। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ বিভিন্ন উপজাতির মধ্যে থেকে কয়েকজনকে প্রার্থী করতে পারে দলটি। ইতোমধ্যে খুলনায় হিন্দুদের নিয়ে সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের সমাবেশ বেশ সাড়া ফেলেছে সারা দেশে। এ ছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে হিন্দুরা জামায়াতে ইসলামীতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করেছেন। জামায়াত বর্তমানে যেসব প্রার্থী দিয়েছে এর বেশির ভাগই চিকিৎসক, আইনজীবী, শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশায় কর্মরত রয়েছেন বা ছিলেন। এর পাশাপাশি পেশাজীবী শীর্ষ নেতাদের মধ্য থেকেও আরো প্রার্থী করার পরিকল্পনা রয়েছে জামায়াতের। তবে এবার জামায়াতের প্রার্থী করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চমক হতে পারে যুবকদের থেকে প্রতিনিধি দেয়া। এ ক্ষেত্রে ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েমের নাম ইতোমধ্যেই আলোচনায় এসেছে। এ ছাড়া জাকসু, চাকসু ও রাকসুতে ভিপি-জিএসসহ বেশির ভাগ পদেই শিবিরের নেতারা বিজয়ী হয়েছেন। তাদের মধ্য থেকেও প্রার্থী করা হতে পারে বলে আলোচনা রয়েছে দলটির মধ্যে।
এ প্রসঙ্গে জামায়াতে ইসলামী সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, আমাদের সিলেকটেড প্রার্থীরা ইতোমধ্যেই এলাকায় গণসংযোগসহ বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কাজ করছেন। এসব প্রার্থীর মধ্যে আন্দোলনরত দলগুলোর সাথে সমঝোতা হলে তখন কিছু আসন ছাড়তে হবে। এ ছাড়া নিজেদের প্রার্থীদের মধ্যে হয়তো আরো ১০-২০ জন পরিবর্তন হতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু, পেশাজীবী নেতা, নারী, ছাত্রসংসদের নেতাদের কথা ভাবা হচ্ছে। তবে এখনো সবই আলোচনার মধ্যে রয়েছে। এসব প্রার্থী দেয়ার ক্ষেত্রে অনেক চিন্তাভাবনা করতে হচ্ছে। নির্বাচনের তফসিল দেয়ার পর সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। তখন প্রার্থী চূড়ান্ত করলেই সব জানা যাবে। এর আগে কোনো কিছুই চূড়ান্ত নয়। ঢাকা-৫ আসনে আলোচিত বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারীকে মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে এমন গুঞ্জনের বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে আমাদের প্রার্থী আগেই ঠিক করা আছে। মিজানুর রহমান আজহারীকে দেয়ার ব্যাপারে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। তিনি জামায়াতের আমিরের সাথে দেখা করার কারণে বিষয়টি ছড়িয়েছে বলে তিনি জানান।



