গৃহসজ্জায় ব্যবহৃত রঙে ভয়ানক মাত্রার সিসা

হলুদ রঙে সর্বোচ্চ সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। লাল ও সাদা রঙেও সিসার উচ্চ মাত্রা পাওয়া গেছে। আবার কিছু রঙ শিল্পকারখানার ব্যবহারের জন্য বাজারজাত করা হলেও সেগুলো ডেকোরেটিভ রঙ হিসেবে বিক্রি হয়। এগুলোর মাত্র ১৬২টির মধ্যে ৩৫টি ‘সিসামুক্ত’ বা ‘পরিবেশবান্ধব’ লেবেল ছিল। জরিপে অংশ নেয়া অর্ধেকের বেশি দোকানদার বিএসটিআইয়ের সিসার নির্ধারিত মাত্রা সম্পর্কে অবগত ছিলেন না।

নিজস্ব প্রতিবেদক
Printed Edition

দেশে গৃহসজ্জার কাজে ব্যবহৃত রঙে ভয়ানক মাত্রার সিসা পাওয়া গেছে; যা নিরাপদ মাত্রার চেয়ে এক লাখ পিপিএম বেশি। চীন, সিঙ্গাপুর থেকে দেশে আমদানি করা কিছু নমুনাসহ ডেকোরেটিভ রঙের ৪২ শতাংশে এমন উচ্চমাত্রার সিসার উপস্থিতি ধরা পড়েছে। এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন এসডোর সম্প্রতি গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। এ অবস্থায় এসডো বাধ্যতামূলক সেইফটি লেবেল এবং নিয়মিত পণ্য পরীক্ষার সুপারিশ করেছে।

প্রতিষ্ঠানটি জানায় আইন অনুযায়ী দেশে রঙে সিসা ব্যবহারের সর্বোচ্চ নিরাপদ মাত্রা ৯০ পিপিএম। কিন্তু বর্তমানে বাজারে থাকা রঙে মধ্যে ৪২ শতাংশে এক লাখ ৯০ হাজার পিপিএম পর্যন্ত সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে; যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

এসডো জানায়, তাদের গবেষণায় মোট ১৬১টি নমুনার মধ্যে ৯৩টি নমুনায় নিরাপদ মাত্রায় ৯০ পিপিএমের কম সিসা পাওয়া গেছে। অন্য দিকে ৬৮টি নমুনায় সিসার মাত্রা বিএসটিআই নির্ধারিত ৯০ পিপিএমের ঘর অতিক্রম করেছে। এর মধ্যে ২৬.২ শতাংশ নমুনায় এক হাজার পিপিএমের বেশি এবং ৩.১ শতাংশ নমুনায় ৫০ হাজার পিপিএমের বেশি সিসা পাওয়া গেছে। নির্ধারিত মাত্রা অতিক্রমকারী এসব ব্র্যান্ড মূলত ছোট, স্থানীয় বা অনিবন্ধিত কোম্পানি, যাদের পরীক্ষাগারে পরীক্ষা বা নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদারকির অভাব রয়েছে।

গবেষণা ফলাফলে ক্যাঙ্গারু ব্র্যান্ডে সর্বোচ্চ এক লাখ ৯০ হাজার পিপিএম সিসার উপস্থিতি রেকর্ড করা হয়েছে। এর পরই রয়েছে ইউরো। যার মাত্রা এক লাখ ৭০ হাজার পিপিএম। ক্যাঙ্গারু ব্র্যান্ডের নমুনাটি ছিল আমদানিকৃত, এটি বাংলাদেশে তৈরি নয়।

এ ছাড়া অন্যান্য উচ্চ মাত্রার সিসাযুক্ত নমুনার মধ্যে রয়েছে নাহার, ৮১ হাজার পিপিএম। নিউ টুয়া ৭৪ হাজার পিপিএম। টপ সিল, ৫৪ হাজার পিপিএম। মদিনা বেটার রুবিল্যাক, ১৯ হাজার পিপিএম। মেঘনা প্লাস, ১৮ হাজার পিপিএম। র‌্যামি, ১৮ হাজার পিপিএম ও তুর্কি ১৬ হাজার পিপিএম। এগুলো হলুদ বা সোনালি-হলুদ রঙের অয়েল ডেকোরেটিভ।

হলুদ রঙে সর্বোচ্চ সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। লাল ও সাদা রঙেও সিসার উচ্চ মাত্রা পাওয়া গেছে। আবার কিছু রঙ শিল্পকারখানার ব্যবহারের জন্য বাজারজাত করা হলেও সেগুলো ডেকোরেটিভ রঙ হিসেবে বিক্রি হয়। এগুলোর মাত্র ১৬২টির মধ্যে ৩৫টি ‘সিসামুক্ত’ বা ‘পরিবেশবান্ধব’ লেবেল ছিল। জরিপে অংশ নেয়া অর্ধেকের বেশি দোকানদার বিএসটিআইয়ের সিসার নির্ধারিত মাত্রা সম্পর্কে অবগত ছিলেন না।

১০ হাজার পিপিএমের বেশি সিসাযুক্ত সব নমুনা ক্ষুদ্র বা অনানুষ্ঠানিক উৎপাদকদের কাছ থেকে এসেছে। চীন, সিঙ্গাপুর থেকে আমদানি করা কিছু নমুনাতেও উচ্চ মাত্রার সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ও কাস্টমস স্ক্রিনিংয়ের দুর্বলতার ইঙ্গিত দেয়।

এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানার ভাষ্য, আমরা যে রঙ ব্যবহার করি, তা যদি নিরাপদ না হয়, তবে এটি প্রতিটি পরিবার এবং শিল্পীর জন্য জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং মানসিক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলছেন, জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সব ধরনের রঙ থেকে সিসা নির্মূল করার জন্য কর্তৃপক্ষ এবং শিল্প খাতের স্টেকহোল্ডারদের পদক্ষেপ খুবই জরুরি।

বিরাজমান পরিস্থিতিতে বিএসটিআইয়ের পরিচালক (কেমিক্যাল উইং) খোদেজা খাতুন বলেন, যেসব ব্র্যান্ড সিসার মানদণ্ড মানছে না, তাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কিছু প্রক্রিয়াগত জটিলতা রয়েছে, তবে সেগুলো সমাধানের সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গবেষণায় ব্যবহার করে রঙের নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ৯০ পিপিএম মানদণ্ডের সাথে বাজারের রঙ কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ তা জানতে পরীক্ষাগারে এই পরীক্ষা করা হয়।

অন্য দিকে বাজার জরিপ ও পেইন্ট শিল্প সংশ্লিষ্টদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে লেবেলিং, সচেতনতা ও বাজার অনুশীলন মূল্যায়ন করা হয়। সিসা নির্ণয়ের জন্য মানসম্মত, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিশ্লেষণমূলক কৌশল ব্যবহার করে নমুনাগুলোর পরীক্ষা করা হয় আন্তর্জাতিক স্বীকৃত ল্যাবে।