দুই দশক পর সর্বনিম্ন পাস

এইচএসসিতে পাসের হার ৫৮.৮৩ : অর্ধেকের বেশি কমেছে জিপিএ ৫

Printed Edition
এইচএসসি ফল প্রকাশের পর রাজউক স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপালের সাথে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা : নয়া দিগন্ত
এইচএসসি ফল প্রকাশের পর রাজউক স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপালের সাথে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা : নয়া দিগন্ত

শাহেদ মতিউর রহমান

দীর্ঘ দুই দশক সময় পর এবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে বিপর্যয় ঘটেছে। মাত্র এক বছরের ব্যবধানেই পাসের সংখ্যা ১৯ শতাংশ কমে গেছে। এ বছর এইচএসসিতে পাস করেছে ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। ২০০৫ সালের পর এবারই প্রথম ফলাফলে এমন ধস হয়েছে। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তিনটি বিষয়ে শিক্ষার্থীরা খারাপ করেছে বেশি। এর মধ্যে ইংরেজিতেই ফেল করেছে অধিকাংশ পরীক্ষার্থী। এ ছাড়া এবার জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও গত বছরের তুলনায় অর্ধেকের বেশি কমে গেছে। গত বছর জিপিএ ৫ পেয়েছিল এক লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন, এবার জিপিএ ৫ পেয়েছে মাত্র ৭৯ হাজার ৯৭ জন শিক্ষার্থী। একই সাথে এক বছরের ব্যবধানে পাসের হারেও ধস নেমেছে। পাসের হারও গত বছরের তুলনায় ১৯ শতাংশ কমেছে। অন্য দিকে শিক্ষা বোর্ডগুলোর বিবেচনায় ঢাকা বোর্ডে পাসের হার সবচেয়ে বেশি ৬৪.৬২ শতাংশ আর কুমিল্লা বোর্ডে সবচেয়ে কম ৪৮.৮৬ শতাংশ। প্রতি বছরের মতো এবারো মেয়েরা তুলনামূলক ভালো ফল করেছে। মেয়েদের পাসের হার ৬২.৯৭ শতাংশ আর ছেলেদের পাসের হার ৫৪.৬০ শতাংশ। জিপিএ ৫ পাওয়া মেয়েদের সংখ্যা ৩৭ হাজার ৪৪ জন, অন্য দিকে ছেলেদের সংখ্যা ৩২ হাজার ৫৩ জন।

গতকাল বৃহস্পতিবার চলতি বছরের বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা গেছে, বিগত দুই দশকের মধ্যে এবার উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীায় সবচেয়ে কম পাসের হার রেকর্ড হয়েছে। ২০০৫ সালে এইচএসসিতে পাসের হার ছিল ৫৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। এর পর থেকে প্রায় প্রতি বছরই পাসের হার বেড়েছে বা সামান্য কমবেশি হয়েছে। কিন্তু এবার তাতে বড় ধাক্কা এসেছে। ২১ বছর পর শিার্থীদের ফলাফলে একপ্রকার ধস নেমেছে।

সূত্রমতে, এবার ৯টি সাধারণ শিা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীায় গড় পাসের হার ৫৭ দশমিক ১২, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৯ শতাংশ কম; অর্থাৎ এ বছর প্রায় ৪৩ শতাংশ পরীার্থী পাস করতে পারেননি। শুধু পাসের হার নয়, জিপিএ ৫ পাওয়া শিার্থীর সংখ্যাও বিপুল পরিমাণে কমেছে। গত বছর জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন এক লাখ ৩১ হাজার ৩৭৬ জন, তার আগের বছর পেয়েছিলেন ৭৮ হাজার ৫২১ জন; কিন্তু এ বছর সেই সংখ্যা নেমে এসেছে ৬৩ হাজার ২১৯ জনে। যদিও মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে হিসাব করলে এই সংখ্যা আরো অনেক কমে যাবে।

৯টি সাধারণ শিা বোর্ডে এ বছর পরীায় অংশ নিয়েছিলেন ১০ লাখ ৪৭ হাজার ২৪২ জন শিার্থী। এর মধ্যে পাস করেছেন পাঁচ লাখ ৯৮ হাজার ১৬৬ জন। একই সাথে মাদরাসার আলিম ও কারিগরির এইচএসসি ভোকেশনাল, বিএম ও ডিপ্লোমা ইন কমার্স পরীার ফলাফলও প্রকাশ করা হয়। অবশ্য ফল বিপর্যয়ের মধ্যেও মাদরাসা বোর্ডে পাসের হার এবার ৭৫.৬১ শতাংশ।

শিার তথ্য নিয়ে কাজ করে বাংলাদেশ শিা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস)। তাদের তথ্যানুসারে ২০০৫ সালে এইচএসসিতে পাসের হার ছিল ৫৯ শতাংশের বেশি। ২০০৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৬৪ শতাংশ, ২০০৭ সালে ৬৪ শতাংশের ওপরে, ২০০৮ সালে প্রায় ৭৫ শতাংশ হয়। কিন্তু ২০০৯ সালে তা কমে যায় ৭০ দশমিক ৪৩ শতাংশে। এর পরবর্তী বছরগুলোয় পাসের হার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে। শুধু তিন বছর (২০১৫, ২০১৭ ও ২০১৮) ৭০ শতাংশের নিচে নেমেছিল।

তবে ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে সরাসরি পরীা হয়নি, ফলে ‘বিশেষ প্রক্রিয়ায়’ সবাই উত্তীর্ণ হয়। এরপর ২০২১ ও ২০২২ সালে ভিন্ন পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত পরীায় পাসের হার ছিল এক বছর ৮৪ শতাংশের বেশি, আরেক বছর ৯৫ শতাংশের বেশি। কিন্তু ২০২৩ সালে তা আবার ৮০ শতাংশের নিচে নেমে আসে। আর এ বছর পৌঁছাল ৫৭ শতাংশে, যা গত ২১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এবারের ফলাফল পর্যালোচনায় দেখা গেছে ইংরেজি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে তুলনামূলক বেশি অকৃতকার্য হয়েছে। এটি সার্বিক ফলাফলের ওপরে বড় প্রভাব ফেলেছে।

যদিও গত বছর পরীার্থীদের একাংশের চাপের মুখে মাঝপথে বাতিল করা হয়েছিল এইচএসসিতে স্থগিত হয়ে পড়া কয়েকটি বিষয়ের পরীা। এ অবস্থায় তখন যেসব বিষয়ের পরীা হয়ে গিয়েছিল, সেগুলোর উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হয়। আর যেসব বিষয়ের পরীা হয়নি, সেগুলোর ফলাফল তৈরি হয়েছিল পরীার্থীদের এসএসসি বা সমমানের পরীার ফলাফলের ভিত্তিতে বিষয় ম্যাপিং করে।

মেধা অনুযায়ীই ফল : এ দিকে আন্তঃশিা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির ফল প্রকাশ উপলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, শিক্ষার্থীরা তাদের মেধা অনুযায়ী ফল লাভ করেছে। কেননা আমরা কাউকে কোনো ছক বেঁধে দিইনি বা নির্দিষ্ট করে দিইনি যে এভাবে নম্বর ছাড় দেবেন অথবা ওভারমার্কিং (যা প্রাপ্য নয়, তার চেয়ে বেশি নম্বর দেয়া) করবেন, বেশি বেশি দিয়ে পাসের হার বাড়াতে হবে, এ রকম কোনো প্রশ্নই ওঠে না। তিনি বলেন, গত এসএসসি পরীার সময়ে শিা মন্ত্রণালয় থেকে বলে দেয়া হয়েছে নিয়ম মোতাবেক চলবে। বোর্ড পরীকদের উত্তরপত্র মূল্যায়নের নিয়মটি স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। সঠিক মূল্যায়নের জন্য এবার সময়ও বাড়িয়ে দেয়া হয়। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, প্রায় অর্ধেক পরীার্থী পাস করতে পারেনি, আবার গ্রাম-শহরের ফলাফলেও ব্যাপক তারতম্য দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, এই যে প্রায় অর্ধেক শিার্থী পাস করল না, এটি তো কাক্সিক্ষত নয়। এ বিষয়টিতে আমরা একটি আয়নার সামনে দাঁড়িয়েছি। তাতে আমরা দেখতে পাচ্ছি, গলদ আছে, অবশ্যই গলদ আছে। সেই গলদের জায়গাগুলো ঠিক করতে হবে। সেই দায়িত্ব শিাপ্রতিষ্ঠানের, সেই দায়িত্ব বোর্ডের, সেই দায়িত্ব সবার।

আমরা প্রকৃত সঙ্কট আড়াল করেছি : অন্য দিকে ফল প্রকাশের পর সচিবালয়ে শিা উপদেষ্টা সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘এ বছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীার ফলাফল অনেককে বিস্মিত করেছে। পাসের হার এবং জিপিএ ৫ আগের বছরের তুলনায় কম এবং প্রশ্ন উঠেছে- কেন? এর উত্তর জটিল নয়, বরং সহজ; কিন্তু অস্বস্তিকর। বাংলাদেশে শেখার সঙ্কট শুরু হয় খুব শুরুর দিকেই। প্রাথমিক স্তর থেকেই শেখার ঘাটতি তৈরি হয় এবং সেই ঘাটতি বছরের পর বছর সঞ্চিত হয়। কিন্তু আমরা দীর্ঘদিন এই বাস্তবতার মুখোমুখি হতে চাইনি। আমরা এমন এক সংস্কৃতি গড়ে তুলেছি যেখানে সংখ্যাই সত্য হয়ে উঠেছিল- পাসের হারই সাফল্যের প্রতীক, জিপিএ ৫-এর সংখ্যা ছিল তৃপ্তির মানদণ্ড। ফলাফল ভালো দেখাতে গিয়ে আমরা অজান্তেই শেখার প্রকৃত সঙ্কট আড়াল করেছি। আজ আমরা সেই সংস্কৃতির পরিবর্তন চাই।’ তিনি বলেন, চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীায় পাস করেছে ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ শিার্থী, যা গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম। দ্বাদশ শ্রেণীর গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিার পর্যায়ে পা রাখতে যাওয়া এই শিার্থীদের মধ্যে ৬৯ হাজার ৯৭ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে, যা উত্তীর্ণের মোট সংখ্যার ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। এর আগে ২০২৪ সালে এ পরীায় পাসের হার ছিল ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ; তাদের মধ্যে এক লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন জিপিএ ৫ পেয়েছিল। এই হিসাবে ২০২৪ সালের পরীায় পাসের হার কমেছে ১৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ পয়েন্ট। আর জিপিএ ৫ পাওয়া শিার্থীর সংখ্যা কমেছে ৭৬ হাজার ৮১৪ জন।

৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ডের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এইচএসসিতে পাসের হার ৫৭ দশমিক ১২ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৬৩ হাজার ২১৯ জন। আলিম পরীায় পাসের হার ৭৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছেন চার হাজার ২৬৮ জন। কারিগরি বোর্ডে পাসের হার ৬২ দশমিক ৬৭ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে এক হাজার ৬১০ জন।

বোর্ড অনুযায়ী পাসের হার : ঢাকা শিা বোর্ডে পাসের হার ৬৪ দশমিক ৬২ শতাংশ, রাজশাহীতে ৫৯ দশমিক ৪০ শতাংশ, কুমিল্লায় ৪৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ, যশোরে ৫০ দশমিক ২০ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৫২ দশমিক ৫৭ শতাংশ, বরিশালে ৬২ দশমিক ৫৭ শতাংশ, সিলেটে ৫১ দশমিক ৮৬ শতাংশ, দিনাজপুরে ৫৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৫১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। মাদরাসা বোর্ডে পাসের হার ৭৫ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং কারিগরিতে পাসের হার ৬২ দশমিক ৯৭ শতাংশ।

শতভাগ পাস ও শতভাগ ফেল প্রতিষ্ঠান : এ বছর শতভাগ পাস করা শিাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কমে গেছে। গত বছর এক হাজার ৩৮৮টি প্রতিষ্ঠান থেকে সব শিার্থী পাস করেছিলেন, এ বছর এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা নেমে এসেছে মাত্র ৩৪৫টিতে। আবার শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০২, যা গত বছর ছিল মাত্র ৬৫টি।

ছাত্রছাত্রীদের পাসের তুলনা : ১১টি শিা বোর্ডে মোট ছাত্রের চেয়ে ৮৭ হাজার ৮১৪ জন বেশি ছাত্রী উত্তীর্ণ হয়েছেন। ছাত্রের চেয়ে পাঁচ হাজার ৯৭ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ ৫ পেয়েছে। ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৬৬১ জন অংশ নেয়। উত্তীর্ণ হয় সাত লাখ ২৬ হাজার ৯৬০ জন। ছাত্র উত্তীর্ণ হয়েছে তিন লাখ ৩৩ হাজার ৮৬৪ জন। ছাত্রী উত্তীর্ণ হয়েছে তিন লাখ ৯৩ হাজার ৯৬ জন। ছাত্রদের পাসের হার ৫৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। ছাত্রীদের পাসের হার ৬২ দশমিক ৯৭ শতাংশ। ৩২ হাজার ৫৩ জন ছাত্র জিপিএ ৫ পেয়েছে, আর ৩৭ হাজার ৪৪ জন ছাত্রী জিপিএ ৫ পেয়েছে।

বোর্ডভিত্তিক জিপিএ ৫ : ঢাকা বোর্ডে জিপিএ ৫ পেয়েছে ২৬ হাজার ৬৩ জন, রাজশাহীতে ১০ হাজার ১৩৭ জন, কুমিল্লায় দুই হাজার ৭০৭ জন, যশোরে পাঁচ হাজার ৯৯৫ জন, চট্টগ্রামে ছয় হাজার ৯৭ জন, বরিশালে এক হাজার ৬৭৪ জন, সিলেটে এক হাজার ৬০২ জন, দিনাজপুরে ছয় হাজার ২৬০ জন, ময়মনসিংহে দুই হাজার ৬৮৪ জন, মাদরাসা বোর্ডে চার হাজার ২৬৮ জন এবং কারিগরিতে এক হাজার ৬১০ জনসহ মোট জিপিএ ৫ পেয়েছে ৬৯ হাজার ৯৭ জন।

সর্বোচ্চ পাসের হার মাদরাসা বোর্ডে ৭৫.৬১ : এবার ফল বিপর্যয়ের মধ্যেও মাদরাসা বোর্ডে পাসের হার সর্বোচ্চ। মাদরাসা বোর্ডে পাসের হার ৭৫.৬১। মাদরাসা শিা বোর্ডের অধীনে আলিম পরীার্থীর সংখ্যা ৮২ হাজার ৮০৯ জন, এর মধ্যে পাস করেছে ৬২ হাজার ৬০৯ জন। এদের মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে চার হাজার ২৬৮ জন। দুই হাজার ৬৮৫টি মাদরাসার এসব শিার্থী ৪৫৯টি কেন্দ্রে পরীা দেয়। অন্য দিকে কারিগরি শিা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি (ভোকেশনাল) ও ডিপ্লোমা ইন কমার্স পরীার্থী এক লাখ পাঁচ হাজার ৬১০ জন। এদের মধ্যে পাস করেছে ৬৬ হাজার ১৮৫ জন। পাসের হার ৬২.৬৭ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে এক হাজার ৬১০ জন। এক হাজার ৮৩৫টি প্রতিষ্ঠানের এসব শিার্থী ৭৩৩টি কেন্দ্রে অংশ নেয়।

ভালো করেছে ঢাকার ১০ কলেজ : ফলাফলে দেখা যাচ্ছে ঢাকার ১০টি কলেজ ভালো করেছে এবার। কলেজগুলোর মধ্যে ভালো রেজাল্ট করেছে রাজধানীর নটর ডেম কলেজ। তিন বিভাগে এই কলেজে মোট তিন হাজার ২৫১ জন পরীায় অংশ নেয়। এর মধ্যে তিন হাজার ২২৬ জন উত্তীর্ণ এবং ২৫ জন অনুত্তীর্ণ। কলেজটির পাসের হার প্রায় ৯৯ দশমিক ২৩ শতাংশ। কলেজের তিন বিভাগের মোট জিপিএ ৫ প্রাপ্তির সংখ্যা দুই হাজার ৪৫৪ জন। আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে মোট দুই হাজার ৩৬৭ জন শিার্থী পরীায় অংশগ্রহণ করেছে। এর মধ্যে দুই হাজার ৩১৫ জন উত্তীর্ণ এবং ৫২ জন অনুত্তীর্ণ। পাসের হার ৯৭ দশমিক ৮ শতাংশ। উত্তীর্ণদের মধ্যে সর্বোচ্চ জিপিএ ৫ পেয়েছেন এক হাজার ২২৯ জন শিার্থী। যার মধ্যে ৫৩৮ জন ছাত্র এবং ৬৯১ জন ছাত্রী। ঢাকা কলেজ থেকে এবারের এইচএসসি পরীার্থী ছিল মোট এক হাজার ১৩৮ জন। এর মধ্যে এক হাজার ১৩৭ জন পরীায় অংশ নেয়। পাস করেছেন এক হাজার ১২৭ জন। পাসের হার ৯৯ দশমিক ১২ শতাংশ। এদের মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৮৫৭ জন শিার্থী। ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ থেকে এবারের এইচএসসি পরীায় মোট এক হাজার ১৬ জন শিার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে এক হাজার ১৪ জন এবং অনুত্তীর্ণ দু’জন। পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৯৯ দশমিক ৮ শতাংশ। উত্তীর্ণদের মধ্যে সর্বোচ্চ জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৮৫১ জন শিার্থী।

রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে মোট এক হাজার ৬৯৩ জন শিার্থী পরীায় অংশ নেয়। উত্তীর্ণ হয়েছে এক হাজার ৬৯২ জন এবং অনুত্তীর্ণ একজন। পাসের হার ৯৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। উত্তীর্ণদের মধ্যে এক হাজার ২১৮ জন শিার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছে, যার মধ্যে ৫৭৪ জন ছাত্র ও ৬৪৪ জন ছাত্রী। হলিক্রস কলেজে মোট এক হাজার ৩০৭ জন শিার্থী পরীায় অংশ নেয়। এক হাজার ৩০৪ জন উত্তীর্ণ এবং তিনজন অনুত্তীর্ণ। পাসের হার ৯৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ। সর্বোচ্চ গ্রেড জিপিএ ৫ পেয়েছে ৯৬০ জন শিার্থী।

ঢাকা সিটি কলেজে মোট তিন হাজার ৪৪৮ জন শিার্থী রেজিস্ট্রেশন করে। আর পরীায় তিন হাজার ৪৪১ জন অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়েছে তিন হাজার ৩৬৯ জন। অনুত্তীর্ণ ৭২ জন। পাসের হার ৯৭ দশমিক ৯১ শতাংশ। সরকারি বিজ্ঞান কলেজে এক হাজার পাঁচজন পরীার্থীর মধ্যে ৯৯৮ জন অংশগ্রহণ করেছে। এদের মধ্যে ৯৮৭ জন উত্তীর্ণ এবং ১১ জন অনুত্তীর্ণ। উত্তীর্ণদের মধ্যে ৬৮৭ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে। পাসের হার ৯৮ দশমিক ৯০ শতাংশ।

বিএএফ শাহীন কলেজ, ঢাকাতে দুই হাজার ২১ জন শিার্থী পরীায় অংশগ্রহণ করেছে। এক হাজার ৯৯৫ জন উত্তীর্ণ এবং অনুত্তীর্ণ ২৬ জন। উত্তীর্ণদের মধ্যে এক হাজার দু’জন জিপিএ ৫ অর্জন করেছে। বীর শহীদ মুন্সি আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ, ঢাকাতে মোট এক হাজার ৮২৭ জন শিার্থী পরীায় অংশ নিয়েছে। এক হাজার ৮২৪ জন অংশগ্রহণ করে এক হাজার ৮০২ জন উত্তীর্ণ এবং পাসের হার ৯৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৫২৪ জন শিার্থী।

বরিশাল বোর্ডে পাস ৬২.৫৭ শতাংশ

বরিশাল ব্যুরো জানায়, এইচএসসিতে বরিশাল বোর্ডে পাসের হার ৬২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছেন এক হাজার ৬৭ জন। গত বছর থেকে এবার পাসের হার ও জিপিএ ৫ কমেছে। গতবার পাসের হার ছিল ৮১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এর মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন চার হাজার ১৬৭ জন শিার্থী।

গতকাল সকালে ফলাফল ঘোষণা করেন বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ইউনুস আলী সিদ্দিকী। তিনি জানান, এ বছর পরীায় অংশ নিয়েছিল ৫৯ হাজার ২৩৯ জন শিার্থী। এর মধ্যে ছাত্র ২৭ হাজার ৮৩৭ জন ও ছাত্রী ৩১ হাজার ৪০২ জন। পাস করেছে ৩৭ হাজার ৬৬ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১৪ হাজার ৬৪২ জন ও ছাত্রী ২২ হাজার ৪২৪ জন।

এ দিকে এ শিা বোর্ডের ১২টি কলেজের কোনো পরীার্থী পাস করেনি। বোর্ডের ৩৪৯টি কলেজের ৩৭ হাজার ৬৬ শিার্থীরা ১৪৪টি কেন্দ্রে এবারের এইচএসসি পরীায় অংশগ্রহণ করেন। যার মধ্যে ১২টি কলেজের কোনো পরীার্থী পাস করেনি। আর মাত্র দু’টি শিাপ্রতিষ্ঠানের সবাই অর্থাৎ শতভাগ পাস করেছেন। বোর্ডের আওতাধীন ছয়টি জেলার মধ্যে পাসের হারের দিক থেকে এবারে শীর্ষে রয়েছে বরিশাল জেলা। আর সবার নিচের অবস্থানে রয়েছে বরগুনা জেলা।

শিা বোর্ডের পরীা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর জি এম শহীদুল ইসলাম জানান, এবারেও ছেলেদের থেকে মেয়েরা ভালো ফলাফল করেছে। যেখানে পাস হারের ব্যবধান ১৮ দশমিক ৬০ শতাংশ। তিন বিভাগে পাসের হার মিলিয়ে দেখা যায় মেয়েরা ৭১.৪১ শতাংশ পাস করেছে, যেখানে ছেলেদের পাসের হার ৫২.৬০। আর সংখ্যায় হিসাব কষলে ২২ হাজার ৪২৪ জন মেয়ে এবং ১৪ হাজার ৬৪২ জন ছেলে পাস করেছে।

চট্টগ্রামে পাসের হার ৫২.৫৭ শতাংশ

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রাম শিা বোর্ডে এবারের পাসের হার ৫২.৫৭ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছেন ছয় হাজার ৯৭ জন শিার্থী। পাসের হারে ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন মেয়েরা। এ ছাড়া পাঁচ কলেজের ৯ শিক্ষার্থীর পাস করেনি কেউই।

গতকাল চট্টগ্রাম শিা বোর্ড মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পরীা নিয়ন্ত্রক পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, এবার চট্টগ্রাম শিা বোর্ডে মোট পরীার্থী ছিলেন এক লাখ দুই হাজার ৯৭০ জন। এর মধ্যে পাস করেছেন ৫৩ হাজার ৫৬০ জন। ছেলেদের পাসের হার ৪৮.৯৫%, মেয়েদের ৫৫.৪৯%। বিভাগভিত্তিক ফলাফলে দেখা গেছে, বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৭৮.৭৫%, ব্যবসায় শিা বিভাগে ৫৫.৩০% এবং মানবিক বিভাগে ৩৭.০৮%। চট্টগ্রাম নগরে পাসের হার ৭০.৯০% এবং জেলার পাসের হার ৪৩.৬৩%।

বোর্ডের অধীনে ২৮১টি কলেজ থেকে এক লাখ দুই হাজার ৯৭০ জন পরীায় অংশ নেন। এর মধ্যে পাঁচটি কলেজ থেকে পরীায় অংশ নেয়া ৯ জন শিার্থীর মধ্যে কেউ পাস করতে পারেননি। চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও এলাকার মেরন সান কলেজ থেকে দুইজন পরীায় অংশ নেয়। মেরিট বাংলাদেশ কলেজ থেকে শুধু একজন পরীা দিয়েছে। পাহাড়তলী এলাকার সরাইপাড়া সিটি করপোরেশন কলেজ থেকে তিনজন পরীার্থী অংশ নেয়। কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার চকরিয়া কলেজ থেকে একজন পরীায় অংশ নিয়েছে। এ ছাড়া নগরের পাঁচলাইশ এলাকার চট্টগ্রাম জেলা কলেজ থেকে দুইজন পরীায় অংশ নিলেও কেউ পাস করেনি।

দিনাজপুর বোর্ডের ৪৩ কলেজ থেকে পাস নেই

রংপুর ব্যুরো জানায়, দিনাজপুর শিা বোর্ডের মাত্র ৫৭ দশমিক ৪৯ ভাগ শিার্থী পাস করলেও রংপুর শতভাগসহ মহানগরীর সব ক’টি কলেজের পাসের হার ৯০ ভাগের ওপরে। মোট ছয় হাজার ২৬০ জন জিপিএ ৫ পেলেও তার বেশির ভাগই নগরীর প্রতিষ্ঠানগুলোর। এই বোর্ডে এবার জিপিএ ৫ এবং পাসের হারে ছাত্রীরা এগিয়ে। এ ছাড়া এই বোর্ডের ৪৩টি কলেজ থেকে কেউ পাস করেনি। শতভাগ পাস করেছে ১১টি কলেজ থেকে।

পরীা নিয়ন্ত্রক দফতর থেকে পাওয়া তথ্যমতে, এবার দিনাজপুর শিা বোর্ডে রংপুর বিভাগের আট জেলার এক লাখ পাঁচ হাজার ১৯৮ জন পরীা দিয়ে দিয়ে পাস করেছে ৫৭ দশমিক ৪৯ ভাগ। এর মধ্যে ছাত্রী পাসের হার ৬১ দশমিক ৯২ এবং ছাত্র পাসের হার ৫২ দশমিক ৬৫ ভাগ। জিপিএ ৫ পেয়েছে ছয় হাজার ২৬০ জন। এর মধ্যে ছাত্রী রয়েছেন তিন হাজার ৪৮৬। এই বোর্ডে এবার অনুপস্থিত শিার্থীর সংখ্যা দুই হাজার ৭৫৮ জন। এ দিকে মাদরাসা শিা বোর্ডের মধ্যে বরাবরের মতো এবারো শীর্ষে রয়েছে রংপুর ধাপসাতগড়া কামিল মাদরাসা। এখান থেকে ১৬৫ জন শিার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১৬৩ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৩৭ জন।

সিলেট বোর্ডে ১২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পাস

সিলেট ব্যুরো জানায়, এবারের পরীক্ষার ফলাফলে সিলেট বোর্ডে ধস নেমেছে। এ বছর সিলেট বোর্ডে পাসের হার ৫১ দশমিক ৮৬ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে এক হাজার ৬০২ জন। যা বিগত ১২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত বছর সিলেট বোর্ডে পাসের হার ছিল ৮৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ছয় হাজার ৬৯৮ জন। এ বছর সিলেট বোর্ডে পরীক্ষার্থী ছিল ৬৯ হাজার ১৭২ জন। তার মধ্যে পাস করেছে ৩৫ হাজার ৮৭১ জন।

গতকাল ফলাফল ঘোষণা করেন সিলেট শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো: আনোয়ার হোসেন চৌধুরী। ফলাফল ধসের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ইংরেজিসহ কয়েকটি বিষয়ে খারাপ করার কারণে সামগ্রিক ফলাফল খারাপ হয়েছে।

প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, এ বছর শতভাগ পাস করেছে তিনটি প্রতিষ্ঠান। এর আগের বছর শতভাগ পাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল আটটি। এবার একজন শিক্ষার্থীও পাস করেনি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা চারটি। এটি বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এ বছর সিলেট বোর্ডে পাসের হার ৫১ দশমিক ৮৬। গত বছর ছিল ৮৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ, ২০২৩ সালে ৭১ দশমিক ৬২ শতাংশ, ২০২২ সালে ৮১ দশমিক ৪০ শতাংশ, ২০২১ সালে ৯৪ দশমিক ৮০ শতাংশ।

রাজশাহীতে পাস ৫৯.৪০ শতাংশ

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে ৫৯ দশমিক ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। আর জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১০ হাজার ১৩৭ জন। গতকাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের দফতরে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে চেয়ারম্যান অধ্যাপক আ ন ম মোফাখখারুল ইসলাম এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, গত বছর রাজশাহী বোর্ডে পাসের হার ছিল ৮১ দশমিক ২৪ শতাংশ। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ২৪ হাজার ৯০২ জন। আর এ বছর জিপিএ-৫ কমেছে ১৪ হাজার ৭৬৫ জন। চেয়ারম্যান আরো বলেন, এ বছর জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের মধ্যে ৫ হাজার ৬৮২ ছাত্রী ও ৪ হাজার ৪৫৫ জন ছাত্র। আর ছাত্র পাসের হার ৫০ দশমিক ৬৯ শতাংশ ও ছাত্রী পাসের হার ৬৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ। অর্থাৎ জিপিএ-৫ প্রাপ্তি ও পাসের হারে এ বছরও এগিয়ে রয়েছেন ছাত্রীরা।

এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন বিভাগের আট জেলায় এক লাখ ৩৪ হাজার ১৪৩ শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে ৭৭ হাজার ৭৪২ জন শিক্ষার্থী পাস করেছেন। এবার শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন ১৮টি কলেজের শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। আর ৩৫টি কলেজের শতভাগ শিক্ষার্থী ফেল করেছেন।

যশোর বোর্ডে ফল বিপর্যয়

যশোর অফিস জানায়, যশোর শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষায় ফল বিপর্যয় হয়েছে। পাসের হার সারা দেশের মধ্যে প্রায় তলানিতে ঠেকেছে। এ বছর পাসের হার ৫০.২০, যা স্মরণকালের মধ্যে সর্বনিম্ন। বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, ভেন্যু কেন্দ্র প্রত্যাহার করে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পরীক্ষা গ্রহণের কারণে এমনটি হয়েছে। যদিও বোর্ড কর্তৃপক্ষ এটিকে বিপর্যয় বলতে নারাজ। এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে পাঁচ হাজার ৯৯৫ জন। বৃহস্পতিবার যশোর শিক্ষা বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে ফলাফল ঘোষণা করেন চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ আসমা বেগম।

এ বছর যশোর বোর্ডের আওতায় ১০ জেলা থেকে মোট এক লাখ ১২ হাজার ৫৭৪ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এদের মধ্যে কৃতকার্য হয়েছে ৫৬ হাজার ৫০৯ জন।

জেলা পর্যায়ে পাসের হারে এবার শীর্ষে রয়েছে যশোর। এ জেলায় পাস করেছে ৫৮.২৫ শতাংশ। এ ছাড়া, খুলনায় ৫৩.৯৮, বাগেরহাটে ৪১.৮৫, সাতক্ষীরায় ৫২.৬৪, কুষ্টিয়ায় ৪৮.৮৫, চুয়াডাঙ্গায় ৫০.৩৫, মেহেরপুরে ৪৮.৫১, নড়াইলে ৪৬.৪৬, ঝিনাইদহে ৪৫.০৭ ও মাগুরায় সর্বনিম্ন ৩৭.৪৬ শতাংশ পাস করেছে।

ভেন্যুকেন্দ্র বাতিলে কুমিল্লায় স্মরণকালের কম পাস

কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, কুমিল্লা বোর্ডে পাসের হার ৪৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই হাজার ৭০৭ জন। জিপিএ-৫ ও পাসের হারে মেয়েরা এগিয়ে। গতকাল ফলাফল ঘোষণা করেন শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো: শামছুল ইসলাম। এবার মোট পরীক্ষার্থী ছিল এক লাখ এক হাজার ৯৯৭ জন। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৯৯ হাজার ৫৭৬ জন। পাস করেছে ৪৭ হাজার ৬৫৭ জন।

শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান জানান, অন্যান্য সময়ে ভেন্যুকেন্দ্রের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। এবার ১৬২টি ভেন্যুকেন্দ্র বাতিল করা হয়েছে। ভেন্যুকেন্দ্রের কারণে অনেকে সুবিধা নিত। এ বছর সে সুযোগ ছিল না। এ ছাড়া ইংরেজিতে পাসের হার ৬৫ দশমিক ২৮ শতাংশ। উচ্চতর গণিতেও পাসের হার কম। ইংরেজিতে ফেলের হার বেশি থাকায় সামগ্রিক ফলাফলে প্রভাব পড়েছে।

ময়মনসিংহের ১৫ প্রতিষ্ঠানে কেউ পাস করেনি

ময়মনসিংহ অফিস জানায়, ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডে এবার পাসের হার ৫১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এ বোর্ড থেকে এইচএসসিতে ৭৫ হাজার ৮৫৫ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। পাস করেছে ৩৯ হাজার ৯৬ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ৬৮৪ জন। জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছেলে শিক্ষার্থী এক হাজার ১১৭ এবং মেয়ে শিক্ষার্থী এক হাজার ৫৬৭। জিপিএ-৫ এবং পাসের হারে এবারও মেয়েরা এগিয়ে।

গতকাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো: শহীদুল্লাহ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। তিনি জানান, বিজ্ঞান শাখায় ৭৬ দশমিক ৯০ শিক্ষার্থী পাস করলেও মানবিক এবং ব্যবসায় শিক্ষা শাখার ফলাফলে ভরাডুবি হয়েছে। ব্রিফিংয়ে আরো জানানো হয়, এবার মাত্র তিনটি প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার্থীরা শতভাগ পাস করেছে। প্রতিষ্ঠান তিনটি হলো- ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার চরজিথর হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলার আব্দুল জব্বার রাবেয়া খাতুন হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এদিকে শতভাগ অকৃতকার্য প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৫টি।