প্রশাসনের নাকের ডগায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কার্যক্রম

প্রশ্নবিদ্ধ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা

``নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের অনেক সাবেক নেতা এখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। ফলে তাদের সহযোগিতা নিচ্ছে সংগঠনটি।''

ইকবাল মজুমদার তৌহিদ
Printed Edition
নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ার পর ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল
নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ার পর ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল |ফাইল ফটো

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যেই মিছিল করছে গণহত্যার দায়ে নিষিদ্ধ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। তবে এই অপতৎপরতা বন্ধে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যেদের। ফলে তাদের এই ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে দেশের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোসহ সাধাণ মানুষ।

ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা বলছেন, বিগত সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সরকার বিরোধী হওয়ায় দেশের বৈধ ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনের সাথে যে কঠোরতা দেখিয়েছে তার নূ্যূনতম কঠোরতাও একটি নিষিদ্ধ সংগঠনের বিরুদ্ধে দেখাচ্ছে না।

এসব ছাত্র সংগঠনের নেতারা অভিযোগ করেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের অনেক সাবেক নেতা এখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। ফলে তাদের সহযোগিতা নিচ্ছে সংগঠনটি।

তারা আরো বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার শত শত জীবনের বিনিময়ে অর্জিত বিপ্লবের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশের জনগণ ও ছাত্রসমাজের প্রত্যাশা ছিল তারা বিপ্লবের চেতনা ধারণ করে দেশকে ফ্যাসিস্ট মুক্ত করবেন। কিন্তু দুঃখের সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে সরকার ফ্যাসিস্ট মুক্তের পরিবর্তে তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করছে। ফলে জুলাই বিপ্লবে গণহত্যা চালানো আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠার সাহস পাচ্ছে।

এ দিকে দেশের সাধারণ মানুষ মনে করছে, প্রশাসনের ব্যর্থতার পাশাপাশি দেশের ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অনৈক্যের সুযোগ নিচ্ছে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব নয়া দিগন্তকে বলেন, পুলিশ প্রশাসনে এখনো আওয়ামী আমলে নিয়োগ পাওয়া অনেক স্বৈরাচারের দোসর স্বপদে বহাল রয়েছেন। অনেকে পদায়ন পাচ্ছেন। পুলিশ প্রশাসনে থাকা এসব কর্মকর্তা সরাসরি আওয়ামী পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এই দায় সরকারের। অন্তর্বর্তী সরকারের ফ্যাসিবাদবিরোধী যে অবস্থান নেয়ার কথা ছিল তারা তা নিচ্ছেন না।

এ সময় সারা দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সেক্রেটারি শেখ মাহবুবুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, পীর সাহেব চরমোনাইর দাবি ছিল আওয়ামী লীগকে অন্তত তিনটা নির্বাচনে নিষিদ্ধ করা হোক। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার এখন পর্যন্ত তাদের নিষিদ্ধ করতে পারেনি। তাই আওয়ামী লীগের ব্যানারে মিটিং মিছিল সাংবিধানিকভাবে এখনো নিষিদ্ধ না। ফলে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আওয়ামী লীগের যেসব দোসর রয়েছে তারা ছাত্রলীগকে কর্মকাণ্ড চালাতে সুযোগ করে দিচ্ছেন এবং ছাত্রলীগও আওয়ামী লীগের ব্যানারে তাদের কর্মকাণ্ড চালানো শুরু করেছে। তাই আমরা আবারো বলবো, আওয়ামী লীগ যেহেতু পরপর তিনটি নির্বাচনে জনগণকে ভোট দিতে দেয়নি, সেহেতু অন্তত তিনটি নির্বাচন পর্যন্ত তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হোক।

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ছাত্রলীগের মিছিলের বিষয়ে জানতে চাইলে সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মফিজুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যে মিছিলটি হয়েছে সেটি আওয়ামী লীগ করেছে, ছাত্রলীগ নয়। আওয়ামী লীগ তো নিষিদ্ধ নয়।

মিছিলে অংশ নেয়া সবাই নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা, তাদের বিষয় কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, দেখেন ছাত্রলীগকে এই সরকার নিষিদ্ধ করেছে। পূর্বে তো তারা নিষিদ্ধ ছিল না। তাই এখন কেউ ছাত্রলীগের ব্যানারে কোনো অপরাধ সংঘটিত করলে তবে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

দীর্ঘবছর পর নিয়োগ পাওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিসিএস কর্মকর্তারা নয়া দিগন্তকে বলেন, ৫ আগস্টের পরবর্তীতে দীর্ঘসময় পর আমরা কিছু ভিন্নমতের পুলিশ কর্মকর্তা নিয়োগ পেলেও পুলিশে থাকা বেশির ভাগ কর্মকর্তা এখনো আওয়ামী সুবিধাভোগী বা আওয়ামী মতাদর্শী। ফলে তারা বিভিন্নভাবে এখনো আওয়ামী নেতাদের সাথে যোগাযোগ রাখেন এবং তাদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করেন। এসব পুলিশ কর্মকর্তার অনেকে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্রেও লিপ্ত। তাই পুলিশকে কলঙ্কমুক্ত করতে হলে দেশবিরোধী কাজে লিপ্ত ঘাপটি মেরে থাকা এসব কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী নয়া দিগন্তকে বলেন, আওয়ামী লীগের হাতে অনেক টাকা। সেই অর্থের ব্যবহার করে সরকারে আওয়ামী লীগের অনেক লোক ঢুকে গেছে। এ বিষয়ে বিএনপি-জামায়াত গুরুত্ব দিচ্ছে না। তা ছাড়া আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ব্যাপারেও বিএনপি-জামায়াত শক্ত অবস্থান নিচ্ছে না। ফলে আওয়ামী লীগ দ্রুতই রাজনীতির মাঠে ফিরার কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। তবে আমি মনে করি, গণতন্ত্র পুনঃ প্রতিষ্ঠার স্বার্থে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে অন্তত তিনটা নির্বাচনে ফ্যাসিস্ট শক্তি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হোক।