ইস্তাম্বুলে তৃতীয় আন্তর্জাতিক আল আকসা ট্রাস্টি সম্মেলন

আকসাকে দখলমুক্ত ও গাজা পুনর্গঠনে ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠ গঠনের আহ্বান

Printed Edition
ইস্তাম্বুলে তৃতীয় আন্তর্জাতিক আল আকসা ট্রাস্টি সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে প্রতিনিধিদের একাংশ  : নয়া দিগন্ত
ইস্তাম্বুলে তৃতীয় আন্তর্জাতিক আল আকসা ট্রাস্টি সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে প্রতিনিধিদের একাংশ : নয়া দিগন্ত

মাসুমুর রহমান খলিলী ইস্তাম্বুল থেকে

ইস্তাম্বুলে শুরু হওয়া তৃতীয় আন্তর্জাতিক আল আকসা ট্রাস্টি সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে আল আকসাকে দখলমুক্ত এবং গাজা পুনর্গঠনের জন্য ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠ গঠনের আহ্বান জানানো হয়েছে। ইস্তাম্বুলের এক হোটেলে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এই ‘তৃতীয় আন্তর্জাতিক উম্মাহর খতিব ও আকসা প্রহরী সম্মেলন’-এ ইসলামী বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রায় ৫০০ আলেম, ইমাম ও খতিব অংশগ্রহণ করেন। এই সম্মেলনে মসজিদুল আকসার ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্বের পাশাপাশি দখলদার ইসরাইলের আগ্রাসনে বিধ্বস্ত কুদস ও গাজার সাম্প্রতিক মানবিক সঙ্কট গভীরভাবে আলোচিত হয়।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের প্রথম অধিবেশনে প্রধান বক্তা ছিলেন ইরাকের শরিয়াহ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই ইউসুফ। আলোচনায় আরো অংশ নেন- শেখ ওয়াসাফি আশুউর আবু জাহিদ, শেখ ড. সাইদ বুজেরি ও শেখ ড. আবদুল্লাহ মাইমুরি।

পরবর্তী অধিবেশনে শেখ বুরহান সাইদ সভাপতিত্ব করেন। বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট স্কলারদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- ড. হাতেম আবদুল আজিম, ড. ওসামা আশকার, ড. ইউনুস আবু জারাদ প্রমুখ। সম্মেলনের সমাপন অধিবেশনে ইসরাইলের কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্তরা বক্তব্য রাখেন। তাদের মধ্যে ছিলেন- রামাদান উদ মোশাহেরা, সামারাহ সাবিহ ও মাহমুদ শারিতাহ। এই অধিবেশনে সভাপত্বি করেন শহীদ হামাস প্রধান ও ফিলিস্তিনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল হানিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা ড. আহমদ বিন ইউসুফ।

দ্বিতীয় দিনের বিভিন্ন অধিবেশনে বক্তারা যুদ্ধপরবর্তী গাজার পুনর্গঠনে উম্মাহর দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে আলোকপাত করেন। বক্তারা আল আকসাকে দখলমুক্ত করতে এবং গাজা পুনর্গঠন করতে মুসলিম দেশগুলোর সরকার ও জনগণকে একসাথে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

বক্তারা মসজিদুল আকসা ইস্যুকে ‘উম্মাহর পরিচয় ও চেতনা যাচাইয়ের মানদণ্ড’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, কুদসকে কেন্দ্র করে যে পরিকল্পিত আগ্রাসন চলছে তা দিন দিন আরো ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। এ সময়ে মুসলিম উম্মাহকে সমন্বিত ভূমিকা পালন করতে হবে।

তারা উল্লেখ করেন, ইসরাইলি দখলদারিত্ব কেবল স্থাপনা ধ্বংসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি একটি সুপরিকল্পিত প্রক্রিয়া- যার লক্ষ্য হলো শহরের পরিচয়, স্মৃতি, চেতনা এবং প্রকৃত মালিকদের মুছে ফেলা।

বক্তারা বলেন, মসজিদুল আকসা মুসলমানদের ঐতিহাসিক, ধর্মীয় ও নৈতিক অধিকার। এটি কোনো রাজনৈতিক দরকষাকষির বিষয় নয়। তারা মুসলিম ইমাম ও স্কলারদের খুতবা, দাওয়াহ ও শিক্ষা কার্যক্রমে আকসা এবং ফিলিস্তিন প্রশ্নকে কেন্দ্রীয়ভাবে তুলে ধরতে এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা জোরদার করতে আহ্বান জানান।

দুই দিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মসজিদুল আকসার ওপর দখলদারিত্ব ও আগ্রাসনের কৌশল; গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয়; মুসলিম আলেমদের দায়িত্ব ও ভূমিকা; আন্তর্জাতিক জনমত গঠন এবং আইনি ও কূটনৈতিক লড়াইয়ের পাশাপাশি খুতবা ও ধর্মীয় প্ল্যাটফর্মে ফিলিস্তিন প্রশ্নকে কার্যকরভাবে তুলে ধরার কৌশলের ওপর আলোকপাত করা হয়।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে সারা বিশ্ব থেকে অংশগ্রহণকারীরা যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার পুনর্বাসনের জন্য মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, শহীদদের এতিম শিশু সন্তান ও বিধ্বস্ত বাড়িঘর পুনর্নির্মাণে নিজ নিজ দেশের প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির পক্ষ থেকে সহায়তার আশ্বাস দেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজায় চলমান যুদ্ধ, কুদসে ইসরাইলি বসতি সম্প্রসারণ ও আল আকসায় নিয়মিত হামলার প্রেক্ষাপটে এই সম্মেলন একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক-ধর্মীয় বার্তা বহন করছে। বিশেষত মুসলিমবিশ্বে বিভক্তির এই সময়ে ইস্তাম্বুলের সম্মেলন উম্মাহর ঐক্য ও নৈতিক অবস্থান পুনর্গঠনের প্রয়াস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সম্মেলনের শেষ দিনে একটি যৌথ ঘোষণা প্রকাশ করা হয়, যেখানে আকসা ও ফিলিস্তিন রক্ষায় মুসলিমবিশ্বকে কার্যকর ও ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়।

বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল

সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন- ফেডারেশন অব ইসলামিক অর্গানাইজেশন্স ইন ফিনল্যান্ড ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. আবদুল মান্নান, ইস্তাম্বুলের ডেইলি সাবাহর সম্পাদক মোহাম্মদ জাকির হোসেন, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির সাবেক ডিএমডি ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত এমডি ড. ইকবাল কবির মোহন, দৈনিক নয়া দিগন্তের নির্বাহী সম্পাদক মাসুমুর রহমান খলিলী, নিবরাস মাদরাসার প্রিন্সিপাল মোতাসিম বিল্লাহ মাক্কী, তানযীমুল উম্মাহ ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান ড. মীম আতিকুল্লাহ ও বনশ্রী স্কুল অব দ্য নেশনের চেয়ারম্যান ড. মোস্তাফিজুর রহমান খান।