মৌলভীবাজার-৪ আসনে ভোটের হাওয়া

কার হাতে উঠছে ধানের শীষ তৎপর জামায়াত ও এনসিপি

আসনটিতে বিএনপির ভেতর যেমন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, তেমনি মাঠে তৈরি হয়েছে ত্রিমুখী নির্বাচনী উত্তেজনা।

এম এ রকিব, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার)
Printed Edition
কার হাতে উঠছে ধানের শীষ  তৎপর জামায়াত ও এনসিপি
কার হাতে উঠছে ধানের শীষ তৎপর জামায়াত ও এনসিপি

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনয়ন ঘিরে শুরু হয়েছে আগাম নির্বাচনী উত্তাপ। ইতোমধ্যে মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠছেন দলের দুই হেভিওয়েট নেতা মহসিন মিয়া মধু ও মুজিবুর রহমান চৌধুরী। উভয়েই জেলার রাজনীতিতে সুপরিচিত মুখ। অতীতে তারা বিএনপির প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেছেন এবং বর্তমানেও জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এবং শিল্পপতি।

মহসিন মিয়া মধু পাঁচবারের নির্বাচিত পৌর মেয়র এবং ন্যাশনাল টি কোম্পানির পরিচালক। অন্য দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক হিসেবে বেশ পরিচিত এবং ২০০৮ ও ২০১৮ সালে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন। মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে দু’জনই শতভাগ আশাবাদী বলে তারা জানিয়েছেন।

এ দিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং নবগঠিত জাতীয়তাবাদী সমমনা দল এনসিপিও এ আসনে সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় রয়েছে। সব মিলিয়ে আসনটিতে বিএনপির ভেতর যেমন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, তেমনি মাঠে তৈরি হয়েছে ত্রিমুখী নির্বাচনী উত্তেজনা।

মাঠে সক্রিয় মহসিন, ঢাকায় থাকলেও এলাকায় সক্রিয় মুজিব : মহসিন মিয়া শ্রীমঙ্গলে অবস্থান করায় প্রতিদিনই এলাকায় সভা-সমাবেশ, মতবিনিময় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। অন্য দিকে ঢাকায় থাকলেও মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিয়মিত এলাকায় এসে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীদের একটি অংশ বলছেন, মহসিন মিয়া মধু মাঠের রাজনীতিতে কিছুটা এগিয়ে রয়েছেন। তবে মুজিবুর রহমান চৌধুরীর অতীত ভূমিকা ও দলের প্রতি আনুগত্যকেও খাটো করে দেখছেন না তারা।

ভোটার কাঠামো ও নির্বাচনী বাস্তবতা : মৌলভীবাজার-৪ আসনটি চা বাগান, পাহাড়, হাওর ও সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকা। দু’টি পৌরসভা ও ১৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই আসনে ভোটার প্রায় চার লাখ। ১৯৮৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত (১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ব্যতীত) প্রতিবারই জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। তবে আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হওয়ায় বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী দুই প্রার্থীর অবস্থান : মহসিন মিয়া মধু বলেন, ২০০১ সালে ধানের শীষের প্রার্থী ছিলাম। পাঁচবার পৌর মেয়র ছিলাম। মরহুম এম সাইফুর রহমানের আহ্বানে বিএনপিতে যোগ দিই। রাজনীতির কারণে বহুবার জেল খেটেছি। রাজনীতির অভিজ্ঞতা আমার ৫০ বছর। জনপ্রিয়তা, অভিজ্ঞতা ও অবদান দিয়ে শতভাগ আশাবাদী আমি মনোনয়ন পাবো।

তার অনুসারীরা জানান, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে মেয়র থাকাকালে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে বিনা লাভে বাজার চালু, কম্বল বিতরণ, ইফতার আয়োজন ও ত্রাণ বিতরণের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের আস্থাভাজন হয়ে উঠেছেন তিনি।

মুজিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, ২০০৮ ও ২০১৮ সালে দলের মনোনয়ন পেয়েছি। দলের প্রতি সবসময় অনুগত থেকেছি। কোনো বিতর্কে জড়াইনি। আমি আত্মবিশ্বাসী, এবারো মনোনয়ন পাবো আমি।

তার অনুসারীরা জানান, স্বর্ণ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত ‘স্বর্ণ মুজিব’ বা ‘হাজী মুজিব’ এলাকায় সামাজিক কাজের মাধ্যমে বেশ পরিচিতি পেয়েছেন। আওয়ামী লীগের রোষানলে পড়ে মুজিবুর রহমান বারবার হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন। তিনি ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে ২০০৬ সালে বিএনপিতে যোগ দেন।

দলের ভেতরে দুই নেতার অনুসারীরা এখন বিভক্ত হয়ে কাজ করছেন। কেউ কেউ নিরপেক্ষ থেকে দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের দিকেই তাকিয়ে আছেন। তারা বলছেন, যিনিই ধানের শীষের মনোনয়ন পাবেন তার পক্ষেই কাজ করবেন।

মাঠে জামায়াত ও এনসিপি : এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি হলেন সিলেট মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মো: আব্দুর রব। তিনি বাংলাদেশ ল ইয়ার্স কাউন্সিলের সিলেট জেলা সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে তিনি নীরবে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।

অন্য দিকে এনসিপির পক্ষ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে উঠে এসেছেন দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব প্রীতম দাশের নাম। তিনি রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন।

শেষ কথা : সবমিলিয়ে দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা ও ‘চায়ের রাজধানী’ খ্যাত শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ আসনে নির্বাচন নিয়ে ভালোই উত্তাপ ছড়ানো হচ্ছে। কার হাতে ধানের শীষের প্রতীক উঠবে সেই সিদ্ধান্ত এখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হাতে। প্রার্থী, সমর্থক ও ভোটারদের চোখ এখন তার ঘোষণার দিকে। আর সেই ঘোষণার ওপরই নির্ধারিত হবে এলাকার নির্বাচনী সমীকরণ।