জনি সিদ্দিক
আল-কুরআন ইসলাম ধর্মের মূল ভিত্তি। মানবজীবনের পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশনা। এটি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে প্রেরিত এক অনন্য অলৌকিক গ্রন্থ, যা শুধু ধর্মীয় উপদেশ নয়; বরং একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। কুরআনের প্রত্যেকটি শব্দ, অক্ষর এবং অর্থে রয়েছে এমন গভীরতা ও প্রজ্ঞা, যা মানব মস্তিষ্ককে চিন্তা ও গবেষণার জন্য আহ্বান করে।
প্রায় ১৫০০ বছর আগে নিরক্ষর মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর মাধ্যমে এই কুরআন অবতীর্ণ হয়েছিল। তখনকার যুগে বিজ্ঞান, দর্শন, রাজনীতি কিংবা সমাজব্যবস্থা আজকের মতো এত উন্নত ছিল না। অথচ কুরআনের ভাষা, শৈলী ও ভাব এত উচ্চমানের যে, সে সময়ের শ্রেষ্ঠ কবি ও সাহিত্যিকরাও তা অনুকরণ করে তৈরি করতে পারেননি। কুরআনের এই ভাষাগত সৌন্দর্যই প্রমাণ করে এটি কোনো মানবরচিত গ্রন্থ হতে পারে না; বরং আল্লাহর বাণী।
কুরআনের নির্দেশনাগুলো শুধু মুসলমানদের জন্য নয়; বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রযোজ্য। এটি মানুষকে ন্যায়, দয়া, শান্তি ও ভ্রাতৃত্ববোধ সম্পর্কে শেখায়। এতে বলা হয়েছে জ্ঞানার্জনের গুরুত্ব, সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা এবং পরিবেশ ও মানবতার প্রতি দায়িত্ববোধের কথা, নারী-পুরুষের অধিকার, প্রাণীর অধিকার, সৃষ্টির অধিকারসহ এমন কোনো বিষয় নেই যে এতে বাদ আছে। এমনকি আধুনিক বিজ্ঞান যখন মহাবিশ্ব, ভ্রƒণের সৃষ্টি বা সমুদ্রের রহস্য উন্মোচন করছে, তখন দেখা যায়, মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে শত শত বছর আগেই সেসব বিষয় সম্পর্কে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। শুধু মাথা খাটিয়ে গবেষণা করে এগুলোর খুঁটিনাটি বিচার-বিশ্লেষণ, গভীর তত্ত্ব বের করতে হবে।
আল-কুরআন এমন এক মুজিজা যা শতাব্দীর পর শতাব্দী পর্যন্ত মানবজাতির জন্য অনুসরণীয়। এটি শুধু একটি ধর্মগ্রন্থ নয়; বরং এটি হৃদয়কে আলোয় ভরিয়ে দেয়, মনের অন্ধকার দূর করে এবং মানুষকে ন্যায় ও সত্যের পথে চলার শিক্ষা দেয়। যতই যুগ পরিবর্তিত হোক, যতই প্রযুক্তি উন্নত হোক কুরআনের বাণী আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক, প্রেরণাদায়ক ও চিরন্তন সত্যের প্রতীক। অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ যেমন শুধু কোনো এক নবীর সাথে সম্পর্কিত ছিল। কিন্তু আল-কুরআন সমগ্র মানবজাতির জন্য; শুধু নির্ধারিত কোনো মানবগোষ্ঠীর জন্য নয়। আল-কুরআনের সবচেয়ে বড় মুজিজা হলো এর অপরিবর্তনীয়তা। কিয়ামত পর্যন্ত আল-কুরআনের একটি অক্ষর মাত্রও কেউ পরিবর্তন করতে পারবে না। আল্লাহ আমাদের সবাইকে আল-কুরআন মোতাবেক জীবন যাপন করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : প্রবন্ধকার



