বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের প্রস্তুতি এখন ৯ ও ১৪ সেপ্টেম্বর হংকংয়ের বিপক্ষে ম্যাচের জন্য। এশিয়ান কাপের বাছাই পর্ব থেকে চূড়ান্ত পর্বে উন্নীত হওয়ার রাস্তা প্রশস্ত করতে জামাল ভূঁইয়া-হামজা চৌধুরীদের হংকংয়ের সাথে এই দুই হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ম্যাচে জিততে হবে। এরপর নভেম্বরে ভারতের বিপক্ষে হোম ম্যাচ ও আগামী বছর সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচেও পূর্ণ পয়েন্ট পেতে হবে। এর পরও আরো হিসাব আছে। এই মিশনে বাংলাদেশ দলের গুরুত্বপূর্ণ পজিশন হলো গোলরক্ষক। এবারের এশিয়ান কাপে প্রথম দুই ম্যাচে লাল-সবুজদের পোস্ট আগলেছিলেন মিতুল মারমা। প্রথমে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে বাংলাদেশ ড্র করে দেশে ফিরে। এরপর ঘরের মাঠে সিঙ্গাপুরের কাছে ১-২ গোলে হার। সেই হারে দুই গোল হজমের জন্যই দায় ছিল মিতুল মারমার। তার ভুল ফিস্টের কারণেই সিঙ্গাপুর জোড়া গোল আদায় করে। ১০ জুনের ওই ম্যাচের আগে মিতুল মারমার ভাই মারা যায়। এই কারণে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। এরপর আবার জাতীয় দলের স্কোয়াডে ঢাকা আবাহনীর এই কিপার। তবে এখন তাকে পড়তে হচ্ছে অপর গোলরক্ষক মেহেদী হাসান শ্রাবণের চ্যালেঞ্জের মুখে।
জাতীয় দলের ক্যাম্পে এখন চার গোলরক্ষক। মিতুল মারমা, সুজন হোসেন, তার ছোট ভাই পাপ্পু হোসেন ও মেহেদী হাসান শ্রাবণ। ৬ সেপ্টেম্বর নেপালের বিপক্ষে ফিফা প্রীতিম্যাচে সিনিয়র জাতীয় দলে অভিষেক হয় সুজনের। ইনজুরির জন্য স্কোয়াডে থাকলেও সেই ম্যাচে খেলা হয়নি মিতুলের। সুজন অবশ্য সেই ম্যাচে দলকে ক্লিন শিট রেখেছেন। ফলে নেপালের সাথে সেই ম্যাচ গোলশূন্য ড্র হয়। দুই দলের ফিরতি ম্যাচ অবশ্য আর মাঠে গড়ায়নি। নেপালে সরকারবিরোধী আন্দোলনে বাতিল হয় ৯ সেপ্টেম্বরের সেই ম্যাচ।
সেই একই সময়ে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ দলের অবস্থান ছিল ভিয়েতনামে। সেখানে তারা এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ ফুটবলের বাছাই পর্বে খেলেছিল। বাংলাদেশ আসিয়ান অঞ্চলের এই দেশে গিয়ে কোয়ালিফাই করতে ব্যর্থ হলেও দারুণ সফল ছিলেন শ্রাবণ। তিন ম্যাচেই তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। পোস্টের নিচে তার আস্থার কারণেই ভিয়েতনামের কাছে দু’টির বেশি গোল হজম করতে হয়নি। ইয়েমেনের বিপক্ষে শেষ মিনিট পর্যন্ত বাংলাদেশ লড়াইয়ে ছিল। আর তা বসুন্ধরা কিংসের এই কিপারের দৃঢ়তায়। শেষ ম্যাচে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে বাংলাদেশ ম্যাচকে গোলশূন্য রেখেছিল এই শ্রাবণের কল্যাণেই। এরপর দ্বিতীয়ার্ধে আল আমিন, ফাহামিদুল, মহসিনরা মিলে চার গোল দিয়ে দলকে ৪-১ এ জয় এনে দেয়।
‘ইউরোপে গোলরক্ষক মানেই তার উচ্চতা ছয় ফুটের ওপর। অথচ বাংলাদেশে ভিন্ন চিত্র।’ এই মন্তব্য করেছিলেন বাংলাদেশ দলের সাবেক জার্মান গোলরক্ষক কোচ শোয়েজনিগার। তার সেই মন্তব্যের সাথে মিল শ্রাবণের উচ্চতা। এই দীর্ঘদেহের সুবিধা নিয়েই তিনি এবারের এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ ফুটবলে একের পর এক বাংলাদেশকে গোল হজম থেকে রক্ষা করেছেন। কখনো মাটিতে শরীর ফেলে। কখনো শূন্যে শরীর ভাসিয়ে। এএফসির আসরের পরই অনূর্ধ্ব-২৩ দলের সহকারী কোচ হাসান আল মামুন জানিয়েছিলেন, ‘আমরা খুবই খুশি পোস্টের নিচে শ্রাবণের পারফরম্যান্সে। আমি কোচ কারবেরাকে জানিয়ে দিয়েছি শ্রাবণ সিনিয়র জাতীয় দলের জন্য প্রস্তুত। বাকিটা হেড কোচের বিষয়।’ এখন অনুশীলনেও যদি শ্রাবণ ভালো করেন তাহলে একাদশে ফেরা কঠিনই হবে মিতুলের জন্য।
শ্রাবণের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সকে নিজের জন্য চ্যালেঞ্জিং মনে করেন কি না। এই প্রসঙ্গে রাঙ্গামাটি থেকে উঠে আসা মিতুলের বক্তব্য, জাতীয় দলে আমাদের প্রতিটি পজিশনই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। এখানে কারোই হেলা ফেলা করে খেলার সুযোগ নেই। যোগ্যতা প্রমান করেই একাদশে চান্স পেতে হবে।’
বসুন্ধরা কিংসের গোলরক্ষক শ্রাবণকে বলা হয় আগামীর আমিনুল হক। অর্থাৎ বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রীড়া সম্পাদক ও বিএনপি ঢাকা উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুলের সাথেই তুলনা তার। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক এবং গোলরক্ষক আমিনুলের পর পোস্টে নিচে কেউ-ই সেভাবে আস্থাশীল হতে পারেননি। শহীদুল আলম সোহেল, মাজহারুল ইসলাম হিমেল, রাসেল মাহমুদ লিটন, আশরাফুল ইসলাম রানা, আনিসুর রহমান জিকো, খুব বেশি দিন পোস্টের নিচে থাকতে পারেননি। আসা যাওয়ার মধ্যেই ছিলেন তারা। সে তুলনায় সোহেল একটু বেশি সুযোগ পেলেও কখনই আস্থাশীল ছিলেন না।
বসুন্ধরা কিংসের অনূর্ধ্ব-১৮ দলের ফুটবলার ছিলেন শ্রাবণ। ২০২৩ সালে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে লেবাননের বিপক্ষে সিনিয়র জাতীয় দলে অভিষেক ঘটান। মিতুল মারমার ইনজুরির কারণে বদলি হিসেবে নামেন। বসুন্ধরা কিংসের হয়ে এএফসি কাপেও খেলেছেন। শুরুর দিকে তিনি ছিলেন নড়বড়ে। ভুল পাস আর হাত ফসকে যাওয়া বলের কারনে গোল খাওয়াতেন। তবে এখন তিনি অনেক বেশি পরিণত। যার প্রমাণ দিয়েছেন ভিয়েতনামের মাঠে। এখন যদি কাবরেরার গুড বুকে চান্স পান তাহলে জাতীয় দলেও নিয়মিত হতে পারবেন শ্রাবণ।