রাজধানীর উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরের ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কসংলগ্ন ২০ ও ২১ নম্বর দু’টি বাণিজ্যিক প্লট রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের অনুকূলে খেলার মাঠ হিসেবে বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সভায়। মোট ৪৪ কাঠা আয়তনের এই দু’টি প্লট বর্তমানে অবৈধভাবে ‘বিডিআর মার্কেট’ নামে কাঁচাবাজার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। রাজউক কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজউকের সর্বশেষ বোর্ডসভায় কর্তৃপক্ষ বাণিজ্যিক প্লট বরাদ্দ নীতিমালার ব্যত্যয় ঘটিয়ে রাজউক কলেজকে প্রতীকী মূল্যে ২৬৪ কোটি টাকার এই জমি বরাদ্দ দানের প্রস্তাব অনুমোদন করে। ২০০৭ সাল থেকে এই জমিটি বরাদ্দ পাবার জন্য চেষ্টা করে রাজউক কলেজ সফল হয়নি। এবার স্বল্প সংখ্যক নতুন ও অনভিজ্ঞ বোর্ড সদস্যের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় এই অনুমোদন দেয়া হয়। প্রতীকী মূল্য কত হবে সেটি সভায় উল্লেখ করা হয়নি। অনেক সময় ১ টাকা প্রতীকী মূল্যে বরাদ্দ দানের দৃষ্টান্তও রয়েছে।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের অধ্যক্ষ ২৩ আগস্ট ২০২৫ তারিখে একটি আনুষ্ঠানিক আবেদন দাখিল করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন- কলেজের পশ্চিম পাশে প্রায় ২৭১ শতাংশ খালি জমির একটি অংশে অবৈধ বাজার গড়ে উঠেছে, বাকি অংশ এখনো ফাঁকা রয়েছে। কলেজে বর্তমানে প্রায় ৭৫০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত, কিন্তু তাদের জন্য পর্যাপ্ত খেলার মাঠ নেই। ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিয়মিত খেলাধুলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
অধ্যক্ষের প্রস্তাবে বলা হয়, উক্ত জমি বাণিজ্যিকভাবে নিলামে না দিয়ে যদি কলেজের অনুকূলে খেলার মাঠ হিসেবে বরাদ্দ দেয়া হয়, তবে শুধু কলেজের শিক্ষার্থীরাই নয়, আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৫ থেকে ২০ হাজার শিক্ষার্থীও নিয়মিত খেলাধুলা ও বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠান আয়োজনের সুযোগ পাবে। এতে এলাকার শিশু-কিশোরদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
রাজউকের কানুনগো কর্তৃক সরেজমিন পরিদর্শনের প্রতিবেদনেও দেখা যায়, ২০ ও ২১ নম্বর প্লটদ্বয় খালি এবং দখলমুক্ত করা গেলে মাঠ হিসেবে ব্যবহারযোগ্য। তবে এসব প্লট রাজউকের লেআউট নকশায় বাণিজ্যিক জমি হিসেবে চিহ্নিত রয়েছে।
রাজউকের সদস্যের (এস্টেট ও ভূমি) মন্তব্য অনুযায়ী, ‘প্লট নং ২০ ও ২১ বর্তমানে অবরাদ্দ এবং লেআউট নকশায় বাণিজ্যিক প্লট হিসেবে দেখানো আছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত কর্মপত্র প্রস্তুতপূর্বক কর্তৃপক্ষের সভায় আলোচনার জন্য উপস্থাপন করা যেতে পারে।’
বর্তমানে ওই এলাকায় প্রতি কাঠা বাণিজ্যিক জমির সরকারি ভিত্তিমূল্য ৬ কোটি টাকা নির্ধারিত। সে হিসাবে ৪৪ কাঠা জমির আনুমানিক মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ২৬৪ কোটি টাকা। রাজউক সম্প্রতি একই এলাকায় বিআরবি কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে নিলামের মাধ্যমে প্রায় ১২৪ কোটি টাকায় জমি বরাদ্দ দিয়েছে।
রাজউকের কর্মকর্তারা মনে করছেন, বাণিজ্যিক জমি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ দিলে রাজস্ব আয় কমবে, তবে শহর পরিকল্পনা ও সামাজিক প্রয়োজনের দিক থেকে এমন সিদ্ধান্ত ইতিবাচক দৃষ্টান্ত হতে পারে। রাজউকের কর্মকর্তাদের মতে, বিষয়টি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের অনুমোদন পেলে এটি রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত এলাকায় শিক্ষা ও সামাজিক প্রয়োজনে বরাদ্দ দেয়া প্রথম বড় আকারের বাণিজ্যিক জমি হিসেবে একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির হয়ে উঠবে।
এ বিষয়ে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ ও খেলাধুলার পরিবেশ নিশ্চিত করতে একটি পূর্ণাঙ্গ মাঠ অত্যাবশ্যক। আমরা আশা করছি, সরকার ও রাজউক জনস্বার্থ বিবেচনায় এই উদ্যোগকে সমর্থন করবে।’
বিডিআর কাঁচাবাজারের দোকানদাররা রাজউকের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বলছেন রাজউকের এই বাণিজ্যিক প্লট বাজারের ব্যবসায়ীদের অনুকূলে বৈধভাবে বরাদ্দ দিয়ে অথবা বহুতল কাঁচা বাজার করে রাজস্ব আহরণ করতে পারে। প্রসঙ্গত, রাজউকের জমি বরাদ্দের নীতিমালা অনুসারে বাণিজ্যিক প্লট মাঠের মতো কোনো প্রতিষ্ঠানের অবাণিজ্যিক প্রয়োজনে বরাদ্দ দেয়া যায় না।



