প্রয়োজনীয় কাঁচা মাছের সঙ্কটে পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জের বিস্তীর্ণ চলনবিল অঞ্চলের অধিকাংশ শুঁটকি চাতাল এবার বন্ধ হয়ে গেছে। নদ-নদী ও খাল-বিলের পানি কমে গেলেও মিলছে না পর্যাপ্ত দেশী মাছ। অনেক ব্যবসায়ী এ কারণে চাতাল বসাননি; কেউ কেউ বসালেও মাছ না পেয়ে কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, অগ্রহায়ণ মাসে জেলেদের জালে সাধারণত প্রচুর মাছ ধরা পড়ে। তখন শুঁটকি ব্যবসায়ীদের ব্যস্ততা থাকে মাছ কেনা, ধোয়া, শুকানো ও বাছাই কাজে। বনপাড়া-হাটিকুমরুল সড়কের মহিষলুটি এলাকায় শুঁটকির গন্ধ নাকে ভেসে আসা ছিল স্বাভাবিক চিত্র। কিন্তু এবার মাছের অভাবে দৃশ্যপট পুরো বদলে গেছে; কর্মহীন হয়ে পড়েছেন শত শত শুঁটকি শ্রমিক, নারী-পুরুষ।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মাছের সঙ্কট এ মৌসুমে অভাবনীয় রূপ নিয়েছে। আগে বোয়াইলমারী, সোনাহার পাড়া, দিলপাশার, খাগড়বাড়িয়া, মহিষলুটি, গুরুদাসপুর, সিংড়া, হালতী, আত্রাই এবং উল্লাপাড়ার লাহিরী-মোহনপুর এলাকায় মৌসুমী শুঁটকি ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত সময় পার করতেন। এখানকার শুঁটকি সৈয়দপুর, নীলফামারীসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে সরবরাহ হতো। কিন্তু এখন এসব এলাকাতেই দেশী মাছের পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে।
সিরাজগঞ্জের সলঙ্গার শুঁটকি ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘চলনবিলে এবার মাছ নেই বললেই চলে। মৌসুমের শুরুতেই চায়না দুয়ারী জালে মা মাছ নিধন হওয়ায় সঙ্কট তৈরি হয়েছে। মেঘ-বৃষ্টি শুরুর দিকে লোকসান বাড়িয়েছে। যে সামান্য মাছ শুকিয়েছি, বাজারদর কম থাকায় বিক্রি করতে পারছি না।’
মহিষলুটির ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, ১৮ বছর ধরে শুঁটকি করছেন তিনি; কিন্তু ভরা মৌসুমে টানা ১৫ দিন কোনো মাছ পাননি। ‘যে সামান্য কাঁচা মাছ বাজারে আসে, তার দাম এত বেশি যে শুঁটকি করা সম্ভব নয়,’ বলেন তিনি। ভবিষ্যতে মানুষ হয়তো চলনবিলের শুঁটকির স্বাদই ভুলে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন রফিকুল। তার মতে, বিলের ভেতরে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন ও চায়না দুয়ারী জালের অবাধ ব্যবহার মাছের প্রজনন ধ্বংস করছে।
চাটমোহর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল মতিন বলেন, সাধারণত অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বেশি মাছ ধরা পড়ে। তবে চায়না দুয়ারী জাল ব্যবহারের কারণে মাছ কমেছে। এ ছাড়া জেলেরা অবৈধ স্বোতী জাল স্থাপন করতে না পারায় নদ-নদী হয়ে মাছ ভাটিতে নেমে যাচ্ছে। এতে স্থানীয় বাজারে কাঁচা মাছের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ায় যে সামান্য মাছ ধরা পড়ছে, তা স্থানীয়ভাবে না থেকে বাইরেই চলে যাচ্ছে। তিনি জানান, ‘কিছু মৌসুমী ব্যবসায়ী অল্প পরিমাণ মাছ শুকাতে পেরেছেন, অনেকে একেবারেই পারেননি।’
চলনবিলের শুঁটকি শিল্পের এই সঙ্কট দীর্ঘমেয়াদে স্থানীয় অর্থনীতি ও জীবিকার ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।



